
ওমরাযাত্রায় স্বচ্ছতা ও নিরাপদ করতে সউদী সরকার কঠোর শর্তাবলি জারি করছে। এতে ওমরাহ ভিসা এক সপ্তাহ বন্ধ থাকায় ওমরাযাত্রীরা চরম বিপাকের সম্মুখীন হচ্ছেন। এখন থেকে কোনো ওমরাযাত্রী ওমরাহ এজেন্সি ব্যতীত সউদী যেতে পারবেন না। ফলে ওমরাহ এজেন্সিগুলোর কদর বাড়ছে। এতো দিন যে কেউ অনলাইনে ওমরাহ ভিসা করে সউদী চলে যেতে পারতেন। এখন আর তা সম্ভব নয়। ওমরাহ ভিসা সাময়িক বন্ধ থাকায় অনেক যাত্রীর বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের ক্রয়কৃত টিকিট বাতিল করতে হয়েছে। গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ওমরাহ ভিসা সাময়িক বন্ধ থাকায় আবাবিল হজ গ্রুপের কয়েক হাজার ওমরাহ টিকিট বাতিল করতে হয়েছে। আবাবিল হজ গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ গতকাল এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি ইনকিলাবকে জানান, সউদী সরকার ওমরাহ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে অনলাইনে ওমরাহ ভিসা বন্ধ করে প্রত্যেক ওমরাহ এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা করার প্রক্রিয়া চালু করেছে। এখন থেকে আর কোনো ওমরাযাত্রী বৈধ ওমরাহ এজেন্সির মাধ্যম ছাড়া সউদী যেতে পারবেন না। তিনি ওমরাহ টিকিটের দাম দেদারসে বৃদ্ধি পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ওমরাহ ব্যবস্থাপনায় সঙ্কট নিরসনের লক্ষ্যে অবিলম্বে ঢাকা-জেদ্দা রুটে বিমানের অতিরিক্ত ওমরাহ ফ্লাইট চালুর জোর দাবি জানান। তিনি প্রয়োজনের ওমরাহ ফ্লাইট সঙ্কট নিরসনের লক্ষ্যে বিমান ভাড়ায় আনার অনুরোধ জানান। তিনি সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে তিন ধাপে হজ নিবন্ধনের সাড়ে তিন লাখ টাকা জমা নিয়ে ফাইনাল নিবন্ধনের সুযোগ দেয়ার জোর দাবি জানান। এতে হজযাত্রীর কোটা পূরণ হবে। অন্যথায় আশানুরুপ হজ কোটা পূরণ হবে না।
ওমরাহ টিকিটের দাম দেদারসে বাড়ছে। চড়া দামে বিমানের টিকিট কিনতে ওমরাযাত্রীদের গলদঘর্ম। বিমানের ওমরাহ টিকিট কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি হওয়ায় যাত্রীরা সিস্টেমে কোনো ওমরাহ টিকিট কিনতে পারছেন না। এতে প্রতিনিয়ত ওমরাযাত্রীরা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এদিকে, আগামী হজযাত্রীদের সউদী গমনের বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোকে গত ৫ অক্টোবর থেকে আগামী ১২ অক্টোবরের মধ্যে লীড এজেন্সি চূড়ান্ত করার নির্দেশ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। প্রত্যেক হজ এজেন্সিকে ২ হাজার হজযাত্রীর কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে হজ এজেন্সিগুলো লীড এজেন্সি ঠিক করতে বেকায়দায় পড়েছে। সউদী আরব ওমরাহ যাত্রা আরো শৃঙ্খলিত ও নিরাপদ করতে নতুন কিছু কঠোর নিয়ম চালু করেছে। প্রতিটি ধাপ যেমন ওমরাহ ভিসা আবেদন, হোটেল বুকিং থেকে শুরু করে পরিবহন সবকিছুই সরকারি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক ওমরাহ অপারেটররা জানিয়েছেন, এই নতুন ব্যবস্থায় ওমরাহ যাত্রাপথ আরো স্বচ্ছ ও সংগঠিত করলেও, তীর্থযাত্রীদের জন্য তা মানা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ওমরাহর আগে জরুরি ১০টি নতুন পরিবর্তন তুলে ধরা হলো, ভিসা আবেদনের সময়ই হোটেল বুকিং বাধ্যতামূলক, এখন থেকে হোটেল বুকিং পরে নয়, ভিসা আবেদন করার সময়ই করতে হবে। আবেদনকারীদের মাসার সিস্টেম বা নুসুক অ্যাপের মাধ্যমে অনুমোদিত হোটেল বেছে নিতে হবে অথবা আত্মীয়ের বাসায় থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। আত্মীয়ের বাসায় থাকলে দিতে হবে সউদী আইডি,
যদি কেউ সউদীতে আত্মীয়ের বাসায় থাকতে চান, তবে হোস্টের ইউনিফায়েড সউদী আইডি নম্বর দিতে হবে। পরিকল্পনা বদলালে সেই আইডি আপডেট করতে হবে। সব তীর্থযাত্রীকেই এখন থেকে নাসুক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ওমরাহ ভিসা নিতে হবে ই-ভিসা অথবা অনুমোদিত এজেন্টের প্যাকেজের মাধ্যমে। ভিসা আবেদনের সময়ই ভ্রমণ সূচি জমা দিতে হবে, পরে তা পরিবর্তন বা স্থগিত করা যাবে না। সময়সীমা অতিক্রম করলে জরিমানা হবে। নির্দিষ্ট কিছু দেশের নাগরিকদের জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা বা শেনজেন দেশের ভিসাধারী বা সেসব দেশের বাসিন্দারা আগে অন্তত একবার সেখানে ভ্রমণ করলে আগমনের পর ভিসা পেতে পারেন। ভিসার মেয়াদ থাকবে এক বছর।
বিমান বন্দরে আগমনের পর কর্মকর্তারা নাসুক বা মাসার সিস্টেমে থাকা হোটেল ও পরিবহন বুকিং যাচাই করবেন। কোনো তথ্য অনুপস্থিত থাকলে যাত্রা বন্ধ বা জরিমানা হতে পারে। তীর্থযাত্রীরা কেবল নাসুক অ্যাপের মাধ্যমে অনুমোদিত ট্যাক্সি, বাস বা ট্রেন ব্যবহার করতে পারবেন। যে কোনো সাধারণ গাড়ি ব্যবহার করলে শাস্তি হতে পারে। সউদীর জনপ্রিয় হারামাইন এক্সপ্রেস ট্রেন কেবল রাত ৯টা পর্যন্ত চলে। এরপর পৌঁছালে আগেই অনুমোদিত বিকল্প পরিবহন বুক করতে হবে। অননুমোদিত গাড়ি ব্যবহার, অতিরিক্ত থাকা বা পরিকল্পনা ভঙ্গের ক্ষেত্রে প্রতি ব্যক্তিকে কমপক্ষে ৭৫০ সউদী রিয়াল জরিমানা করা হবে। হাবের মহাসচিব ফরিদ আহমদ মজুমদার ইনকিলাবকে জানান, হজ এজেন্সিগুলোকে লীড এজেন্সি নির্ধারণের নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। আমরা হাবের পক্ষ থেকে লীড এজেন্সি নির্ধারণের সময় বৃদ্ধির জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন জানাবো। এক প্রশ্নের জবাবে হাব মহাসচিব বলেন, সউদী সরকারের নিয়ম নীতি অনুসরণের জন্যই হজ ব্যবস্থাপনার কার্যক্রমে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে তাগিদ দেয়া হচ্ছে।
এদিকে, মুসলমানদের তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো স্বাচ্ছন্দ্য ও প্রশান্তির সঙ্গে করার জন্য সব ধরনের ভিসাধারীদের ওমরাহ পালনের অনুমতি দিয়েছে সউদী আরব। রোববার দেশটির হজ ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডন। এতে বলা হয়েছে, সউদী প্রেস এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ভিজিট ভিসা, ইলেকট্রনিক ট্যুরিস্ট ভিসা, ওয়ার্ক ভিসা ও অন্য যেকোনো ধরনের ভিসাধারীরা সউদী আরবে অবস্থানকালীন দেশটিতে ওমরাহ পালন করতে পারবেন। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওমরাহ পালন সহজ করতে ওই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আরো বলা হয়েছে, মুসলমানদের তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো স্বাচ্ছন্দ্য ও প্রশান্তির সঙ্গে করার জন্য ওই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। জুলাই মাসে ফেডারেল মন্ত্রীসভা আনুষ্ঠানিকভাবে হজ নীতি ২০২৬ অনুমোদন করে। যেখানে হজ মৌসুমের জন্য মূল পদ্ধতিগত, আর্থিক ও লজিস্টিক ব্যবস্থার রূপরেখা দেয়া হয়েছে।
এদিকে চলতি বছরেই এক ভিসার মাধ্যমে উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ বা জিসিসিভুক্ত ছয় দেশে ভ্রমণের সুযোগ চালু হতে যাচ্ছে। সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থনীতি ও পর্যটন মন্ত্রী এবং আমিরাত পর্যটন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ বিন তৌক আল মারি।
তিনি বলেন, শেনজেন-স্টাইলের ভিসার অনুরূপ একীভূত জিসিসি পর্যটন ভিসা পর্যটকদের ছয়টি জিসিসি দেশ ভ্রমণের সুযোগ করে দেয়। এটি ‘গভীর আঞ্চলিক একীকরণের দিকে একটি কৌশলগত পদক্ষেপ এবং একক পর্যটন গন্তব্য হিসেবে উপসাগরের সম্মিলিত আবেদন বৃদ্ধি করবে’। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংবাদ সংস্থা ওয়ামের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ভিসার সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন - যা জিসিসি গ্র্যান্ড ট্যুরিস্ট ভিসা নামেও পরিচিত - পরবর্তী পর্যায়ে চালু করা হবে। তবে মন্ত্রী একক জিসিসি ভিসা চালুর সঠিক তারিখ প্রকাশ করেননি।
গত ১৬ জুন, ২০২৫ তারিখে, আল মারি খালিজ টাইমসকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন যে, জিসিসি একক পর্যটন ভিসা অনুমোদিত হয়েছে এবং ‘শীঘ্রই’ চালু করা হবে। জিসিসি গ্র্যান্ড ট্যুরিস্ট ভিসা বিদেশী পর্যটকদের একক ভিসায় সংযুক্ত আরব আমিরাত, সউদী আরব, বাহরাইন, কাতার, ওমান এবং কুয়েত ভ্রমণের অনুমতি দেবে। ভিসার খরচ এবং সময়কাল এখনও প্রকাশ করা হয়নি। সূত্র : খালিজ টাইমস।