
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। নির্বাচনের আগেই অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের ‘সেইফ এক্সিট’ নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার-বিতর্ক। সরগরম হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি দিচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক থেকে আপামর জনগণ সবাই। এখন প্রশ্ন উঠছে দেশে ক্রান্তিলগ্নে নতুন বন্দোবস্তের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যারা রাষ্ট্র সংস্কারের দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছেন তাদের এখন কেনো ‘সেইফ এক্সিট’ খুঁজতে হবে?
ইংরেজি সেইফ-এক্সিটের বাংলা অর্থ হচ্ছে ‘নিরাপদ প্রস্থান’। নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত নতুন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়াই ‘সেইফ এক্সিট’। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা বীরের বেশে চলে যাবেন। সেটাই রেওয়াজ। কিন্তু হঠাৎ করে উপদেষ্টাদের সেইফ এক্সিট নিয়ে বির্তক শুরু হলো কেন? উপদেষ্টারা কি ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার পর আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের মতো পরিণতির ভয় পাচ্ছেন? ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করতে আসা উপদেষ্টাদের মধ্যে এমন অবস্থা হলো কেন?
বর্তমান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ‘কিছু উপদেষ্টা রয়েছেন তাদের জন্য মৃত্যু ছাড়া কোনো সেফ এক্সিট নেই’। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ‘বিস্ফোরক’ মন্তব্য করে বলেছেন, ‘কিছু উপদেষ্টা সেফ এক্সিট খুঁজছেন। উপদেষ্টাদের অনেকেই নিজেদের আখের গুছিয়েছেন এবং গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে বিট্রে (প্রতারণা) করেছেন। যখন সময় আসবে, তখন আমরা এদের নাম প্রকাশ করব। সেইফ এক্সিটের জন্য উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে ফেলেছে’। প্রশ্ন হচ্ছে সত্যিই কি উপদেষ্টারা আসন্ন নির্বাচনের পর নিরাপদে প্রস্থান করতে পারবেন কি না, সে ভয় পাচ্ছেন? উপদেষ্টাদের এই ভয়ের কারণ কী?
অপ্রিয় হলেও সত্য ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট হাসিনা পালানোর পর ৮ আগস্ট আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে কিছু মানুষ উপদেষ্টা হয়ে দেশের হাল ধরেছেন। যারা সংকটময় মুহূর্তে দেশের হাল ধরেছেন তাদের মধ্যে আতঙ্ক থাকবে কেন? নাকি তারা ক্ষমতায় বসে অনিয়ম-অন্যায়, লুটপাট ও অনৈতিক কর্মকা- করেছেন যা প্রকাশ পেলে মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে হাসিনার মতোই তাদেরও দাবড়ানি দেবে? এমন হওয়ার কথা ছিল না। উপদেষ্টাদের সেইফ এক্সিট ভীতি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় শুরু হওয়ায় উপদেষ্টারা নড়েচড়ে বসেছেন। রেলপথ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, ‘৭২ বছর বয়সে যদি সেফ এক্সিটের কথা ভাবতে হয়, তা হবে গভীর দুঃখের বিষয়। শিক্ষকতার সূত্রে ইতোপূর্বে যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার নিশ্চিত সুযোগ ছিল আমি তা গ্রহণ করিনি’। সচিবালয়ে যে উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর তিন রাষ্ট্রদূত গোপনে পতিত আওয়ামী লীগ নেতা বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং তার স্বামী ও পুত্রের বিরুদ্ধে পলাতক নসরুল হামিদ বিপুর ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার অভিযোগ সেই বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘দেশের বিভিন্ন সময়ে নানা ঝড়-ঝঞ্ঝায় কোথাও পালিয়ে যাইনি। আগামীতেও পালাবো না, দেশে থাকবো। এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকেই পরিষ্কার করতে হবে, কারা (উপদেষ্টা) সেফ এক্সিট চায়’।
মহিলা ও শিশু-বিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেছেন, ‘উপদেষ্টাদের সেফ এক্সিটের দরকার আছে বলে মনে করি না। একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে এ সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। উপদেষ্টাদের সেফ এক্সিট বা নিরাপদ প্রস্থানের দরকার নেই।’
অপ্রিয় হলেও সত্য যে, গ্রাম-বাংলায় এবং ক্লাবের ফুটবল খেলার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রতিপক্ষকে পরাজিত করে নিজ দল বিজয়ী করতে ‘হায়ারে ভালো খেলোয়াড় নেওয়া’ হয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের বেশির ভাগই ওই ‘হায়ারি প্লেয়ারের’ মতোই। জুলাই অভ্যুত্থানের সঙ্গে এদের ছিল না কোনো সম্পর্ক। এমনকি বিগত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ বিরোধী আন্দোলন এবং দিল্লির নীল-নকশায় বিগত তিনটি নির্বাচন নামের নাটকেরও খোঁজ তারা রাখেননি। কেউ এনজিও পরিচালনায় আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলেছেন, কেউ বছরের পর বছর ধরে বিদেশে বসবাস করেছেন, কেউ বিদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে যুগের পর যুগ ধরে সেখানে বসবাস করছেন।
এ দেশের মা-মাটি-মানুষের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। পশ্চিমা প্রভাবশালী দেশ, এনজিওকর্মীসহ নানান সম্পর্কের যোগ-বিয়োগে তারা উপদেষ্টা পরিষদ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে বসার সুযোগ পেয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সময় প্রচারণা চালানো হয় এই এনজিও ব্যক্তিত্ব ও অচেনা-অপরিচিত ব্যক্তিরা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন; জাতির সংকটময় মুহূর্তে তারা মেধা কাজে লাগিয়ে দেশসেবা করবেন। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের পর ভিন্ন চিত্র দেখলো দেশের মানুষ। কয়েকজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে নানান দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগে তোলপাড় হয়। কোনো উপদেষ্টার পিতারাও নিয়োগ-বদলি বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। একাধিক উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা নিয়োগ, প্রমোশন ও বদলিতে বিপুল অর্থ লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। ভয়াবহ অভিযোগ ওঠে সংস্কার, পিআর, সনদ, গণভোট ইত্যাদি ইস্যু সৃষ্টি করে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ বাড়ানোর নানামুখী কা-ে জড়িয়ে পড়া নিয়ে। হাসিনা রেমিজে মানুষ ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। অভ্যুত্থানের পর মানুষ ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে। অথচ উপদেষ্টাদের কেউ কেউ প্রচার করেন জনগণ ৫ বছর অন্তর্বর্তী সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে চায়। কেউ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি বক্তব্য দিয়ে নির্বাচন পেছানোর কৌশল নেন। সংস্কারের অজুহাতেও নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা হয়। কেউ আইনশৃঙ্খলা অবনতির কথা প্রচার করে নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্রকারীদের উসকে দেন। এ নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে টিভি ব্যক্তিত্ব ডা. আবদুন নূর তুষার বলেছেন, ‘উপদেষ্টাদের বেশির ভাগেরই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ ছিল না। এমনকি বিগত ১৫ বছর আওয়ামী জুলুম-নির্যাতন বিরোধী আন্দোলনে সমর্থন করেননি অনেক উপদেষ্টা। এনজিও, ব্যক্তিগত পরিচয়ে দেশি-বিদেশী পরামর্শে তাদের উপদেষ্টা পদে বসানো হয়েছে। আর প্রধান উপদেষ্টা নিজেও বলেছেন, তাকে ছাত্ররা ক্ষমতায় বসিয়েছে। কাজেই এ উপদেষ্টাদের সঙ্গে জনসম্পৃক্তরা হয়নি। আর ছাত্ররা যেহেতু এদের ক্ষমতায় বসিয়ে সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন; তাদের কোনো স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটলেই তারা এ ধরনের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন’।
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ‘কিছু উপদেষ্টার মধ্যে আমরা এই আচরণ দেখতে পাচ্ছি যে, তারা এখন কোনোভাবে দায়সারা দায়িত্বটা পালন করে নির্বাচনের মধ্যদিয়ে এক্সিট নিতে পারলেই হলো। আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে দেশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তা না হলে দেশের মানুষের সামনে তারা মুখ দেখাতে পারবেন না। কোথায় সেফ এক্সিট নেবেন, পৃথিবীতে সেফ এক্সিট নামের একটাই জায়গা, সেটা হচ্ছে মৃত্যু। এ ছাড়া কোনো সেফ এক্সিট নেই। আপনি পৃথিবীর যে প্রান্তে যান, সেখানে বাংলাদেশের মানুষ আপনাকে ধরবে’।
উপদেষ্টাদের সেইফ এক্সিট নিয়ে আতঙ্কের কারণ তুলে ধরে সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে। এভাবে কোনো দেশ সংস্কার করা যায় না। বিদেশ থেকে কিছু ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী এনে কি সংস্কার সম্ভব? তবে অধিকাংশ উপদেষ্টা দ্বৈত নাগরিকত্ব। তাদের এক বড় অংশ সহজেই দেশের বাইরে চলে যেতে পারবেন। এই সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার অন্তত ১৫ দিন আগে তাদের পাসপোর্ট জব্দ করা উচিত। এরপর তদন্ত করে দেখতে হবে কাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম বা দুর্নীতির অভিযোগ আছে। যদি কেউ নির্দোষ প্রমাণিত হয় তবে তাকে মুক্তি দিতে হবে; আর দোষী হলে তাদের অবশ্যই শাস্তি দিতে হবে। আমরা সব দুষ্ট লোককে বিচারের মুখোমুখি দেখতে চাই।’
ফ্যাসিস্ট হাসিনা দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন। উন্নয়নের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে নিয়ে গেছেন। ব্যাংকিং সেক্টর ধ্বংস করে অথনীতির চাকা পঙ্গু করেছেন। শাসনের নামে জুলুম-নির্যাতন, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তিনি করেননি। অথচ মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনীতি চাঙ্গা করতে পারেনি। বিদেশে পাচার করা টাকা ফেরত আনতে পারেনি। প্রবাসীদের রেমিট্যান্স একমাত্র সম্ভল বর্তমান সরকারের। অন্তর্বতী সরকারের উপদেষ্টাম-লীর সদস্যরা ছাত্র-জনতার ক্ষমতাসীন অংশ যে নৈতিকতা নিয়ে, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, জনগণের নিরাপত্তার সুশাসন দেয়নি। অর্থনীতি, কর্মসংস্থান কোনো বিবেচনাতেই মানুষ বর্তমানে স্বস্তিতে নেই। যে উপদেষ্টাদের হাতে তারা নিজেদের সুন্দর ভবিষ্যৎ দেখবে বলে আশা করেছিল, সেখানে তাদের আশাহত হতে হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা জানিয়ে দিয়েছে, নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত বিনিয়োগ করবেন না। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা চলছে। নির্বাচনের মাধ্যমে একটা গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং একটা সুস্থিত রাজনৈতিক সরকার এখন আকাক্সিক্ষত জনপ্রত্যাশা। সে ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপের বদলে জুলাই সনদ, সনদ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা, দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদ, পিআর পদ্ধতি, গণভোট ইত্যাদি ইস্যু সৃষ্টি করে বিতর্ক তুলেছে; যা মানুষ পছন্দ করছে না। এ ছাড়াও দ্রব্যমূল্য, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, যোগাযোগ, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট, আবাসন, নিরাপদ খাদ্য, ওষুধের দাম, সুচিকিৎসা-ইত্যকার নিত্যদিনের জনচাহিদার সমস্যাগুলো উপদেষ্টারা সমাধানে মনোনিবেশ করেননি। তারা পিআর, সনদ বাস্তবায়ন, গণভোট ইত্যাদি ইস্যুর জন্ম দিয়ে ক্ষমতার মেয়াদ দীর্ঘায়িত করতেই বেশি উৎসাহী ছিলেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক বিনির্মাণের যে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, জনগণের মধ্যে যে রাজনৈতিক নতুন বন্দোবস্ত তৈরির আকাক্সক্ষা জেগেছিল, সেখানে উপদেষ্টারা কোনো নতুন আলো দেখাতে পারেননি। বরং উপদেষ্টাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে নানান অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা বলেন, ‘উপদেষ্টারা অনেকেই সেফ এক্সিট খুঁজছে। আমার মনে হয় সেফ এক্সিট খুঁজতে উপদেষ্টাদের খুব কষ্ট করতে হবে না। কারণ ম্যাক্সিমাম উপদেষ্টা ডুয়েল সিটিজেনশিপ নিয়ে চলছেন। সুতরা তাদের একটা বড় অংশই দেশের বাইরে অটোমেটিক্যালি চলে যেতে পারবেন। শুধু দেশের বাইরে তো না বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দেশগুলোতেই তারা আবারো ফিরে যাবেন। সুতরাং এ জন্য তাদের খুব একটা এক্সিট রুট খুঁজতে খুব কষ্ট করতে হবে, তেমনটিও না। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সরকার ব্যর্থ হচ্ছে, আর সেই সুযোগে আওয়ামী লীগ ফের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের মিছিল বড় হচ্ছে, ঘন ঘন হচ্ছে। ঢাকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়কে তাদের উপস্থিতি লক্ষণীয়। সুতরাং যারা ভাবছেন আওয়ামী লীগ ঘরে বসে আছে- তাদের চিন্তা ভুল।
গণ-অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, এনজিও উপদেষ্টারা যেদিন শপথ নিয়েছেন সেদিনই গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পথ খুলেছে। এটাকে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। নির্বাচন বানচালের মধ্য দিয়ে যদি অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়, তাহলে তার দায়ভার নাহিদ ইসলামকেও নিতে হবে। কারণ গণ-অভ্যুত্থানের পরে অদক্ষ লোককে সরকারের উপদেষ্টা বানানোর পুরোপুরি দায় কতিপয় ছাত্র নেতৃত্বের। তাদের ভুল সিলেকশনে এত বড় গণ-অভ্যুত্থানের পরও রাষ্ট্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি। সেটা ছাত্র নেতৃত্বরা ইদানীং স্বীকার করছে যে, তাদের ওপর বিশ্বাস করে ভুল করেছে। আমি মনে করি না বয়স্ক উপদেষ্টারা দুর্নীতি করেছে। মূলত তাদের রাষ্ট্র পরিচালনায় অনভিজ্ঞতা ও রাজনৈতিক জ্ঞান না থাকার কারণে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারের পার্ট হয়েও তারা কিছু করতে পারেনি। তাদের গণ-অভ্যুত্থানেও কোনো ভূমিকা নাই, হাসিনার বিরুদ্ধেও কখনো রাজপথে নামেনি। এই বয়স্ক মানুষগুলোকে প্রলোভন দেখিয়ে উপদেষ্টা বানিয়ে ছাত্রনেতারা ভুল করেছেন।
’৯০-এর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দেশে অস্থায়ী সরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছে এবং ওই সব সরকার নির্বাচন দিয়ে চলে গেছে। ওই চলে যাওয়াকে ‘সেফ এক্সিট’ বলে। উল্লেখ, ২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেনে ক্ষমতা নেয়া ড. ফখরুদ্দীন আহমদ-মইন ইউ আহমদ দায়িত্ব শেষে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। আওয়ামী লীগ সরকার তখন তাদের ‘সেফ এক্সিট’ দেয়।