
মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়ার দাবিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা আগামীকাল রবিবার থেকে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে যাচ্ছেন। তারা বলছেন, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পরিপত্র জারি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন; আসবে কর্মবিরতির মতো ঘোষণাও। শিক্ষকদের কর্মসূচি যাবেন জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহও। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে আগামীকাল কী হতে যাচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে তারা ইতিবাচক। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন তারা। অফিসের বাইরেও দুই মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বৈঠক করছেন। এ অবস্থায় ঢাকায় শিক্ষকদের আন্দোলনে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছেন তারা।
শিক্ষক-কর্মচারীরা বলছেন, শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ৫০০ টাকা বৃদ্ধি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন পরিপত্র তারা ক্ষুব্ধ। এর প্রতিফলিত হবে আগামীকাল রবিবার। সারাদেশ থেকে লক্ষাধিক কর্মচারী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করবেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি সর্বাত্মক কর্মবিরতি কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। ফলে আগামীকাল (রবিবার) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠদান স্বাভাবিক হবে নাকি স্থবির থাকবে—এ নিয়ে দোটানায় আছেন শিক্ষার্থীরা। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি কিছুটা উদ্বেগের বলে মনে করছেন তারা।
জানতে চাইলে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজীজি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘১৩ আগস্ট শিক্ষা উপদেষ্টা আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন। তবে দীর্ঘদিন অপেক্ষার পরও এ বিষয়ে পরিপত্র জারি করা হয়নি। উল্টো ৫০০ টাকা বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি করে আমাদের সঙ্গে প্রহসন করা হয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারীরা এমন সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন। শিক্ষকদের দাবি শিক্ষরাই আদায় করে নেবেন।’
কর্মবিরতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘রবিবার থেকে প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। সরকার দাবি মেনে নিতে গড়িমসি করলে লাগাতার অবস্থানের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেওয়া হবে।’
এদিকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের চিঠির প্রেক্ষিতে শিক্ষকদের শতাংশ হারে বাড়ি বৃদ্ধি নিয়ে কাজ শুরু করেছে অর্থ বিভাগ। তবে কবে নাগাদ নতুন পরিপত্র জারি হবে সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে পারেননি অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা।
শিক্ষক-কর্মচারীদের শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে অর্থ বিভাগের এক উপসচিবের সঙ্গে কথা বলেছে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা শনিবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে বলেন, ‘শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির পুনর্বিবেচনার চিঠি আমরা পেয়েছি। কত শতাংশ বৃদ্ধি করা যাবে, সেটি আগে যাচাই করে দেখতে হবে। কেননা এখানে অর্থের যোগান কীভাবে হবে সেটিও দেখতে হবে।
কবে নাগাদ শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির নতুন পরিপত্র জারি হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এটি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। আমরা জুনিয়র লেভেলের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারি না। অর্থ সচিব এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার অনুমোদন সাপেক্ষে পরিপত্র জারি করা হবে। এটি জারি করতে কিছুটা সময় লাগবে।’
জানা গেছে, এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের গত ১৩ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবের শিক্ষক সমাবেশে লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারী উপস্থিত ছিল। ওইদিন শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষক নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেসিকের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া, ১৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা ও উৎসব ভাতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
কিন্তু দীর্ঘ দুই মাস অতিবাহিত হলেও প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ। এমতবস্থায় এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেসিকের ২০% বাড়ি ভাড়া, ১৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা ও শতভাগ উৎসব ভাতার প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে আগামীকাল রবিবার থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শান্তিপূর্ণ লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।