Image description
সঠিক ব্যবস্থাপনার দাবি শ্রমিক ও এলাকাবাসীর

কেমিক্যাল গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১৬ প্রাণ ঝরে যাওয়া রূপনগরের শিয়ালবাড়িতে রয়েছে শতাধিক গার্মেন্ট ও ওয়াশ ফ্যাক্টরি। কোনো কোনো গার্মেন্টের অর্ধেকটা ওয়াশ ফ্যাক্টরি। প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই রয়েছে ওয়াশ ফ্যাক্টরির জন্য অপরিহার্য সোডিয়াম মেটা বাই সালফাইট (মেটা), কাস্টক সোডা (সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড), ডিটারজেন্ট, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইট বা ব্লিচ পাউডারসহ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন রাসায়নিক। অনেক গার্মেন্টের নিচতলা কেমিক্যাল গুদাম। ওপরের তলাগুলোয় কাজ করেন শ্রমিকরা। এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্কে রয়েছেন শ্রমিক ও আবাসিকের বাসিন্দারা। দ্রুত সময়ের মধ্যে নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থাপনার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে দ্রুতই অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

সরেজমিন দেখা যায়, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল শাহ আলম কেমিক্যাল গুদামের আশপাশেই রয়েছে বিভিন্ন কেমিক্যাল গুদাম ও ওয়াশ ফ্যাক্টরি। ২ ও ৩ নম্বর সড়কেই হাওলাদার ওয়াশ, জেকে ওয়াশ, যমুনা ওয়াশ, এনআরএস ওয়াশ, রেগুলার ওয়াশিং প্রিন্ট, শাহ আলী কেমিক্যাল, কোয়ালিটি ওয়াশসহ বিভিন্ন নামে-বেনামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থলের ১৫০ গজ দূরেই ২ নম্বর সড়কে জিএম ফ্যাশন নামে গার্মেন্টের নিচতলা ও দ্বিতীয় তলায় কেমিক্যাল গুদাম, তিন থেকে সাত তলা পর্যন্ত গার্মেন্ট। প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিকরা জানান, ‘কেমিক্যাল গুদামে আগুন লাগার পর ভয়ে আছি।’ শাহ আলী কেমিক্যালের শ্রমিক দাবি করে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আগুন লাগা কেমিক্যাল গুদামে শুধু লোড-আনলোড করা হতো। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোয় এগুলো দিয়ে কাজ করা হয়। জীবনের ঝুঁকি থাকলেও কিছুই করার থাকে না।’ হাওলাদার ওয়াশ ফ্যাক্টরির কোয়ালিটি সুপারভাইজার নীরব বলেন, ‘এখানকার সব ফ্যাক্টরি রাসায়নিকনির্ভর। অনেক ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষ করে ব্লিচ ও পারঅক্সাইড কিংবা মেটা ও পারঅক্সাইড শুকনো অবস্থায় মেশালে আগুন জ্বলে ওঠে। সঠিক ব্যবস্থাপনা খুবই জরুরি।’

ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিকে ওয়াশ ও পোশাকশ্রমিকদের কাজ একই জায়গায় হলেও অনেক ভবনের অবস্থাই নাজুক। বহুতল ভবন মুড়ে রাখা হয়েছে টিন দিয়ে। ৪ নম্বর রোডে অরগানিক ফ্যাশন হাউস তেমনই একটি প্রতিষ্ঠান। ছয় তলা ভবনের সামনের অংশ বাদে তিন পাশে টিন দিয়ে মোড়ানো। ভবন তালাবদ্ধ থাকায় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। এ প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা আতঙ্ক নিয়ে কাজ করার কথা জানান। এসিআই ফার্মার ডিপো ম্যানেজার খালেদ খান বলেন, ‘এ এলাকায় আমাদের ডিপোর অফিস রয়েছে। কাজ করেন ৫০ জন কর্মী। আমরা ভাবতেও পারিনি চারদিকে এমন কেমিক্যালে ঠাসা অবস্থা। ডিপো অফিস অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য কোম্পানির ঊর্ধ্বতনদের জানাব।’

আবাসিকের বাসিন্দা মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে এ রকম ঘটনা ঘটত না। একটাই দাবি-যেসব প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম পাওয়া যাবে তাদের শাস্তির আওতায় আনা এবং কেমিক্যাল সংরক্ষণের নীতিমালা অনুযায়ী সব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম নিশ্চিত করা।’ ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘শিয়ালবাড়িতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম রয়েছে। তালিকা করা হচ্ছে। তালিকা হয়ে গেলে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ম্যাজিস্ট্রেট এনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’