Image description

আগামী নভেম্বরের শেষ দিকে স্কুলগুলোতে শুরু হবে বার্ষিক পরীক্ষা। এর মাত্র দেড় মাস আগে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এখন অনেকটাই মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষকরা। আজ রবিবার থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।
প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা। এমনকি তাঁরা কর্মবিরতিতে যাওয়ারও হুমকি দিয়েছেন।

সূত্র জানায়, দেশের ৩০ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় চার লাখ শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। তাঁরা সরকারি বেতন স্কেলে মূল বেতনের পাশাপাশি মাত্র এক হাজার টাকা বাড়িভাড়া ও ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান।
আর উৎসব ভাতা পান মূল বেতনের অর্ধেক। শতাংশ হিসাবে বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে তাঁরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছেন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর বাড়িভাড়া এক হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৫০০ টাকা করে আদেশ জারি করে অর্থ বিভাগ। তবে শিক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।

এ অবস্থায় গত ৮ অক্টোবর অর্থ উপদেষ্টা  ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরারের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার এবং শিক্ষাসচিব রেহেনা পারভীন উপস্থিত ছিলেন। সেখানে শতাংশ হিসাবে বাড়িভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে উভয় মন্ত্রণালয় নীতিগতভাবে সম্মত হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উচ্চ পর্যায়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া শতাংশ হারে বৃদ্ধি করতে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেই প্রস্তাবের সর্বোচ্চটুকু যেন শিক্ষক-কর্মচারীরা পান, শিক্ষা উপদেষ্টা সেই অনুরোধ করেছেন।
শিক্ষকদের বেতন অনেক কম, তাঁদের বাড়িভাড়াও কম। তাঁদের বাড়িভাড়া বৃদ্ধি করা দরকার বলে শিক্ষা উপদেষ্টা মতামত দিয়েছেন।’

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এটি বাতিল করা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া শতাংশ হারে বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন। এটি বাস্তবায়িত হলে আগের পরিপত্র এমনিতেই বাতিল হয়ে যাবে।’

এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা রবিবার থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করব। এর আগে আমরা ১০ অক্টোবর পর্যন্ত আলটিমেটাম দিয়েছিলাম। এর মধ্যে যেহেতু আমাদের দাবির ব্যাপারে কোনো সমাধান আসেনি, তাই আমরা আমাদের কর্মসূচি পালন করব। এমনকি আমরা কর্মবিরতিতে যাওয়ারও পরিকল্পনা করছি। প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’

দেলাওয়ার হোসেন আজিজী আরো বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয় যে ৫০০ টাকা বাড়িভাড়া ভাতা বাড়িয়েছে, তা শিক্ষকদের সঙ্গে উপহাস ছাড়া কিছু নয়। এতে শিক্ষকসমাজ ক্ষুব্ধ হয়েছে। আমরা সরকারের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের দাবি মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া এবং চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৫০০ টাকা করতে হবে। যতক্ষণ আমাদের দাবি পূরণ না হবে ততক্ষণ আমাদের আন্দোলন চলতে থাকবে।’

গত ৫ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া শতাংশ হারে বাড়ানো সংক্রান্ত ফাইল পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৫০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশে উন্নীত করা, শিক্ষক-কর্মচারীদের মেডিক্যাল ভাতা ৫০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা এবং বাড়িভাড়া এক হাজার টাকা থেকে দুই হাজার টাকায় উন্নীত করার অনুরোধ জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা একটি আধাসরকারি পত্র অর্থ বিভাগে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষকরা বাড়িভাড়া নির্দিষ্ট পরিমাণের পরিবর্তে মূল বেতনের শতাংশ হারে নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা অন্তত ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতা প্রদানের জন্য আবেদন করেছেন।

আর্থিক সংশ্লেষে বলা হয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের অধীন স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের মাসে এক হাজার টাকা হারে বাড়িভাড়া দিতে সরকারকে বছরে দিতে হয় ৪৬৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এখন ২০ শতাংশ হারে (ন্যূনতম তিন হাজার টাকা) বাড়িভাড়া দিতে হলে বছর শেষে ব্যয় দাঁড়াবে দুই হাজার ৩৫১ কোটি ৯৫ লাখ টাকায়।

একইভাবে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া দিতে হলে সরকারের বছরে ব্যয় হবে প্রায় এক হাজার ১২৩ কোটি টাকা। আর কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন প্রতিষ্ঠানের বাড়িভাড়ার বার্ষিক ব্যয় হবে প্রায় ১৪১ কোটি টাকা।

তবে একই পত্রে বাড়িভাড়ার আরো তিনটি বিকল্প হারের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। মূল বেতনের ১৫ শতাংশ, ১০ শতাংশ ও ৫ শতাংশ হারের বাড়িভাড়ার প্রাক্কলনও দেওয়া হয়েছে। সরকারের সামর্থ্যের আলোকে মূল বেতনের শতাংশ হিসেবে যথোপযুক্ত হারে বাড়িভাড়া প্রদানের আবেদন বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের প্রাক্কলন অনুযায়ী, বাড়িভাড়া ২০ শতাংশ বা ন্যূনতম তিন হাজার টাকা করা হলে সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (মাউশি, মাদরাসা বিভাগ ও কারিগরি বিভাগ অধীন) মিলে বছরে ব্যয় হবে তিন হাজার ৪০০ কোটি ২৪ লাখ টাকা, ১৫ শতাংশ বা ন্যূনতম দুই হাজার টাকা হারে দুই হাজার ৪৩৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা, ১০ শতাংশ বা ন্যূনতম দুই হাজার টাকা হারে এক হাজার ৭৬৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। চিকিৎসা ভাতা ও কর্মচারীদের উৎসব ভাতা বাড়ানোর কথা বলা হলেও টাকার অঙ্কে কত হতে পারে তা বলা হয়নি।