অন্তর্বর্তী সরকার কোনো ব্যক্তির কাছে দায়বদ্ধ নয় বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, জুলাইয়ের শহীদ ছাত্র-জনতা ও আহতদের কাছেই শুধু আমাদের জবাবদিহিতা। বিগত সরকার সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। আমরা বর্তমানে একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে চেষ্টা করছি। আমাদের সবাইকে শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বোট ক্লাবে অনুষ্ঠিত চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির (সিআইইউ) দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
সমাবর্তনে বিভিন্ন অনুষদের ২ হাজার ১৮৯ জন শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এদের মধ্যে ১ হাজার ৪৫২ জন ব্যবসা, প্রকৌশল, আইন এবং লিবারেল আর্টস অনুষদ থেকে পাস করা স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী। বাকি ৭৩৭ জন স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে ১৪ জন শিক্ষার্থীকে তাদের স্ব-স্ব প্রোগ্রামে অসামান্য কৃত্বিত্বে ফলস্বরূপ ‘টপ অ্যাচিভার্স’ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
উপদেষ্টা বলেন, বিগত সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত তিন নির্বাচনে মানুষ তাদের ভোটাধিকার হারিয়েছিল। জুলাই অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে কাজ করছে। আমাদের সরকার গঠন হয়েছে পাঁচমাসের কিছু সময় আগে। আমাদের সরকার শতভাগ জবাবদিহিতার মাধ্যমে কাজ করার চেষ্টা করছে। সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চায়। আমরা চেষ্টা করছি সব ধরনের বৈষম্য দূর করার জন্য।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, আপনারা গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছেন। মনে রাখতে হবে, সব শিক্ষা ক্লাস রুমের ভেতর থেকে পাওয়া যায় না। কিছু শিক্ষা পরিবেশ প্রকৃতি থেকে অর্জন করতে হয়। আমি মনে করি, আপনাদের প্রতিষ্ঠান পড়ালেখার পাশাপাশি সততা ও মূল্যবোধের শিক্ষা দিয়েছে। যা আপনারা কর্মজীবনে কাজে লাগাবেন। কর্মজীবনে আপনাদের নিজেদের প্রমাণ করতে হবে। অন্যের জন্য কাজ করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।
সমাবর্তন বক্তার বক্তব্যে শিল্পগ্রুপ ইয়ংওয়ান করপোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী (সিইও) কিহাক সুং শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের রয়েছে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ। কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য ও সহনশীলতার মাধ্যমে আপনারা নিজেদের যোগ্য লিডার হিসেবে গড়ে তুলবেন। এটা আপনার বিশ্ব। আপনারা এ বিশ্বকে শাসন করার যে সুযোগ রয়েছে তা কাজে লাগাবেন।
তিনি আরও বলেন, কোরিয়ায় আমি বাংলাদেশি হিসেবে পরিচিত। চট্টগ্রামবাসীর কারণেই আমাদের সক্ষমতা হয়েছে। আমি নিজেকে চট্টগ্রামের মানুষ ভেবে গর্ববোধ করি। কোরিয়া-বাংলাদেশের মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করছে এ অ্যাপারেলস সেক্টর।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ক্রমাগত সামাজিক বৈষম্য ও বাস্তুচ্যুতি আমাদের ব্যথিত করছে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে কর্মক্ষেত্রে তোমরা আলো ছড়াবে। দক্ষ লিডারশিপের মাধ্যমে দেশকে নেতৃত্ব দিবে। পুরো বিশ্ব তোমাদের সামনে। নেতৃত্ব দিতে হবে তোমাদের। জুলাই আদর্শকে ধারণ করে দেশের সেবায় এগিয়ে আসতে হবে।
সিআইইউর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীর মোহাম্মদ নুরুল আবসারের সভাপতিত্বে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নুরুন আখতার, সিআইইউর প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্ট এডুকেশন, সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড কালচারাল ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্ট (ইসটিসিডিটি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাকারিয়া খান, সিআইইউ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান লুৎফে এম আইয়ুব।