ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসকে নির্মূল করার নামে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে দীর্ঘ ১৫ মাসা গাজ্জায় আগ্রাসন চালিয়ে ৪৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল। এ বর্বর আগ্রাসনের ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশটির অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়েছে। আগে যে পশ্চিমা দেশগুলো ইসরাইলকে সমর্থন করত, তারা এখন নিজেদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করছে এবং। ইসরায়েলি বাহিনীর কর্মকাণ্ডের কারণে বিশ্বজনমত পাল্টে গেছে।
পশ্চিমা সমর্থন হারানো
দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন পেয়েছিল ইসরাইল। কিন্তু গাজ্জা যুদ্ধের পর থেকে অনেক পশ্চিমা দেশ তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করেছে। গাজ্জার মানুষের ওপর চলা আক্রমণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে অনেক দেশই ইসরাইলের কঠোর সমালোচনা করছে। যুদ্ধের প্রথম দিকে কিছু দেশ ইসরায়েলের পাশে থাকলেও, ধীরে ধীরে তাদের অবস্থান থেকে সরে যায়।
ইহুদি কিশোরদের মত পরিবর্তন
একসময় যারা ইসরাইলকে সমর্থন করতেন, বর্তমানে তাদের মধ্যেও বিভক্তি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে আমেরিকার ইহুদি কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে একটি বড় পরিবর্তন এসেছে। এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি ইহুদি কিশোর এখন হামাসের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছে। ৪২ শতাংশ কিশোর মনে করে, ইসরেইল গাজ্জায় গণহত্যা চালাচ্ছে। পাশাপাশি, ৬৬ শতাংশ পুরো ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছে, যা ইসরাইলের জন্য বড় অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে।
ইসরাইল বর্জন আন্দোলন
বিশ্বজুড়ে ইসরাইলের যুদ্ধবিরোধী প্রতিবাদ বেড়েছে। প্রথমে এ প্রতিবাদগুলোকে ইহুদিবিদ্বেষ বলে দমন করা হয়। কিন্তু পরে তা এক বৈশ্বিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। ফিলিস্তিনের মুক্তির জন্য সমর্থন অর্জন করেছে এ আন্দোলন। ইসরাইল বর্জন আন্দোলন সারা বিশ্বে এখন আগের চেয়ে আরও শক্তিশালী হয়েছে। ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায়
বর্তমানে ইসরাইল আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা চলছে। গণহত্যার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে এখন আরও অনেক মামলার প্রস্তুতি চলছে। এ নতুন পরিস্থিতি ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আরও বিপদে ফেলেছে।
অভ্যন্তরীণ বিভক্তি
ইসরাইলের অভ্যন্তরেও এক বড় ধরনের বিভক্তি দেখা দিয়েছে। একদল ধর্মীয় ইহুদি সম্প্রদায় সামরিক সেবা করতে অস্বীকার করছে। অন্যদিকে সেক্যুলার ও ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী ইহুদিদের মধ্যে মতবিরোধ তীব্র হয়েছে। এর ফলে ইসরাইলে যে অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ছিল, তা বর্তমানে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
গাজ্জার এ যুদ্ধ ইসরাইলকে শুধু সামরিকভাবে নয়, আন্তর্জাতিক ও কূটনৈতিকভাবে তলানিতে নামিয়েছে। ইসরাইল এখন একটি কঠিন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে। একদিকে যুদ্ধক্ষেত্রে তো লক্ষ্য অর্জন করতে পারল না, অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী সমর্থন হারিয়ে সংকটে পড়ছে অবৈধ এই দেশটি।
বর্তমান পরিস্থিতি
যুদ্ধবিরতি চুক্তির ফলে গাজ্জার চলমান সংঘাতের অবসান হতে যাচ্ছে। ১৫ মাসের ভয়াবহ সংঘাতে প্রায় ৪৭ হাজার ফিলিস্তিনি শহীদ ও লক্ষাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এ চুক্তি আগামীকাল রোববার (১৯ জানুয়ারি) থেকে কার্যকর হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও কাতার চুক্তি বাস্তবায়নে সহায়তা করছে। গাজ্জার পুনর্গঠন প্রক্রিয়া মিসর, কাতার ও জাতিসংঘের সহযোগিতায় পরিচালিত হবে।
তথ্যসূত্র : আল জাজিরা