
জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেনি জাতীয় নাগরিক পার্টি ( এনসিপি ) । রাজধানীতে গতকাল শুক্রবার সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ২৫ টি রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতারা উপস্থিত থাকলেও সেখানে ছিলেন না এনসিপির কেউ । অথচ এই দলের উদ্যোগেই মূলত জুলাই জাতীয় সনদের দাবি উঠেছিল । তাদের ছাড়াই সনদ স্বাক্ষরকে প্রতারণা হিসেবে দেখছে দলটি । এই অবস্থায় সনদে নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনে আবারও রাজপথে আন্দোলনে নামার কথা বলছেন দলটির নেতারা । এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন গতকাল সন্ধ্যায় আজকের পত্রিকাকে বলেন , ‘৩১ অক্টোবর পর্যন্ত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে । আমরা আশা করি , এই সময়ের মধ্যে সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে । সেটা
না হলে প্রয়োজনে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আবারও রাজপথে নামব । ' সনদ স্বাক্ষরের আগের দিন বৃহস্পতিবার সকালেই এনসিপির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম জানিয়ে দেন , সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়াও তিনটি দাবি পূরণ না হলে তাঁরা সনদে স্বাক্ষর করবেন না ।
এরপর সরকারের পক্ষ থেকে এনসিপির নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা হয় । মধ্যরাতে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে আলোচনা করেন একাধিক উপদেষ্টা । কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থেকেছে দলটি । তারপরও যখন সনদ স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া এগিয়েছে , এই পরিস্থিতিতে গতকাল সকালে সংসদ ভবন এলাকায় সনদ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকে পড়েন জুলাই যোদ্ধারা । আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষও হয় । এ ঘটনার সঙ্গে এনসিপির সনদ স্বাক্ষর না করাকে মেলাচ্ছেন রাজনীতিসংশ্লিষ্ট কেউ কেউ ।
তবে এনসিপি বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে । দলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন আজকের পত্রিকাকে বলেন , ‘ সংসদ ভবন এলাকায় জুলাই যোদ্ধাদের কর্মসূচির সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই । তবে আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাই । ” জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে তিনটি দাবি জানিয়েছিল এনসিপি — সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগেই প্রকাশ করা ; জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া ‘ জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায় ' অনুসারে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের মাধ্যমে জারি করা এবং জুলাই সনদের বৈধতার উৎস জুলাই গণ- অভ্যুত্থান হিসেবে অভিহিত করা ।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন , ‘ সনদে বাস্তবায়নের পদ্ধতি উল্লেখ না থাকায় আমরা যাইনি । আমরা যখন কমিশনকে বললাম যে আপনারা এটা সংশোধনী করেন , তখন তারা সংশোধনী করল না । বলল , এখন আর সংশোধনের সুযোগ নেই । অথচ আজকে দেখা গেল , যখন আহতরা ( জুলাই যোদ্ধারা ) গিয়ে দাবি তুলল , তখন কিন্তু তারা ওই ৫ নম্বর ধারায় ঠিকই সংশোধনী এনেছে । তার মানে এটা ( তিন দাবি মেনে নেওয়া ) চাইলেই তারা পারত । এটা করলে এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এবং আজকে এনসিপির ওখানে অনুপস্থিতি এগুলো
কিছুই ঘটত না । এই পরিস্থিতির জন্য আসলে সরকার এবং ঐকমত্য কমিশন দায়ী । ” জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করায় এনসিপির নির্বাচনে অংশ নেওয়া এবং দলটির ভবিষ্যৎ নিয়েও নানা কথা হচ্ছে । তবে দলটির নেতারা বলছেন , তাঁদের নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং দাবি আদায়ের লড়াই সমানতালে চলবে । ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জুলাই সনদ বিষয়ে এনসিপির দাবি পূরণ না হলে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে জানতে চাইলে দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন , “আমরা যে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছি , সনদে যতটুকু অর্জিত হয়েছে , সেটাকে টেকসইভাবে বাস্তবায়ন , গণভোটের বিষয়ে ফয়সালা , নোট অব ডিসেন্টের ( আপত্তি ) জায়গাগুলো পরিষ্কার করা— এই বিষয়গুলোতেই আমরা কমিশনের সঙ্গে আলাপ জারি রাখব । প্রয়োজনে আমাদের যে রাজনৈতিক কর্মসূচি রয়েছে , সেগুলো জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পালন করব । 'সরকারের নানামুখী প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এনসিপি অনুষ্ঠানে না যাওয়ায় সরকারের সঙ্গে দলটির দূরত্ব তৈরি হলো কি না, তা নিয়েও কথা হচ্ছে । এ বিষয়ে সারোয়ার তুষারের বক্তব্য , ‘ আমাদের দল নয় , বরং অন্যান্য দলের আরও বেশি প্রভাব সরকারের ওপর আছে । জুলাই সনদ নিয়ে আমাদের অবস্থান নতুন নয় । জুলাই পদযাত্রায় আমরা সারা দেশে বলেছি, সনদের আইনি ভিত্তি এবং সাংবিধানিক ভিত্তি নিশ্চিত করতে হবে ।
সেই আইনি ভিত্তি, সাংবিধানিক ভিত্তি নিশ্চিত করার জন্যই আমরা এখনো লড়াই করছি । 'এনসিপির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে অভিযোগ করেছেন , জাতীয় ঐক্যের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা হয়েছে । জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন , ঐকমত্যের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে একটি কাগজে সই হচ্ছে । কিছু রাজনৈতিক দল জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে এই কাগজে স্বাক্ষর করছে ।