Image description
 

উনিশ শতকে বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসনের বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কার বদলে দিয়েছিল পৃথিবীকে। আলোর আবিষ্কারে বদলে যায় সভ্যতা। ধীরে ধীরে অন্ধকার জয় করে গড়ে ওঠে আলোকিত নগরী।

 
আলোর এই জয়যাত্রা একবিংশ শতাব্দিতে এসে দাঁড় করিয়েছে প্রশ্নের মুখে। যে আলো সভ্যতার বন্ধু, তার অতিরিক্ত ব্যবহার আজ ধরা দিয়েছে দূষণরূপে। নগরবাসীদের অনেকেই জানেন না আলোক দূষণ নামে একটি দূষণের অস্তিত্ব রয়েছে। চার রকমের আলোক দূষণ হয়। এগুলো হলো-গ্ল্যারি, লাইট ট্রেসপাস, স্কাই গ্লো, কালচার।
 
অন্ধকার যাদের আশ্রয়, সেই প্রাণীরা হারাচ্ছে তাদের স্বাভাবিক রাত। দিক হারাচ্ছে পরিযায়ী পাখি, বদলে যাচ্ছে কীটপতঙ্গের আচরণ, বিপন্ন হচ্ছে প্রাণীকূলের প্রজনন ও জীবনচক্র। খাদ্য সংকটে পড়ছে অন্ধকারে চলা নিশাচর প্রাণীরা।
 
উচ্চ আলোকমাত্রা শুধু জীববৈচিত্র্যের ওপরই প্রভাব ফেলছে না মানুষের শরীরেও সৃষ্টি করছে নানা জটিলতা। দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে মানসিক চাপ।
 
ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির স্পেস সায়েন্স অ্যান্ড এস্ট্রোফিজিক্স বিভাগের সেন্টার ফর এস্ট্রোনমির পরিচালক ড. খান মুহাম্মদ বিন আসাদ বলেন, ‘গ্রাম থেকে আমরা আকাশ দেখলে হাজারো তারা চোখে পড়বে। কিন্তু শহর থেকে আকাশ দেখলে ১০টার বেশি তারা দেখা যায় না। এস্ট্রোনমিতে মূলত সমস্যা সবচেয়ে বেশি। এস্ট্রোনমারদের আকাশে অনেক অন্ধকার অবজেক্ট দেখতে হয়। আলো যেখানেই জ্বালানো হোক সেটা চারদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে। সেই আলো আকাশ পর্যন্ত গিয়ে ধূলিকণা এবং মেঘ থেকে প্রতিফলিত হয় এবং রিফ্লেকশনও হয়। আর্টিফিসিয়াল লাইটের আলো যখন ছড়িয়ে পড়ে, তখন আর অনুজ্জ্বল জিনিস আর দেখা যায় না।’   
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফিরোজ জামান বলেন, রাতে যখন নীশাচর প্রাণীদের চোখে লাইট পড়ে, তখন দেখতে পায় না। ফলে খাদ্য খুঁজতে পারে না। খাদ্যশৃঙ্খলা এসব প্রাণী যেসব অবদান রাখে, সেই জায়গায় বড় প্রভাব ফেলে রাতের আলো।’    
 
চক্ষু বিশেষজ্ঞ এবং সার্জন ডা. মো আদনান ইসলাম, ‘চোখের একটা রোগ রয়েছে গ্লুকোমা। এসব রোগীদের চোখে আলো পড়লে প্রথম অবস্থায় বিভিন্নরকম কালার হ্যালোজ দেখে।’
 
ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল নিউরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. এম. এস. জহিরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘রাতে যদি আমরা খুব আলোতে থাকি, অবশ্যই মন ও ব্রেনের ওপর প্রভাব পড়ে। স্মরণশক্তি, মনোযোগ এগুলো হ্রাস পায়। সেলোটনিন, মেলোটনিন, ডোপামিন-এসব হরমোন নিঃসরণে বিঘ্ন ঘটবে।’
 
ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘আলোক দূষণরোধে এখনো কোন আইন না হওয়ায় কোন পদক্ষেপ নেয়া যাচ্ছে না। এ দূষণ নিয়ে সচেতনতা তৈরি করতে না পারলে নগরের পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’