
প্রফেসর ইউনূসের নিউ ইয়র্ক অভিযান হতে পারতো বাংলাদেশের কূটনৈতিক ইতিহাসে এক স্মরণীয় দিন। কিন্তু তা না হয়ে ‘রাষ্ট্রীয় পিকনিকে’- পরিণত হয়েছে। এ নিয়ে এখন অন্তহীন আলোচনা চারদিকে। এক বছর আগে কম সদস্যের প্রতিনিধিদল নিয়ে রেকর্ড করেছিলেন। শুরুতে বলা হয়েছিল আটজন। যদিও তা ৫৭ জনে গিয়ে ঠেকে।

এবার তার নিজের রেকর্ড ভেঙে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছেন। ১০৪ সদস্যের প্রতিনিধিদল দেখে অনেকেই হতাশ এবং ক্ষুব্ধ হয়েছেন। হাফ ডজন উপদেষ্টাও ছিলেন এই প্রতিনিধিদলে। তাদের কাজ কী ছিল সেখানে! দৃশ্যমান কিছু চোখে পড়েনি। প্রতিনিধিদলে উপদেষ্টা ও সমমর্যাদার ছিলেন ছয়জন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ছিলেন ১৩ জন, এসএসএফ বস সহ নিরাপত্তা দলে ছিলেন ১৯ জন। প্রেস ও মিডিয়া টিমে সর্বোচ্চ ৪১ জন। রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিনিধিদলে জায়গা দিয়ে কিছুটা চমক সৃষ্টি করেছিলেন। যদিও ফলাফল শূন্য। বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যকার দূরত্ব আরও বেড়েছে। আইডিয়া ছিল চমকপ্রদ। রাজনৈতিক দলগুলোকে এককাতারে করে প্রতিনিধিদলে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা ছিল নতুন এবং অভিনব।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সরকারের তরফে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি তার ব্যক্তিগত কাজের কথা বলে অপারগতা প্রকাশ করেন। এরপর তিনি দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নাম প্রস্তাব করেন এবং সেটাই গৃহীত হয়। মির্জা ফখরুল তখন বিদেশে চিকিৎসাধীন। তার ভিসা আছে কিনা নিশ্চিত না হওয়ায় বিকল্প একটি নাম প্রস্তাব করা হয়। তিনি হচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির। কিন্তু গোলমালটা বাধিয়ে দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তাকে বলা হয়েছিল রাজনৈতিক নেতাদের নাম সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করার জন্য। তিনি সেটা বলতে গিয়েই নতুন এক পরিস্থিতি তৈরি করেন। বলেন, বিএনপি থেকে দু’জন যাবেন নিউ ইয়র্কে। এরপর জামায়াত এবং এনসিপি প্রতিবাদ জানায়। পরে চাপের মুখে দু’দল থেকে দু’জন করে যুক্ত করা হয়। তৌহিদ হোসেন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই এই বিভ্রান্তি তৈরি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শুরু থেকেই তিনি বারবার ভুল করে যাচ্ছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজের কোনো গতি আসেনি। এন্তার অভিযোগ তার টেবিলে এলেও তিনি এক অজানা কারণে সরকারকে অবহিত না করে বিরত থাকেন। একের পর এক কূটনীতিক রাজনৈতিক আশ্রয় নিচ্ছেন। কিন্তু কোনোটার ব্যাপারে তিনি কোনোরকম অ্যাকশনে যাননি। এসব ঘটনায় প্রফেসর ইউনূস বেজায় চটেছেন তার ওপর। কিন্তু এতে কাজ হয়নি।
বলা হচ্ছে প্রফেসর ইউনূস কাউকেই কষ্ট দিতে চান না। অথচ তার এই উদারতার সুযোগে মহৎ উদ্যোগগুলোর অনেকটাই ভেস্তে গেছে। নিউ ইয়র্ক সফর আলোচিত এবং সমালোচিত। বরাবরের মতো এবারও বিমানবন্দরে এবং জাতিসংঘের আশপাশে বিক্ষোভ হয়েছে। হয়েছে ডিম বৃষ্টি। এতে করে বাংলাদেশের ইমেজ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রফেসর ইউনূস হয়তো জানেন না- আজকাল আলোচনার টেবিলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনের নামও যুক্ত হচ্ছে। অতিসমপ্রতি একটি সরকারি সংস্থার শীর্ষ পদে নিয়োগদানের জন্য ৮০ কোটি টাকা দাম উঠেছে। বলা হয়েছে, এই নিয়োগ সম্পন্ন হলে একটি বিশেষ স্থানে যাবে ৪০ কোটি। বাকি ৪০ কোটি পাবে তৃতীয়পক্ষ। আর যাকে নিয়োগ দেয়া হবে তার কিছুই করতে হবে না। শুধু বাণিজ্যের কারসাজিতে সায় দিয়ে যাবেন বিনাদ্বিধায়। প্রশাসনিক ক্যাডারের ওই শীর্ষ কর্মকর্তা শেষ পর্যন্ত এই প্রস্তাবে রাজি হননি আখেরের কথা ভেবে। এরপর কী হয়েছে জানা যায়নি। এসব খবর সচিবালয়ে চাউর হয়ে আছে। বেশ কিছু খবর বার্তাকক্ষেও পৌঁছেছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে চমক লাগানো বক্তব্য হাজির করে প্রফেসর ইউনূস জনগণকে আশ্বস্ত করেছিলেন। তবে অতীত আর কোনোদিনই বর্তমান হবে না। কিন্তু দিনের শেষে হিসাব মেলানো বড় কঠিন। সময় পাল্টানোর সঙ্গে সঙ্গে ঘুষের রেট আরও বেড়েছে। এখন অনেকেই ঘুষ বলতে চান না। তাদের কথায়- রীতিমতো লুট হচ্ছে। যাইহোক ঘুরেফিরে প্রশ্ন উঠছে- জাতিসংঘে প্রতিনিধিদলে ১০৪ জনকে সফরসঙ্গী করার পেছনে কী যুক্তি ছিল। জবাবদিহিতা থাকলে হয়তো জানা যেত এর আসল কারণ। কিন্তু বাংলাদেশে তো জবাবদিহিতার মৃত্যু হয়েছে অনেক আগেই।
ম. চৌ