
দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ঘোষিত হলো কক্সবাজার বিমানবন্দর। প্রস্তুত রানওয়ে, টার্মিনাল আর ইমিগ্রেশনসুবিধা। অপেক্ষা শুধু আকাশে ওড়ার।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেল সমুদ্রশহর : বহু প্রতীক্ষার পর আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মর্যাদা পেল কক্সবাজার বিমানবন্দর। ১২ অক্টোবর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে ‘কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের পর কক্সবাজার যুক্ত হলো দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তালিকায়। যদিও এখনো নির্ধারিত হয়নি প্রথম আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর তারিখ।
বদলে যাবে পর্যটনের চেহারা : পর্যটননগর কক্সবাজার শুধু বাংলাদেশের নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম আকর্ষণ। আন্তর্জাতিক সংযোগ চালু হলে এখানে বিদেশি পর্যটকের আগমন বহুগুণ বাড়বে আশা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও হোটেল-মোটেল মালিকদের।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ‘বিদেশি পর্যটক এলে কক্সবাজারের অর্থনীতি পুরোপুরি বদলে যাবে। ব্যবসাবাণিজ্যে আসবে গতি।’
প্রস্তুত টার্মিনাল, দীর্ঘতম রানওয়ে : বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল ভবনের কাজ প্রায় শেষের পথে। রানওয়ের দৈর্ঘ্য ১০ হাজার ৭০০ ফুট। এর মধ্যে ১ হাজার ৭০০ ফুট সাগরের বুক চিরে নির্মিত, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অনন্য প্রকৌশলকীর্তি। বিমানবন্দরের পরিচালক গোলাম মুর্তজা হোসেন বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনায় পুরোপুরি প্রস্তুত। নতুন টার্মিনালে আগমন এবং পুরোনো ভবন দিয়ে প্রস্থান কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
৬ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন : সরকার কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে গড়ে তুলতে তিনটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যার মোট ব্যয় প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প ২ হাজার ১৫ কোটি, রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্প ৩ হাজার ৭০৯ কোটি ও আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ভবন ২৭৭ কোটি টাকা। এর মাধ্যমে আধুনিক পার্কিং বে, কার্গে সুবিধা, স্যাটেলাইট কন্ট্রোল টাওয়ার ও আন্তর্জাতিক মানের যাত্রীসেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
সুযোগের পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জ : স্থানীয় ট্যুরিজম সংগঠনগুলোর মতে শুধু বিমানবন্দর নির্মাণই যথেষ্ট নয়, বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে নিরাপত্তা, মানসম্মত আবাসন, যোগাযোগ ও বিনোদনসুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। কক্সবাজার ট্যুরিস্ট ক্লাবের সভাপতি মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পর্যটক টানতে হলে কক্সবাজারে সার্বিক নিরাপত্তা ও সার্ভিস স্ট্যান্ডার্ড নিশ্চিত করা জরুরি।’
বৈশ্বিক গেটওয়ের পথে কক্সবাজার : সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্প সম্পূর্ণ হবে। তখন কক্সবাজার হয়ে উঠবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম এয়ার হাব।
এ স্বীকৃতি শুধু পর্যটনের নয়, বাংলাদেশের আঞ্চলিক উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগেও নতুন অধ্যায় সূচিত করবে।
কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বীকৃতি বাংলাদেশের পর্যটন খাতে নতুন সম্ভাবনার জানালা খুলে দিয়েছে। এখন কেবল অপেক্ষা, সাগরপারের এ শহর থেকে প্রথম আন্তর্জাতিক ফ্লাইট উড্ডয়ন করবে, আর তার সঙ্গে নতুন উচ্চতায় উড়বে বাংলাদেশের গৌরবের পতাকা।