
অবরুদ্ধ গাজায় আরও ভয়াবহ গণহত্যার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। বৃহস্পতিবার (বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে) এক্সে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে এ হুঁশিয়ারি দেন জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) প্রধান ফিলিপ লাজ্জারিনি। ইসরাইলের বর্বর হত্যাযজ্ঞে কয়েকদিন আগেই গাজায় ৬৬ হাজার ছাড়িয়েছে মৃত্যুর সংখ্যা। এর মধ্যেই নতুন করে সেখানে আরও বড় গণহত্যার সতর্কতা দিলেন লাজ্জারিনি। বললেন, প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার অবরুদ্ধ বাসিন্দাকে ব্যাপকভাবে লক্ষ্যবস্তু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইল। এই পদক্ষেপকে ‘ভয়াবহ’ হিসাবে উল্লেখ করেছেন তিনি। আল-জাজিরা।
গাজায় বেসামরিক নাগরিক হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং মানবিক পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে ক্রমবর্ধমান আশঙ্কার মধ্যেই নতুন এ মন্তব্য করলেন তিনি। পোস্টে লাজ্জারিনি আরও বলেন, ‘কারও কাছে বেসামরিক নাগরিক হত্যার লাইসেন্স নেই। গাজায় চলমান অপরাধের জবাব দিতেই হবে।
জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন ইতোমধ্যেই বিষয়টি গণহত্যা বলে অভিহিত করেছে। এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।’
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বারবার সহিংসতা বন্ধ এবং মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, লাজ্জারিনির সতর্কীকরণ জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সবচেয়ে তীব্রতম সতর্কীকরণ। বিষয়টি আন্তর্জাতিক উদাসীনতার প্রতিফলন। এর আগে বুধবার ইউএনএআরডব্লিউ জানিয়েছে-ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকায় প্রতিদিন গড়ে ১০০ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে। এর পাশাপাশি অনাহার এবং চিকিৎসা সেবার অভাবে মারা যাচ্ছে অনেকে। যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে লাজ্জারিনি জোর দিয়ে বলেন ‘চলমান অপরাধের নথিভুক্তিকরণ অব্যাহত রাখতে হবে’ এবং ‘দুর্ভোগের কথা শুনতে হবে এবং এ বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে।’ এছাড়াও জাতিসংঘ আবারও বলেছে গাজায় কোনো নিরাপত্তা নেই। ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এল্ডার জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘দক্ষিণে নিরাপদ অঞ্চলের ধারণাটি প্রহসনমূলক’।
গাজা উপত্যকার বিপর্যয়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আকাশ থেকে বোমা ফেলা হচ্ছে, যার ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন; অস্থায়ী আশ্রয়স্থল হিসাবে মনোনীত স্কুলগুলো নিয়মিত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে। তাঁবু ... নিয়মিতভাবে বিমান হামলার আগুনে পুড়ে যাচ্ছে।’
ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজায় হাজারো শিশুসহ অনেকের জীবন শারীরিক ও মানসিকভাবে চিরদিনের জন্য বদলে গেছে। তারা আর কোনো দিন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন না।
গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে চলমান ইসরাইলি আগ্রাসনে প্রায় ৪২ হাজার মানুষ জীবন বদলে দেওয়া আঘাতের শিকার হয়েছে। সহজ ভাষায় বললে, তাদের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা আর কখনোই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক সাম্প্র্রতিক প্রতিবেদনে এই দুঃখজনক তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার ওয়াফা এজেন্সির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য। আহতদের মধ্যে প্রতি চারজনের একজন শিশু। অন্তত ৫ হাজার মানুষের বিভিন্ন অঙ্গ শরীর থেকে আলাদা হয়ে গেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২২ হাজারের বেশি মানুষের হাত-পা গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, যা আর কোনো দিন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে না। ২ হাজারের বেশি মানুষ স্পাইনাল কর্ড তথা মেরুরজ্জুতে আঘাত পেয়েছেন। ১ হাজার ৩০০ জন মানুষ মস্তিষ্কের আঘাতে ভুগছেন এবং ৩ হাজার ৩০০ জনের বেশি মানুষের শরীরের বড় অংশ পুড়ে গেছে। মুখমণ্ডল ও চোখের জটিল আঘাতও ব্যাপকভাবে দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে যারা এখনো গাজায় উন্নত চিকিৎসা নিতে পারছেন না, তাদের মধ্যে এ ধরনের জটিলতা বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এসব আঘাত শুধু শারীরিক নয়, সামাজিক কলঙ্ক এবং প্রতিবন্ধিতার নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। এছাড়াও গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধ্বংসপ্রায়।
৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে কেবল ১৪টি আংশিকভাবে কার্যকর, আর যুদ্ধের আগে চালু থাকা পুনর্বাসন সেবার তৃতীয়াংশও এখন নেই। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতি অনুসারে, ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলের বোমা হামলায় গাজায় আরও ২২৭ জন আহত হয়েছেন। ৭ অক্টোবর, ২০২৩ সাল থেকে ছিটমহলে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৬,২৮৮ জনে দাঁড়িয়েছে এবং ১,৬৯,১৬৫ জন আহত হয়েছে।