সেনাবাহিনীর বর্তমান অবস্থার জন্য উচ্চাভিলাষী জেনারেলরাই দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, ইসলামে রাষ্ট্রের বর্ডার পাহারায় নিয়োজিত বাহিনীকে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে আসীন করা হয়েছে। কিন্তু মঈন আহমেদের মতো হলে কী সেই সম্মান-মর্যাদা থাকবে? আমরা এমন দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী চাই যে সেনাবাহিনী দিল্লির কাছে মাথা নত না করে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দিল্লির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মতো সাহস ও শক্তি নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবে। তবেই দেশের জনগণ সেনাবাহিনীকে তাদের হৃদয়ের সর্বোচ্চ সম্মানের আসনে রাখবে।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে নেক্সাস ডিফেন্স অ্যান্ড জাস্টিস আয়োজিত ‘৩৬ জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী সশস্ত্র বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনায় আমার দেশ সম্পাদক এসব কথা বলেন।
মাহমুদুর রহমান বলেন, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কিংবা কিছু দাবি-দাওয়ার ভিত্তিতে নয়, ন্যাশনাল সিকিউরিটি ডকট্রিন তৈরির জন্য বৃহৎ একটি কমিশন গঠন করতে হবে। যে কমিশন বিগত ১৫ বছরের সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে একটি দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে একটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি ডকট্রিন তৈরির সুপারিশ করবে। সেই ডকট্রিনের ভিত্তিতে এমন সেনাবাহিনী গড়ে তোলা হবে যারা পবিত্র কোরআন হাতে নিয়ে দেশ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শপথ নেবে।
আমার দেশ সম্পাদক বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আমাদের সেনাবাহিনীকেও ধ্বংস করেছে। এক্ষেত্রে কিছু উচ্চাভিলাষী জেনারেলরাই দায়ী। সামরিক বাহিনীর জন্ম হয়েছে দেশের সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য। সেই সেনাবাহিনীর সংস্কার সবার আগে প্রয়োজন।
মাহমুদুর রহমান বলেন, বিগত সময়ে সেনাবাহিনীর মধ্যে যারা ফ্যাসিস্ট হাসিনার নির্দেশে হত্যা, গুম, নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এক্ষেত্রে তিনি জেনারেল মঈন ও জেনারেল মাসুদের বিচার হওয়া দরকার বলে মনে করেন।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মহসিন রশিদ বলেন, প্রয়োজনে নিজেদের উদ্যোগে একটি গণ কমিশন গঠন করতে হবে। যেখানে পাবলিক হেয়ারিং হবে। ভিকটিমদের বক্তব্য শুনে এবং বিভিন্ন মহলের মতামতের ভিত্তিতে একটি সংস্কার প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে।
চাকরিচ্যুত নৌবাহিনীর কমান্ডার ইলিয়াসের স্ত্রী ফারহানা মোস্তাক বিগত সময়ে তার স্বামীকে দুই দফা মার্শাল কোর্টের মুখোমুখি করে হঠাৎ চাকরিচ্যুত করার স্মৃতি তুলে বলেন, আমার স্বামীর মতো যারা এই পরিস্থিতির শিকার তাদের জীবন কতটা দুর্বিষহ তা ভাষায় ব্যক্ত করার মতো নয়।
সভায় বক্তারা জেনারেল মঈন থেকে বিগত ১৫ বছরে যেসব সেনা কর্মকর্তা গুম খুন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে সঙ্গে জড়িত তাদের কঠোর সমালোচনা করে অবিলম্বে সেনাবাহিনী সংস্কারে সিভিলিয়ানদের নিয়ে পৃথক কমিশন গঠনের দাবি করেন।
সংগঠনটির সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান নাসিরের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক কর্নেল মিয়া মশিউজ্জামান, কর্নেল নিয়াজ মোর্শেদ, ডিইউজের সভাপতি শহীদুল ইসলাম, এবি পার্টির সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, রেজাউল করিম রনি, মেজর ফুয়াদ খান, ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন, কর্নেল শাহানুর রহমান, সাবেক কূটনীতিক সাকিব আলী, নৌবাহিনীর চাকরিচ্যুত ক্যাপ্টেন বিল্লাল আহমেদ প্রমুখ।