
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক গুম, খুন ও গণহত্যার তিনটি মামলায় এখন পর্যন্ত ২৫ জন সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা (ওয়ারেন্ট) জারি করা হয়েছে। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে লেফটেনেন্ট জেনারেল ও মেজর জেনারেল পদমর্যাদার ৯ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
এর মধ্যে দুই জন সার্ভিং মেজর জেনারেল রয়েছেন। যার মধ্যে একজন মেজর জেনারেল শেখ মো. সারওয়ার হোসেন সেনা হেফাজতে রয়েছেন। অপর জন শেখ হাসিনার সাবেক মিলিটারি সেক্রেটারি মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ পালিয়ে গেছেন। অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনেন্ট জেনারেল ও মেজর জেনারেলের বাকি সবাই পালিয়ে গেছেন।
পালিয়ে যাওয়াদের মধ্যে রয়েছেন শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ডিজিএফআইয়ের সাবেক ৫ মহাপরিচালক লে. জেনারেল (অব.) মো. আকবর হোসেন, লেফটেনেন্ট জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, লে. জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস, মেজর জেনারেল (অব.) সাইফুল আবেদীন এবং মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক। আরেকজন সাবেক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম এখনও পলাতক। তিনি ডিজিএফআই-এর সাবেক পরিচালক। এর মধ্যে লে. জেনারেল (অব.) আকবর ভারতে পালিয়ে আছেন বলে ইতোমধ্যে মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। পলাতক বাকি জেনারেলদের অবস্থান জানা যায়নি।
স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুনের ২ মামলায় গত ৮ অক্টোবর ওয়ারেন্ট ইস্যু হওয়া ৩০ আসামির মধ্যে এক মামলায় ১৭ জন এবং আরেক মামলায় ১৩ জন আসামি।
দুই মামলায় শেখ হাসিনা ও তারিক সিদ্দিক কমন আসামি হওয়ায় মোট আসামির সংখ্যা ২৮ জন। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ২৩ জন।
এছাড়া ট্রাইব্যুনালে একই দিনে জুলাই গণহত্যায় রামপুরায় ২৮ জনকে হত্যার দায়ে অভিযোগ দায়ের ও ওয়ারেন্ট ইস্যু হওয়া অপর মামলায় ৪ জন আসামি। এর মধ্যে দু’জন সেনা কর্মকর্তা। এরা হলেন, লে. কর্নেল রিদওয়ান ও লে. কর্নেল মুন। তারা দু'জন বিজিবির কর্মকর্তা এবং এ মামলার অপর দুই আসামী পুলিশের সদস্য।
শনিবার সেনাসদরের ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল (অ্যাডজুটেন্ট) মো. হাকিমুজ্জামান জানান, ওয়ারেন্টভুক্ত ২৫ সেনা কর্মকর্তার মধ্যে ৯ জন অবসরপ্রাপ্ত। ১৫ জন চাকরিরত এবং একজন এলপিআর-এ আছেন। অবসরপ্রাপ্তদের ব্যাপারে তাদের কিছু করার নেই। কর্মরত ও এলপিআর-এ থাকাদের মধ্যে মাত্র একজন সিটিআইবি ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ পালিয়ে গেছেন। বাকি ১৫ জন তাদের হেফাজতে আছেন।
যদিও এই ব্রিফিংয়ে ১৫ জনের নাম বলা হয়নি। তবে ট্রাইব্যুনালের ওয়ারেন্ট কপির সাথে বিশ্লেষণ করে যে তথ্য পাওয়া গেছে, সে অনুসারে বর্তমানে সেনা হেফাজতে থাকা কর্মরত সেনা কর্মকর্তারা হলেন, ১. সিটিআইবি ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ২. সিটিআইবি ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ৩. সিটিআইবি ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী, ৪. র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ৫. র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ৬. র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) কর্নেল কে এম আজাদ, ৭. র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ৮. র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ৯. র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, ১০. র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন, ১১. র্যাবের সাবেক পরিচালক (ইন্টেলিজেন্স উইং) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম, ১২. র্যাবের সাবেক পরিচালক (ইন্টেলিজেন্স উইং) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েল, ১৩. র্যাবের সাবেক পরিচালক (ইন্টেলিজেন্স উইং) লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, এবং বিজিবির দুই কর্মকর্তা ১৪. লে. কর্নেল রিদওয়ান ও ১৫. লে. কর্নেল মুন।