Image description
বিএনপির এককভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার কনফিডেন্সে ভালোই নাড়া লাগছে৷ ফলে বিএনপি এখন সবাইকে পাশে চায়৷ এক্ষেত্রে তার সবচেয়ে বড় মিত্র হতে পারে এনসিপি। স্ট্র্যাটেজিক্যালি বিএনপির জন্য এনসিপি মিত্র হিসেবে ভালো। কারণ বিএনপি যদি এনসিপিকে ৫০ টা আসনও ছাড় দিয়ে দেয়, সেক্ষেত্রে এনসিপিকে ৩০ টা আসনই বিএনপির থেকেই আউটসোর্সিং করতে হবে৷ কারণ ৫০ টা আসনে ইলেকশন করার মতো তার ক্যান্ডিডেট নাই৷ বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিতদের তখন সে বলতে পারবে, শাপলা বা কলম মার্কায় ভোট করতে৷ অর্থাৎ, বিএনপির টিকেট বিএনপির কাছেই বেচবে সে। এতে বিএনপি কাগজে-কলমে ৫০ টা আসন এনসিপিকে ছাড় দিলেও আসলে তার ছাড় দেওয়া লাগতেছে ২০ আসন। বাকি ৩০ টা আসনও তারই। যেমন কইরা '১৮ সালে ধানের শীষ নিয়া এমপি হইয়া হাসিনারে কদমবুসি কইরা নিজেরে নৌকার সুলতান মনসুর ঘোষণা দিছিলেন, এমন ঘটনাই ঘটবে আসলে এনসিপির বিএনপির কাছ থেকে আউটসোর্সিং করা আসনগুলোতে৷ ফলে বিএনপির এতে লস নাই মোটেও৷
তবে এনসিপিকে এইজন্য সরাসরি ইলেকটোরাল জোট করতে হবে বিএনপির সাথে৷ কোন 'আসন সমঝোতা'য় কাজ হবে না৷ কারণ সেক্ষেত্রে তারেক রহমান যদি ৫০ টা আসনে ধানের শীষ না দেন, মানে বিএনপি ২৫০ আসনে ইলেকশন করলো এমন যদি হয়; তাতে বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে পারবে না বিএনপি৷ কারণ কোন কার্যত জোট তো নাই এনসিপি-র সাথে৷ আর মাঠের ভোটের রাজনীতির যেই বাস্তবতা তাতে যে কোন আসনে যদি ধানের শীষ প্রতীক না থাকে আর সেখানে যদি বিএনপির ৫ জন বিদ্রোহী ক্যান্ডিডেট থাকেন, তাহলে ভোটের ফলাফলে দেখা যাবে এনসিপি অষ্টম হবে৷ বিএনপির ৫ জন ক্যান্ডিডেট, জামায়াত আর চরমোনাইয়ের পরে হবে তাদের অবস্থান৷
ফলে এনসিপিকে পার্লামেন্টে যাইতে হলে বিএনপির সাথে সরাসরি ইলেকটোরাল জোটে যাইতে হবে তাকে, কোন আসন সমঝোতায় এই অংক কাজ করবে না৷
পাশাপাশি এনসিপিকে ২০, ৩০ বা ৫০ আসন ছেড়ে দিলে বিএনপির যেইটা রিস্ক ফ্যাক্টর থাকবে, তার নাম জামায়াত৷ এই জামায়াতই বিএনপির ভোটের কনফিডেন্স ভেঙে দিছে অনেকটা, জামায়াতের কারণেই বৃহত্তর জোট গঠনে মরিয়া বিএনপি৷ কিন্তু এতে রিস্ক ফ্যাক্টর হইলো, এনসিপিকে ছেড়ে দেওয়া আসনগুলোতে যদি ধানের শীষ না থাকে, তাহলে শাপলা কিংবা কলম মার্কা কতটা ভোট টানতে পারবে আসলে? বরং এই ২০, ৩০ বা ৫০ আসনে দাঁড়িপাল্লাকে আসলে ভোটের রাজনীতিতে ওয়াকওভারই দেওয়া হয়ে যাবে কিনা, এই অংক সিরিয়াসলি ভাবাবে বিএনপিকে৷ ফলে মিত্রদেরকে বিএনপি চাইলেই খুব বেশি আসন ছাড়তে পারবে না৷ কারণ মার্কা হিসেবে মার্কেটে এখন ব্র্যান্ড ভ্যালু আছে শুধু ধানের শীষ আর দাঁড়িপাল্লার। আপনি এডিডাস বা নাইকির সাথে আলম সুজ'কে পাশাপাশি রাখলে ঐটা কেউ ছুঁইয়াও দেখবে না৷ ফলে যেই জামায়াতের ভয়েই এই বৃহত্তর জোট গঠনের তাড়না, সেই জোটই বিএনপির জন্য কাল হইয়া দাঁড়াইতে পারে স্রেফ দাঁড়িপাল্লার ব্র্যান্ড ইমেইজের বিপরীতে হারিকেন, সাইকেল, কেতলী বা কলম মার্কা থাকার কারণে৷ জামায়াত বরং এই ধরনের ওয়াকওভার পাইলে খুশিই হবে ভোটের হিসাব নিকাশে৷
ভোটের রাজনীতিতে এনসিপি-র জন্য বেস্ট শট হইলো জামায়াত। জামায়াতের লগে জোট করলেই কেবল তার আছে কোন বিদ্রোহী প্রার্থী ছাড়াই নিশ্চিত লোকবল, ভোট আর অর্থের জোগানের গ্যারান্টি। এনসিপিও যে কোন মূল্যে এই নির্বাচনে পার্লামেন্টে যাইতে ডেসপারেট। কারণ যেই পরিমাণ দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও অনৈতিক সুবিধা হাসিল করেছে এর নেতাকর্মীরা এই অল্প সময়ে, ক্ষমতার সাথে না থাকতে পারলে তাদের অধিকাংশকে হয়তো জেলে থাকতে হবে, বিদেশে সেইফ এক্সিট নিতে হবে নতুবা গোপনে মুচলেকা দিয়ে রাজনীতি ছাড়তে হবে৷ ফলে পার্লামেন্টে যাওয়া ছাড়া এনসিপি-র শীর্ষ নেতাদের সামনে বিকল্প কোন অপশনই আর হাজির নাই; এইটা যে কোন শর্ত হইলেও।
ফলে জামায়াত বেস্ট শট তার জন্য এই অর্থে যে, জামায়াতের লগে গেলেই তাদের পার্লামেন্টে যাওয়ার পসিবিলিটি বেশি থাকবে। প্রথমত, বিদ্রোহী প্রার্থী নাই আর দ্বিতীয়ত সমস্ত কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দেওয়া, নির্বাচনী খরচ এবং ফলাফল ছিনতাই করে নেওয়া ঠেকাইতে পারবে জামায়াত তার পুরো ম্যানপাওয়ারকে এনসিপি-র জন্য ওয়াকফ করে দিয়ে৷ কিন্তু জামায়াতের সাথে জোটে যাওয়ার ক্ষেত্রে এনসিপি-র সামনে বাধা একটাই- ভোটের ডামাডোল শুরু হলে তাদের নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি, দুর্নীতি আর অবৈধ সুযোগ-সুবিধাদি হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য যে জনসম্মুখে আসবে না, এর গ্যারান্টি দেওয়া। কারণ এনসিপি জামায়াতের জোট করলেই বিএনপির সমস্ত সফট পাওয়ার এক্টিভ হয়ে যাবে এনসিপি-র এই সমস্ত অপকর্মকে জনসম্মুখে হাজির করার জন্য৷
এনসিপি- জামায়াত জোট হতে পারে এখন শুধুমাত্র এই শর্তে- এনসিপি-র নেতাকর্মীদের অপকর্মের তথ্য জনসম্মুখে আসা থেকে বিরত রাখতে পারবে জামায়াত৷ তা না হইলে এনসিপি ও জামায়াত এই মুহুর্তের রাজনৈতিক বাস্তবতায় ন্যাচারাল অ্যালাই হইলেও বিএনপিই হইতে যাইতেছে এনসিপি-র নেসেসারি অ্যালাই৷ এখন বিএনপি এনসিপিকে কতটুক গিলবে, আর কতটুক উগড়ে দিবে, এইটা সময়ই বলে দিবে৷
 
মোহাম্মদ হিযবুল্লাহ