Image description
 

১৯৮৯ সাল। স্বৈরাচারী এরশাদের জমানার শেষ সময়। এই বছরের ১৫ই আগস্ট অস্ত্রের ঝনঝনাতিতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্রশিবিরের সাথে ছাত্রদল এবং অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের রক্তাক্ত সংঘর্ষে ছাত্রদলের যুগ্ম-সম্পাদক কবীর নিহত হন, অর্ধশত আহত। এই খবরে সারা দেশে তোলপাড় ওঠে। সিন্ডিকেট বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে, ছাত্রশিবিরের ২২ জনকে বহিস্কার করে। ইসলমী ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়

 

১৯৮৯ সাল। স্বৈরাচারী এরশাদের জমানার শেষ সময়। এই বছরের ১৫ই আগস্ট অস্ত্রের ঝনঝনাতিতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্রশিবিরের সাথে ছাত্রদল এবং অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের রক্তাক্ত সংঘর্ষে ছাত্রদলের যুগ্ম-সম্পাদক কবীর নিহত হন, অর্ধশত আহত। এই খবরে সারা দেশে তোলপাড় ওঠে। সিন্ডিকেট বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে, ছাত্রশিবিরের ২২ জনকে বহিস্কার করে। ইসলমী ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

ঘটনার বিবরণ থেকে জানা যায়, সংঘর্ষে প্রায় ৪০ জন ছাত্র হতাহত হন। এদের মধ্যে ছাত্রদল নেতা কবিরকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। পরে কবির চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন ২৬ আগস্ট। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সবক’টি ছাত্র সংগঠন ঐক্যবদ্ধ হয়ে শিবিরের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। হত্যার প্রতিবাদে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নিন্দা করে কঠোর বিবৃতি দেন। শহীদ কবিরের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে “কবীর চত্তর” নির্মাণ করা হয়।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ৯০ পরবর্তীতে জামায়াত বিএনপির সাথে আপোষ করলে ওই হত্যা মামলায় অভিযুক্তরা খালাস পান। ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকায় জনপ্রশাসনের অতিরিক্ত সচিব এপিডি এরফানুল হকও অন্যান্য ২১ জন শিবির কর্মীর সাথে বহিস্কৃত হয়েছিলেন। পরে পাসকোর্সে গ্রাজুয়েশন করে তিনি বিসিএস পরীক্ষা দেন। প্রশাসন ক্যাডারের ১৮তম ব্যাচে নিয়োগ পান।

মো. এরফানুল হককে গত ৯ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এপিডি পদ থেকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে বদলি করা হয়। এই বদলীর পর পরই জামায়াতের পক্ষে থেকে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব এপিডি পদে পদায়ন পাওয়া কর্মকর্তা ফিরোজ সরকারের যোগদান ঠেকাতে কিছু স্থানীয় পত্রিকায় মিথ্যা-বানোয়াট প্রোপাগান্ডা ছড়ানো শুরু হয়েছে। জনপ্রশাসনে অতিরিক্ত সচিব এপিডি হিসেবে ফিরোজ সরকারের পদায়ন হওয়ার পর থেকে জামায়াতপন্থি আমলারা সচিবালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে তাদের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকে করছেন বলে গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত করেছে।

আজ শনিবার জামায়াতের প্রভাবশালী আইনজীবী শিশির মনির সাক্ষাৎ করেছেন বিদায়ী এপিডি এরফানের সাথে। তিনি তাকে বলেছেন, চার্জ না দিতে। তারা ঠেকিয়ে দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবেন। তার মানে, জনপ্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদায়ন নিয়ে জামায়াতে ইসলামী অল-আউটে নেমে পড়েছে। ক্যাবিনেট সচিবও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত। ক্যাবিনেট সচিব শেখ রশিদ কেবল জামায়াতের রোকনই নন, দলটির অতিরিক্ত মহাসচিবের ভূমিকায় নেমেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রভাবশালী ৮২ ব্যাচের মোখলেস-কাণ্ডের সঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এপিডি মো. এরফানুল হক জড়িত থাকার কারণে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের পর গত ৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাতে তাকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে বদলি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। এপিডি এরফানকে সরানোর পরে এই বদলি আটকানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে জামায়াত। কেননা এই এরফান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্র শিবিরের ক্যাডার ছিলেন।

আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রশাসনে নিরপক্ষতা ফিরে আনতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোখলেস উর রহমানকে অপসারণের পরে নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব পদে ১৭ বিসিএসের কর্মকর্তা খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকারকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি একজন সৎ, দক্ষ এবং মেধাবী কর্মকর্তা হিসাবে পরিচিত। একই সঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. এরফানুল হককে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে বদলি করা হয়েছে।

এর আগে নানা অনিয়ম, অদক্ষতার কারণে গত ২১ সেপ্টেম্বর চুক্তিতে থাকা সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমানকে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য পদে বদলি করা হয়। নতুন পদায়ন নিয়ে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে মতৈক্য না হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ এ মন্ত্রণালয়ে এখনও সচিব পদায়ন করা সম্ভব হয়নি। ফলে সচিবালয় থেকে শুরু করে মাঠ প্রশাসনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মূলতঃ নতুন সচিব নিয়ে সরকারের ভেতরে যেমন টানাপোড়েন চলছে, তেমনি নির্বাচনে অংশগ্রহণেচ্ছুক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্য চলছে প্রতিযোগিতা।

জনপ্রশাসন সচিব পদে নতুন নিয়োগ নিয়ে সরকারের ভেতরে দ্বিধা ও টানাপোড়েন চলছে তিন সপ্তাহ। এ বিষয়ে বিএনপিপন্থি সরকারি কর্মকর্তারা নিক্রিয় রয়েছেন। এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে জামায়াতপন্থি কর্মকর্তারা নিজেদের পছন্দের সচিব বসাতে তৎপর হয়ে উঠেছেন। এমনকি তাদের দলের সর্বোচ্চ নেতারা তাদের পছন্দের কর্মকর্তাকে বসাতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। তাদের প্রবল চাপের কারণে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ সরকার সিদ্ধান্ত নিতে অনেকটাই সময়ক্ষেপণের কৌশল নিয়েছে বলে জানা গেছে।

গত ১৪ মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সচিব, অধিদপ্তবের মহাপরিচালক পদসহ মাঠ প্রশাসনের ডিসি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদ বাগিয়ে নিয়েছে জামায়াতপন্থিরা। অন্যদিকে বিএনপি’র বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মাঠে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে তারা। বিএনপি মাঠ সামালাতে ব্যস্ত থাকায় সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রশাসন, ব্যাংকসহ বিভিন্ন অফিস দখলও নিয়েছে জামায়াত। আবার চট্টগ্রাম এলাকার এক প্রভাবশালী উপদেষ্টা জামায়াতের পছন্দের কর্মকর্তাদের পদায়নের জন্য মাঠে নেমেছেন জোরেসোরে। তবে শেষ পর্যন্ত কে হচ্ছেন জনপ্রশাসন সচিব সেটিই এখন প্রশাসনের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

শীর্ষনিউজ