Image description

‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি আইন –২০২৫’ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা শুরুর প্রস্তুতির সময় ঢাকা কলেজে শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। এতে ‘শিক্ষকদের ধাক্কায়’ পড়ে গিয়ে এক শিক্ষার্থীর পা ভেঙে গেছে। পরে ওই শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। বর্তমানে তিনি প্লাস্টার করা পা নিয়ে সেখানে বিশ্রামে রয়েছেন। কলেজ প্রশাসনের ভাষ্য, কেউ যদি মব তৈরি করতে গিয়ে আহত হয়, তার দায়দায়িত্ব কেউ নেবে না।

সোমবার (১৩ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আহত শিক্ষার্থীর নাম মো. মুরাদ হোসেন। তিনি ঢাকা কলেজের ইংরেজি বিভাগের ২০২২–২৩ সেশনের শিক্ষার্থী। বর্তমানে মুরাদের পরীক্ষা চলছে। তিনি ভাঙা পা নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মুরাদ বলেন, “আজকে সাত কলেজের পূর্বঘোষিত লংমার্চ কর্মসূচি ছিল। কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা কলেজের শহীদ মিনারে জড়ো হচ্ছিলেন। বেলা ১০টা ২০ মিনিটের দিকে ইন্টারমিডিয়েটের ছেলেরা বের হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মিছিল শুরু করে। অন্যদিকে শহীদ মিনারে অনার্সের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন শিক্ষকও এসে জড়ো হন। আমরা তাদের জিজ্ঞেস করি, প্রতিদিন সাড়ে ১১টায় ইন্টারমিডিয়েটের শিক্ষার্থীদের ছুটি হয়—তাহলে ছুটির সময়ের আগে তারা কীভাবে ক্লাস থেকে বের হলো? শিক্ষকরা বলেন, ইন্টারমিডিয়েটের শিক্ষার্থীদেরও কর্মসূচি আছে, তারা তাদের কর্মসূচি করবে।”

“এর মধ্যে শিক্ষকদের সঙ্গে অনার্সের শিক্ষার্থীদের বিষয়টি নিয়ে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে আনোয়ার স্যারের নেতৃত্বে ৩০–৪০ জন শিক্ষকের একটি দল এবং ইন্টারমিডিয়েটের ৫–৬ শিক্ষার্থী সংঘবদ্ধভাবে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ফরহাদ রেজা নামে আমার এক সহপাঠীর উপর আক্রমণ করে। সবাই মিলে তাকে মারধর শুরু করে।”

মুরাদ বলেন, “এই মারধর থেকে আমি ও আরও কয়েকজন মিলে ফরহাদ রেজাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে যাই। এর মধ্যে শিক্ষকদের সঙ্গে ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্ররা এসে রেজাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন আমি দৌড়ে গিয়ে রেজাকে জড়িয়ে ধরি। তখন তারা আমাকেও মারধর শুরু করে।”

শিক্ষকদের ধাক্কায় পড়ে গিয়ে পা ভেঙে যাওয়ার দাবি করে মুরাদ আরও বলেন, “আমি রেজাকে জড়িয়ে ধরলে তারা আমাকে ধাক্কা দেয়। এরপর আমি পড়ে যাই। তাদের ধাক্কায় আমি কড়ই গাছের সামনে এমনভাবে পড়ে যাই যে, আমার পা ভেঙে যায়। পরে সহপাঠীরা আমাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়। সেখানে এক্স–রে করার পর দেখা যায়, আমার পায়ের হাড়ে ফাটল ধরেছে। এখন আমার পা প্লাস্টার করা হয়েছে। ডাক্তার বলেছেন, আমাকে ১৫ দিন বেড রেস্টে থাকতে হবে। এখন আমার পরীক্ষা
চলছে—আমি কীভাবে পরীক্ষা দেব, সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।”

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এদিন সকালে অনার্সের শিক্ষার্থীরা তাদের পূর্বঘোষিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটিতে রূপান্তর আন্দোলনে অংশ নিতে কলেজ প্রাঙ্গণে জড়ো হচ্ছিলেন। এ সময় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কথা–কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ঢাকা কলেজের ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফরহাদ রেজা শিক্ষকদের উদ্দেশে ‘দালাল’ শব্দ ব্যবহার করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

বিবাদের একপর্যায়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। পরে কয়েকজন শিক্ষক ফরহাদ রেজাকে ধরে শিক্ষক লাউঞ্জে নিয়ে আটকে রাখেন। খবর পেয়ে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করেন এবং পরে ওই শিক্ষার্থীকে সেখান থেকে ছাড়িয়ে আনেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক পারভীন সুলতানা হায়দার দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, “সেখানে কী হয়েছে, তখন আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। শুনেছি, ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে গিয়ে আমাদের ফারজানা ম্যাডামও আহত হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের কেউ যদি মব তৈরি করতে গিয়ে পড়ে আহত হয়, তাহলে তার দায়দায়িত্ব কে নেবে? একজন ছাত্র শিক্ষকদের সম্মানহানি করেছে। তাকে ধরে নিয়ে হয়তো কেন এমন আচরণ করেছে, সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতো। কিন্তু ওই ছাত্রকে আটকাতে গিয়ে সে মব তৈরি করবে কেন? অন্যরা তো যায়নি, আহতও হয়নি।”