
ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ম. তামিম বলেছেন, দেশে এলপিজির চাহিদা ও ব্যবহার দিনদিন বাড়ছে। ২০৩০ সালে এ চাহিদা ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন টনে পৌঁছাবে। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশে এলপিজি : অর্থনীতি, পরিবেশ ও নিরাপত্তা’ শীর্ষক এক পলিসি কনক্লেভে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এমনটি বলেন। এর আয়োজন করেন দৈনিক বণিক বার্তা।
ম. তামিম বলেন, বর্তমানে জাতীয়ভাবে এলপিজির আমদানি দেড় মিলিয়ন টন। ২০৪১ সালের মধ্যে এলপিজির চাহিদা দাড়াবে ৫ মিলিয়ন টনে। আর ২০৫০ সালে এই চাহিদা দাড়াবে ১০ মিলিয়ন টনে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, এলপিজির মূল সমস্যা হচ্ছে এর দাম। কিন্তু এই দাম কমানো চ্যালেঞ্জিং। এজন্য ব্যবসায়ীদের দায়িত্ব নিতে হবে। একই সঙ্গে এলপিজি ব্যবহার করে কীভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় তা খতিয়ে দেখতে হবে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড এবং বিপিসি মিলে মাতারবাড়ীতে এলপিজি টার্মিনাল তৈরি করছে। এতে পাঁচ থেকে ছয় বছর সময় লাগবে। এলপিজির অপারেটরদের লাইন্সেস পেতে যাতে কোনো হয়রানি না হয় এজন্য চেষ্টা করা হবে। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, এক লাখ ম্যাট্রিক টন ক্ষমতার দুইটি এলপিজি টার্মিনাল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তবে এটি এই সরকার না নির্বাচিত সরকার বাস্তবায়ন করবে তা অনিশ্চিত।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান বলেন, ‘আমদানি করা এলপিজির জন্য আমাদের টার্মিনাল থাকলে সুবিধা হতো। এজন্য মাতারবাড়ীতে এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এতে এলপিজির দাম সাশ্রয়ী হবে।’
ফায়ার ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগে. জেনারেল মোহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, ‘চলতি বছর এখন পর্যন্ত দেশে ৫৮০টির মতো গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় প্রায় ২০ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকে শিক্ষামূলক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দিয়েছি।’
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, এলপিজি গ্যাসকে প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে তাদের সুরক্ষা দিতে হবে। সুলভ মূল্যে সরকার যে গ্যাস দিচ্ছে তা প্রান্তিক মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (লোয়াব) সভাপতি আমিরুল হক বলেন, ‘এলপিজি অপারেটরদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হয়। আমাদের হাত বাঁধার কারণে অনেক কিছুই করতে পারি না। সরকার নিজের ইচ্ছেমতো যখন তখন নীতি তৈরি করে।’
ইস্ট কোস্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরী বলেন, ‘দেশে এলপিজি ব্যবহারের অবকাঠামো নেই। উন্নত দেশে পাইপলাইনের মাধ্যমে এলপিজি সরবরাহ করা হয়। আমরা এখনো সিলিন্ডারের মাধ্যমে এলপিজি সরবরাহ করছি। অবকাঠামো তৈরি করা হলে এলপিজির চাহিদা আরও বাড়বে। এ ক্ষেত্রে গুরুত্ব অনুসারে ছোট ছাট শহরগুলোকে পাইপলাইন সরবরাহের আওতায় নিয়ে আসা যেতে পারে।’
এলপিজি অপারেটররা আরও বলেন, ‘বর্তমানে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে এলপিজি ব্যবসা টিকে আছে। অনেক অপারেটর লোকসান গুনেও এলপিজি বিক্রি করছেন। এ ক্ষেত্রে সরকার ও নিয়ন্ত্রক থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ও অংশীজন-সবার অংশগ্রহণ থাকতে হবে।’
ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলা রেজা ইফতেখার বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে ভর্তুকির পক্ষে না।’ তবে অন্য সব গ্যাস ভর্তুকি পেলেও এলপিজি খাত পাবে না কেন বলে তিনি প্রশ্ন রাখেন। তার মতে এখাতে ভর্তুকি দিলে সাধারণ ভোক্তাদের খরচ অনেকটাই কমে আসবে।