
চাঁদপুর আদালত প্রাঙ্গণে দুই অবুঝ যমজ শিশুকে নিয়ে বাবা-মায়ের কান্না ও টানাটানির হৃদয়বিদারক দৃশ্যটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে চাঁদপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহিমের আদালতে মামলার রায় ঘোষণার পরপরই এ দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১১ নম্বর ইউনিয়নের সন্তোষপুর বেপারী বাড়ির মিজানুর রহমানের ছেলে তারেক রহমান (২৮) ও একই এলাকার বিল্লাল হোসেনের মেয়ে সুমাইয়া আক্তার দম্পতির ঘরে ২০২২ সালের ২১ অক্টোবর জন্ম নেয় যমজ দুই পুত্র সন্তান — হাসান ইসলাম রেদোয়ান ও হোসাইন ইসলাম।
তবে পারিবারিক কলহের জেরে ২০২৪ সালের শেষের দিকে সুমাইয়া এক পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করেন। কিছুদিন পর সেই সংসার ভেঙে গেলে তিনি পুনরায় তারেকের সংসারে ফিরতে চান। কিন্তু তারেক রাজি না হওয়ায় সুমাইয়া তারেকের বিরুদ্ধে যৌতুক মামলা ও দুই সন্তানের জিম্মা চেয়ে আদালতে আবেদন করেন।
আদালত শুনানি শেষে সন্তানদের মায়ের জিম্মায় দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর আদালত প্রাঙ্গণে সন্তান হস্তান্তরের সময় শুরু হয় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। দুই শিশু কাঁদতে কাঁদতে বাবার কোলে থাকতে চায়, অন্যদিকে মা টানতে থাকেন নিজের জিম্মায় নেওয়ার জন্য। আবেগঘন সেই মুহূর্তে উপস্থিত অনেকে চোখের পানি আটকে রাখতে পারেননি।
তারেক রহমান বলেন, “নয় মাস আগে সুমাইয়া পরকীয়া করে পালিয়ে যায়। তখন থেকে আমিই আমার দুই সন্তানকে লালন-পালন করছি। এখন আদালত ওদের মায়ের হাতে তুলে দিয়েছে, কিন্তু ওরা যেতে চায়নি। এটা আমি মেনে নিতে পারছি না। আমি আল্লাহর কাছে বিচার চাই।”
অন্যদিকে সুমাইয়া বলেন, “আদালতের মাধ্যমে সন্তানদের আমি জিম্মায় পেয়েছি। এখন এর বেশি কিছু বলতে চাই না।”
তারেকের পক্ষের আইনজীবী ও চাঁদপুর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া বলেন, “মেয়েটি পরকীয়া করে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিল, সেটি টেকেনি। পরে ফিরে এসে প্রথম স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করে। আদালত আইন অনুসারে সন্তানদের মায়ের জিম্মায় দিয়েছেন, কিন্তু পিতা তা মেনে নিতে পারেননি। তিনি আদালতে চিৎকার করে আল্লাহর কাছে বিচার চাইছিলেন।”
এই মর্মস্পর্শী দৃশ্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নেটিজেনদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই শিশুদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মানবিক পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন।