Image description
 

‘আমাকে যেদিন বর্ডার ক্রস করা হচ্ছিলো, তখন তো আমি জানতাম না আমাকে বর্ডার ক্রস করানো হচ্ছে, আমি জানতাম, আমাকে ক্রসফায়ার করবে বা বনে-জঙ্গলে ফেলে দেবে।’

 

শনিবার সিলেটে ‘গুম হওয়ার’ সেই দিনের স্মৃতিচারণ করে এমনটিই বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ।

গুম করার পর সিলেটের তামাবিল সীমান্ত দিয়েই তাঁকে ভারতের শিলংয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো বলে ধারণা সালাউদ্দিনের।

 

শনিবার তামাবিল সীমান্তে গিয়ে তিনি বলেন, ‘যখন আমাকে এখান থেকে ক্রস করে নিয়ে গেলো, হয়তো এই রাস্তা দিয়েই হবে, আমার এমনটিই মনে হচ্ছে। হাত-পা ও চোখ বাঁধা অবস্থায় অবস্থায় তারা আমাকে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে স্থানীয় মানুষ ও পুলিশ এলে বুঝতে পারি আমি শিলংয়ে আছি।’

 

তিনি বলেন, ‘সেখানে যখন মেন্টাল হসপিটালে নিয়ে গেলো, তখন ভেবেছিলাম পাগলের মতোই বাকি জীবন কাটাতে হবে।’

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের গুম বিষয়ক তথ্যচিত্রের শুটিংয়ের জন্য শনিবার সিলেটে আসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।

শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার ফ্লাইটে সিলেট আসার পর তিনি তামাবিল সীমান্ত এলাকায় যান। তাঁকে যে পথ দিয়ে গুম করে ভারতে নেওয়া হয়েছিল, সেই স্থান পরিদর্শন করেন। এরপর গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।

২০১৫ সালের ১০ মে সন্ধ্যায় তাঁকে এই পথে ভারতের শিলং নেওয়া হয় বলে দাবি করেন সালাউদ্দিন।

২০১৫ সালের ১০ মার্চ গুম হওয়ার ৬৩ দিন পর সালাহউদ্দিন আহমদকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলং শহরে পাওয়া যায়। আইনি জটিলতা ও মামলা মোকাবিলার কারণে তিনি প্রায় নয় বছর সেখানে অবস্থান করেন। দেশে ফেরার পথ সুগম হয় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর। ১১ আগস্ট তিনি দেশে ফেরেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুমের ঘটনার তদন্ত করতে হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়েছে।

দেশে ফেরার ১০ মাস পর ৩ জুন সালাহউদ্দিন আহমেদ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে গুমের অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম-খুন নিয়ে ডকুমেন্টারি করা হচ্ছে। সেই ডকুমেন্টারির অংশের শুটিংয়ে অংশ নিতে তিনি তামাবিল সীমান্তে যান। এ তথ্য জানিয়ে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘দলীয় কোনো কর্মসূচিতে নয়, সালাহউদ্দিন আহমেদ আওয়ামী লীগ আমলে গুম হওয়ার ঘটনায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও গুম কমিশনের উদ্যোগে করা তথ্যচিত্রের শুটিংয়ে অংশ নিতে এসেছেন। এ সময় তিনি ২০১৫ সালে তার গুম হওয়ার ঘটনার স্মৃতিচারণা করেন।’

তিনি বলেন, ‘সালাহউদ্দিন আহমেদকে চোখ বেঁধে কাদামাটি দিয়ে হাঁটিয়ে নেওয়া হয়েছিল। একপর্যায়ে তাঁকে সিঁড়ি বেয়ে কোনো উঁচু জায়গায় উঠিয়ে বাড়িতে রাখা হয়েছিল। সেখানে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা ইংরেজিতে ও হিন্দি ভাষায় কথা বলেছিলেন। সেই বিষয়গুলো তিনি বলেছেন।’

সকালে বিমানবন্দরে সালাহউদ্দিন আহমদকে স্বাগত জানান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল কাহের শামীম, বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমেদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা এম এ মালিক ও কামরুল হাসান চৌধুরী শাহীন।

সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আওয়ামী সরকারের আমলে সিলেটের তামাবিল সীমান্তে গুম হওয়ার বিষয়ে একটি ডকুমেন্টারির শুটিংয়ে তিনি সিলেটে এসেছেন। এ কাজ শেষ হলে তিনি আবার ঢাকায় ফিরে যাবেন।’

বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন শিলং থাকাকালে সিলেট নগরীর ও তামাবিল এলাকার স্থানীয় দুই নেতার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল। তামাবিলে গুম কাহিনির সচিত্রকরণের শুটিংকালে ওই দুই নেতা উপস্থিত ছিলেন। তাদের একজন বলেন, ‘শুটিং হলেও সালাহউদ্দিন প্রতিটি স্থানে গিয়ে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছিলেন। দৃশ্যত তিনি আগের অবস্থানে ফিরে যেতে দেখেছেন। এতে করে চিত্রায়নে সেই অবিকল অবস্থা ধারণ সম্ভব হয়েছে।’

শুটিং চলাকালে বিএনপির জাতীয় নিবাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) মিফতাহ সিদ্দিকীসহ বিএনপির স্থানীয় বিএনপির নেতারাও তামাবিল এলাকায় ছিলেন। এর আগে সকালে তিনি সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান।