
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করলেও সারা দেশে দলীয় প্রার্থী তালিকা ঠিক করে রেখেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। যদিও নেতাদের দাবি, এটি প্রাথমিক তালিকা। যেকোনও সময় তা পরিবর্তন হতে পারে। সবকিছু মাথায় রেখেই চলছে যাবতীয় প্রস্তুতি।
নেতারা মনে করছেন, আগামী নির্বাচনে জামায়াত সরকার গঠনও করতে পারে। দলের জনসমর্থন বেড়েছে বলে তাদের দাবি।
তবে অতীতের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনগুলোতে দলটির অর্জন কতটুকু, এককভাবে কয়টি আসনে তাদের উল্লেখযোগ্য ভোট রয়েছে, বিএনপির মতো দলকে বাদ দিয়ে জনগণ তাদের কেন বেছে নেবে, এ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। দেশের ৩০০টি আসনের মধ্যে অতীতের চারটি নির্বাচনের পরিসংখ্যান বিবেচনা করলে ৪৩টিতে মোটামুটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারে দলটি।
দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সরকার গঠন করতেই নির্বাচন করছি। আমাদের বিশ্বাস জনগণ এবার দাঁড়িপাল্লাকেই বেছে নেবে। কারণ অতীতে যারাই ক্ষমতায় ছিল, তারা দেশের স্বার্থে কোনও কিছুই করেনি।’
তার দাবি, এবার দলের শীর্ষ নেতারাও ভালো করবেন। অবশ্য জামায়াত ঠিক কতটি আসন পেতে পারে সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।
তবে ৯০ পরবর্তী প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনগুলোর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এককভাবে ভোটে অংশগ্রহণ করলে দলের আমির ও সেক্রেটারি জেনারেলের আসনে জয়ী হওয়াও অনিশ্চিত। অন্য শীর্ষ নেতাদের বেলায়ও একই অবস্থা।
নেতাদের আত্মবিশ্বাসী বক্তব্য ও দলীয় তৎপরতা
১৬ বছর এক ধরনের কোণঠাসা অবস্থায় থাকলেও গত বছরের ৫ আগস্টের পর পুরোদমে দলীয় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে জামায়াত। এরই মধ্যে গত ১৯ জুলাই রাজধানীতে বড় শোডাউন করেছে। বসে নেই দলের সহযোগী সংগঠনগুলোও। সম্প্রতি দলীয় আমিরের সঙ্গে কূটনীতিকদের ঘন ঘন সাক্ষাৎকেও অনেকে বিশেষ ইঙ্গিতবহ মনে করছেন।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে একটি সমাবেশে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে সরকার গঠনের মতো আসনে বিজয়ী হবে জামায়াত। আর বিএনপি হবে বিরোধী দল।’ তার মতে, ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের মাধ্যমেও তরুণরা এ ধরনের বার্তা দিয়েছে। দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতেও এমন বক্তব্য দিচ্ছেন নেতারা।
প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনগুলোতে অর্জন কী?
১৯৯০ সালে এরশাদের পতনের পর এখন পর্যন্ত মোটামুটি গ্রহণযোগ্য চারটি সংসদ নির্বাচনে জামায়াত তেমন সাফল্য পায়নি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে ১৮টি আসনে জামায়াত জয়লাভ করে। মোট ১২ দশমিক ১৩ শতাংশ ভোট পড়ে দলটির পক্ষে। বিজয়ী বিএনপি ১৪০টি আসন লাভ করে ভোট পায় ৩০ দশমিক ৮১ শতাংশ। আওয়ামী লীগ ৮৮টি আসন পায় এবং ভোট পায় ৩০ দশমিক ০৮ শতাংশ। এ নির্বাচনে ৩৫টি আসন পেয়ে তৃতীয় হওয়া জাতীয় পার্টি ভোট পায় ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। তবে আসনের দিক থেকে চতুর্থ হলেও ভোটের হারে তৃতীয় অবস্থান ছিল জামায়াতের।
১৯৯৬ সালের ১২ জুনের সপ্তম জাতীয় নির্বাচনে এককভাবে মাত্র তিনটি আসন ও মোট ভোটের ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ পেয়ে চতুর্থ হয় জামায়াত। যেখানে বিজয়ী আওয়ামী লীগ ১৪৬টি আসন ও ৩৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ ভোট পায়। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ১১৬ আসন ও ৩৩ দশমিক ৬১ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়। এরশাদের জাতীয় পার্টি ৩২টি আসন ও ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পেয়ে হয় তৃতীয়।
২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ চারদলীয় জোট থেকে ৩১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৭টি আসন ও ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ ভোট পায় জামায়াত। বিজয়ী বিএনপি ১৯৩টি আসন ও ৪০ দশমিক ৯৭ শতাংশ ভোট পায়। ৬২টি আসন ও ৪০ দশমিক ১৩ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রধান বিরোধী দল হয় আওয়ামী লীগ। ১৪টি আসন ও ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ ভোট পায় জাতীয় পার্টি। এ নির্বাচনে আসনের দিক থেকে জামায়াত তৃতীয় হলেও ভোটের হারে তাদের অবস্থান চতুর্থ।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় নির্বাচনে মাত্র দুটি আসন ও ৪ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পায় জামায়াত। ২৩০টি আসন ও ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পায় আওয়ামী লীগ। অবশ্য এতে তারা অংশগ্রহণ করে জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের সমন্বয়ে মহাজোটের ব্যানারে। এ নির্বাচনে ৩০টি আসন ও ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রধান বিরোধী দল হয় বিএনপি। আর ২৭টি আসন ও ৭ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয় জাতীয় পার্টি। সেখানেও ভোটের হারে চতুর্থ হয় জামায়াত। তিনটি আসন পেয়ে আসনের দিক দিয়ে চতুর্থ হয় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), পঞ্চম জামায়াত।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের সমাবেশ
আমিরসহ শীর্ষ নেতাদের আসন পরিস্থিতি
জামায়াতের বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমান ২০০১ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন নিজ জন্মস্থান মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া-কমলগঞ্জ)-এর একাংশ থেকে। মাত্র ১২ হাজার ৪১৫ ভোট পেয়ে তিনি তৃতীয় হন। সেখানে ৭৮ হাজার ৬৬৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী এম এম শাহীন। আর ৭১ হাজার ৮০৩ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন আওয়ামী লীগের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর।
এই আসন থেকে সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে একক নির্বাচন করে ৫ হাজার ১১০ ভোট পেয়ে চতুর্থ হন জামায়াত প্রার্থী খন্দকার আব্দুস সোবহান।
একই নির্বাচনে সিলেট-১ (সদর) আসন থেকে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে ১৮ হাজার ২৯ ভোট পেয়ে চতুর্থ হন বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমান। এ আসন থেকে ৯১ সালে নির্বাচন করে ১৭ হাজার ৫১৭ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন তিনি।
নিজ এলাকা মৌলভীবাজার-৩ বা সিলেটের কোনও আসন থেকে এবার তিনি নির্বাচন করবেন কিনা, তা এখনও দল থেকে নিশ্চিত করা হয়নি। তবে ঢাকা-১৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এটা নিশ্চিত। সেক্রেটারি জেনারেল থাকাকালীন ২০১৮ সালেও তিনি এ আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন। কিন্তু উল্লেখযোগ্য ভোট পাননি। অতীতেও এ আসন থেকে জামায়াতের ভালো ভোট পাওয়ার রেকর্ড নেই। তারপরও এবার তার পক্ষে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ২০০১ সালে খুলনা-৫ (ফুলতলা-ডুমুরিয়া) আসন থেকে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। তবে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নারায়ণ চন্দ্র চন্দের কাছে হেরে যান। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ০৫ হাজার ৩১২ ভোট। আর বিজয়ী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ পান ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬০ ভোট। সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে বিএনপিবিহীন একক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে জামায়াতের প্রার্থী এ কে এম গাউসুল আজম পান মাত্র ১৫ হাজার ৯৬০ ভোট।
নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ২০০১ সালে কুমিল্লা-১২ (চৌদ্দগ্রাম) বর্তমানে কুমিল্লা-১১ আসন থেকে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হককে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। তবে ২০০৮ সালে ৭৭ হাজার ৯২৪ ভোট পেয়ে হেরে যান। বিজয়ী মুজিবুল হক পান ১ লাখ ০১ হাজার ২০১ ভোট। কুমিল্লার ১১টি আসনের মধ্যে একমাত্র এটিতেই জামায়াতের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো অবস্থান রয়েছে।
আরেক নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান প্রার্থী হওয়ার কথা রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসন থেকে। ১৯৮৬ সালে তিনি এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। তবে এককভাবে অংশগ্রহণ করা ১৯৯৬ সালের সর্বশেষ নির্বাচনে তিনি ২৮ হাজার ৪৫৩ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন। যেখানে বিজয়ী বিএনপির ব্যারিস্টার আমিনুল হক পান ৮৩ হাজার ৯৯৪ ভোট।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাসপ্রাপ্ত এটিএম আজহার নির্বাচন করবেন রংপুর-২ (তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ) আসন থেকে। ২০০৮ সালে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৩৬ হাজার ৫৮৬ ভোট। বিজয়ী জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মণ্ডল পান ১ লাখ ৬৬ হাজার ২৭১ ভোট। অপরদিকে ১৯৯৬ সালে তিনি জামায়াতের হয়ে এককভাবে পান মাত্র ৮ হাজার ২৭৩ ভোট।
সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান নির্বাচন করবেন সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) আসন থেকে। ২০০৮ সালে চারদলীয় জোট থাকলেও এ আসনটিতে এককভাবে অংশগ্রহণ করে বিএনপি ও জামায়াত। এতে রফিকুল ইসলাম খান দ্বিতীয় হন। এবার এ আসনটি পেতে তিনি ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন।
সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ নির্বাচন করবেন কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসন থেকে। ২০০৮ সালে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে তিনি ১ লাখ ৪ হাজার ২৭১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের আনসারুল করিম ৮৬ হাজার ৯৪৪ ভোট পান। সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে আসনটিতে একক নির্বাচনে অংশ নিয়ে জামায়াতের সাইফুল্লাহ কুতুবী ২১ হাজার ৮৫৯ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন।
বরিশাল-৫ (সদর) আসন থেকে নির্বাচন করবেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল। তবে অতীতে এ আসনে জামায়াতের ভোটের পরিসংখ্যান তেমন সুবিধাজনক নয়। সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে একক নির্বাচনে মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল ৪ হাজার ৬৬৭ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন। যেখানে বিজয়ী প্রার্থী বিএনপির নাসিম বিশ্বাস পান ৭০ হাজার ৮০৪ ভোট।
জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল নির্বাচন করবেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসন থেকে। আসনটি থেকে ১৯৯১ সালে দলের প্রার্থী লতিফুর রহমান জয়ী হন। ৯৬ সালে বিএনপির হারুনুর রশিদের কাছে তিনি হেরে যান। ২০০১ ও ২০০৮ সালে সারা দেশে বিএনপি জামায়াত জোটবদ্ধ নির্বাচন করলেও এ আসনটিতে দুই দলেরই প্রার্থী ছিল। তবে ২০০৮-এ জামায়াতের প্রার্থী লতিফুর রহমান ৭২ হাজার ভোট পেয়ে তৃতীয় হন। যেখানে বিজয়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থী ১ লাখ ১২ হাজার ৭৫৩ ভোট পান এবং ৭৬ হাজার ১৭৮ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন বিএনপির হারুনুর রশিদ। সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনেও এমপি হন বিএনপির হারুনুর রশিদ। সেখানেও তৃতীয় হন জামায়াতের নুরুল ইসলাম বুলবুল। এ আসনটিতে জামায়াতের অবস্থান কিছুটা ভালো।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ নির্বাচন করবেন পটুয়াখালীর বাউফল থেকে। ইতোমধ্যে এলাকায় ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি। তবে সর্বশেষ একক নির্বাচনে ১৯৯৬ সালে জামায়াতের প্রার্থী মো. ফখরুদ্দিন রাজি মাত্র ১ হাজার ৬৮০ ভোট পেয়ে চতুর্থ হন। যেখানে বিজয়ী আওয়ামী লীগের আসম ফিরোজ পান ৪৫ হাজার ৯৩৭ ভোট।
ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন নির্বাচন করবেন সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) আসন থেকে। ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ চারদলীয় জোট থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমান যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় হন। সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে একক নির্বাচনে তিনি ১৪ হাজার ১৬৩ ভোট পেয়ে চতুর্থ হন।
ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম নির্বাচন করবেন লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসন থেকে। সেখানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। যিনি একাধিকবার জয়ী হন। সেখানে জামায়াতের অতীতে উল্লেখযোগ্য ভোটের রেকর্ড নেই।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের সমাবেশ
বিভাগভিত্তিক উল্লেখযোগ্য ভোট ব্যাংক কয়টি আসনে?
দেশের বেশ কয়েকটি জেলার কিছু আসনে অতীতে জয়ের রেকর্ড রয়েছে জামায়াতের। কিছু আসনে দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে তারা। সেসব আসন জামায়াতের ভোট ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত। ঘুরেফিরে এগুলোতেই তারা কিছুটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়েন।
এর মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলা ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও রাজবাড়ী জেলায় জয়ের রেকর্ড নেই। একমাত্র ২০০৮ সালের নির্বাচনে ফরিদপুর-৩ (সদর) আসন থেকে জামায়াতের প্রয়াত সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ উল্লেখযোগ্য ভোট পান। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি ৩০ হাজার ৮২১ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন। যেখানে আওয়ামী লীগের ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন পান ১ লাখ ২২ হাজার ৪৭ ভোট। বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ ৭৬ হাজার ৪৭৮ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন।
ঢাকা সিটি করপোরেশনভুক্ত আসনগুলোতেও জামায়াতের উল্লেখ করার মতো ভোট নেই। চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার মধ্যে কক্সবাজারের দুটি, চট্টগ্রামের একটি ও কুমিল্লার একটি আসনে অতীতে জয়ের রেকর্ড আছে জামায়াতের। এর মধ্যে চট্টগ্রাম-১৪ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) সীমানা পুনর্বিন্যাসের পর চট্টগ্রাম-১৫ আসনে ৯১ ও ২০০১ সালে জয়ী হন জামায়াতের শাহজাহান চৌধুরী। পরে ২০০৮ সালে ১ লাখ ২০ হাজার ৩৩৯ ভোট পেয়ে জয়ী হন দলের নায়েবে আমির এম শামসুল ইসলাম। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এলডিপির প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমদ পান ৬৩ হাজার ৪১২ ভোট। এবার শাহজাহান চৌধুরীকে প্রার্থী ঘোষণা করে রেখেছে জামায়াত। এ আসনটিতে দলটির অবস্থান সুদৃঢ় বলা যায়।
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে ১৯৯১ সালে জামায়াতের হয়ে এমপি নির্বাচিত হন শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এনামুল হক মঞ্জু। আর ৯৬-এর নির্বাচনে ২৭ হাজার ৫৪ ভোট পেয়ে তিনি তৃতীয় হন। যেখানে বিজয়ী বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমেদ পান ৭২ হাজার ৫৯৪ ভোট। এবারও এই আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সালাহ উদ্দিন আহমেদ। এ আসনেও জামায়াতের মোটামুটি অবস্থান আছে।
কক্সবাজার-২ (কুতুবদিয়া ও মহেশখালী) আসনে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ২০০৮ সালের এমপি এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ। তাকে শক্তিশালী প্রার্থী মনে করছে দলটি। এছাড়াও কক্সবাজার-৩ (সদর, রামু, ঈদগাঁও) আসনেও জামায়াতের উল্লেখযোগ্য ভোট রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের আরেকটি জেলা কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) সাবেক কুমিল্লা-১২-তেও ২০০১ সালে এমপি নির্বাচিত হন দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। এ আসনে প্রতিটি নির্বাচনেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়ে আসছে জামায়াতের। এটি জামায়াতের অন্যতম ভোট ব্যাংক। এর বাইরে জেলার বাকি ১০টি আসনে অতীতের কোনও নির্বাচনেই তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারেনি দলটি।
অপরদিকে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনীতে সাংগঠনিক অবস্থান কিছুটা শক্তিশালী হলেও ভোটের পরিসংখ্যান তেমন সুসংহত নয়। চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতেও উল্লেখযোগ্য সাফল্য নেই তাদের।
সিলেট বিভাগের চারটি জেলার মধ্যে একমাত্র একটি আসনে অতীতে জয়ের রেকর্ড আছে জামায়াতের। মোটামুটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পেরেছে আরও একটি আসনে।
এর মধ্যে সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসনে ২০০১ সালে জয়ী হন দলের প্রার্থী মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী। তবে ২০০৮ সালে ৭৮ হাজার ৬১ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন তিনি। মহাজোটের প্রার্থী আওয়ামী লীগের হাফিজ আহমেদ মজুমদার ১ লাখ ৯ হাজার ৬৯০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। অবশ্য এবার সেখানে প্রার্থী বদল করে হাফেজ আনোয়ার হোসেন খানের নাম ঘোষণা করেছে জামায়াত।
আরেকটি আসন সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) এ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন। এ আসনটিতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় হওয়ার রেকর্ড রয়েছে জামায়াতের।
সিলেট বিভাগের বাকি তিনটি জেলা মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে তেমন উল্লেখযোগ্য ভোট নেই দলটির। তবে এবার হিন্দু অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে দলটির প্রার্থী হয়েছেন আলোচিত আইনজীবী শিশির মোহাম্মদ মনির। প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বারবার এখান থেকে নির্বাচিত হয়ে আসছিলেন। আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে শিশির মনির হিন্দুদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন। তবে অতীতে একবার ১৯৯৬ সালে একক নির্বাচনে দলটির প্রার্থী আবদুল মান্নান মাত্র ১ হাজার ১০৪ ভোট পান।
ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলার মধ্যে শুধু শেরপুর-১ (সদর) ও ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনে উল্লেখযোগ্য কিছু ভোট রয়েছে জামায়াতের। এর মধ্যে শেরপুর-১ আসনে জামায়াতের প্রয়াত সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়া মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ চারদলীয় জোট থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১ লাখ ১০ হাজার ৭০ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন। বিজয়ী প্রার্থী আওয়ামী লীগের আতিউর রহমান আতিক পান ১ লাখ ৩৬ হাজার ১২৭ ভোট। এছাড়াও ২০০১ সালেও জোটপ্রার্থী হিসেবে হেরে যান কামারুজ্জামান। আর ১৯৯৬ সালে একক নির্বাচনে ২১ হাজার ৭৭৮ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন। এবার এ আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি হাফেজ রাশেদুল ইসলামের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আর ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনে ২০০১ সালে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ৪৭ হাজার ৩৭৫ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন জামায়াতের মো. জসীম উদ্দিন। এর বাইরে জামালপুর ও নেত্রকোনাতেও দলটির উল্লেখ করার মতো ভোট নেই।
বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলার মধ্যে একমাত্র পিরোজপুর-১ (সদর, ইন্দুরকানী, নাজিরপুর) আসনে জামায়াতের শক্ত অবস্থান রয়েছে। ১৯৯৬ সালে একক ও ২০০১ সালে চারদলীয় জোটের হয়ে নির্বাচন করে জয়ী হন দলটির প্রয়াত সাবেক নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। তবে সর্বশেষ ২০০৮ সালে ৯৪ হাজার ৭১৪ ভোট পেয়ে তিনি হেরে যান। বিজয়ী আওয়ামী লীগের এ কে এম এ আউয়াল পান ১ লাখ ১ হাজার ৭১৪ ভোট। হিন্দু অধ্যুষিত এ আসনটিতে এবার জামায়াতের হয়ে লড়বেন সাঈদীর তৃতীয় ছেলে মাসুদ সাঈদী। পার্শ্ববর্তী পিরোজপুর-২ (কাউখালী, ভান্ডারীয়া ও নেছারাবাদ) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন দ্বিতীয় ছেলে শামীম সাঈদী। এ আসনটিতে দলটির তেমন ভোট নেই।
এর বাইরে বরিশাল-৫ (সদর) আসনে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল ও পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। এ দুটি আসনে দলটির ভোট একেবারেই সামান্য। এছাড়াও বরিশাল বিভাগের বরগুনা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি ও ভোলা জেলার আসনগুলোতে জামায়াতের তেমন ভোট নেই।
রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী জেলার দুটি আসনে জামায়াতের কিছু ভোট রয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে সর্বশেষ একক নির্বাচনে তৃতীয় হন দলের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। তিনি পান ২৮ হাজার ৪৫৩ ভোট। বিজয়ী বিএনপির ব্যারিস্টার আমিনুল হক পান ৮৩ হাজার ৯৯৪ ভোট। রাজশাহী-২ (সদর) আসনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৪১ হাজার ৭৭৪ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন জামায়াতের আতাউর রহমান।
নওগাঁ-২ (পত্নীতলা-ধামইরহাট) আসনে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ২৩ হাজার ভোট পেয়ে তৃতীয় হন জামায়াতের মোহাম্মদ মঈনুদ্দিন। যেখানে বিজয়ী বিএনপির শামসুজ্জোহা খান পান ৬২ হাজার ৫৯০ ভোট। নওগাঁ-৪ (মান্দা) আসনেও দলটির উল্লেখযোগ্য ভোট রয়েছে।
জয়পুরহাটের দুটি আসনের মধ্যে জয়পুরহাট-১ (সদর-পাঁচবিবি) আসনে ১৯৯৬ সালে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তৃতীয় হন দলটির প্রয়াত সাবেক ভারপ্রাপ্ত আমির আব্বাস আলী খান। তিনি পান ৩৭ হাজার ৭১৩ ভোট। বিজয়ী বিএনপির আব্দুল আলিম পান ৯০ হাজার ৭১৩ ভোট।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ৭৪ হাজার ১৪৪ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন জামায়াতের নজরুল ইসলাম। বিজয়ী বিএনপির শাহজাহান মিয়া পান ৯৩ হাজার ১১৯ ভোট। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনেও জামায়াতের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোট রয়েছে।
বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসন থেকে ১৯৯১ সালে নির্বাচিত হন জামায়াতের শাহাদাতুজ্জামন। সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে একক নির্বাচনে ২৪ হাজার ৫৯৩ ভোট পেয়ে তিনি দ্বিতীয় হন। যেখানে বিজয়ী বিএনপির এ কে এম হাফিজুর রহমান পান ৭৪ হাজার ৩৪৫ ভোট। বগুড়ার অন্য ছয়টি আসনেও জামায়াতের উল্লেখযোগ্য ভোট রয়েছে। তবে সেখানে বিএনপির সঙ্গে তারা কতটুকু কুলিয়ে উঠতে পারবেন সেটা বিশ্লেষণসাপেক্ষ।
পাবনার পাঁচটি আসনের মধ্যে তিনটিতেই জামায়াতের ভোট ব্যাংক আছে। এর মধ্যে পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়া) আসন থেকে ১৯৯১ সালে এককভাবে ও ২০০১ সালে চারদলীয় জোটের হয়ে নির্বাচিত হন দলটির সাবেক আমির ও মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া মতিউর রহমান নিজামী। সর্বশেষ ২০০৮ সালে ১ লাখ ২২ হাজার ৯৪৪ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন। বিজয়ী আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু পান ১ লাখ ৪৫ হাজার ১২ ভোট। এবার এ আসনে লড়বেন নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেন।
পাবনা-৪ (আটঘরিয়া-ঈশ্বরদী) আসনে ১৯৯৬ সালে এককভাবে অংশগ্রহণ করে ৩৫ হাজার ৫৯৬ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন জামায়াতের নাসির উদ্দীন। যেখানে বিজয়ী আওয়ামী লীগের শামসুর রহমান শরিফ পান ৬৬ হাজার ৪২৪ ভোট।
পাবনা-৫ (সদর) আসনে ১৯৯১ সালে জামায়াতের একক ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ চারদলীয় জোটের হয়ে নির্বাচিত হন মাওলানা আব্দুস সোবহান। তবে ২০০৮ সালে ১ লাখ ৪১ হাজার ৬৬৩ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন। বিজয়ী আওয়ামী লীগের গোলাম ফারুক প্রিন্স পান ১ লাখ ৬১ হাজার ৪১৩ ভোট।
সিরাজগঞ্জের ছয়টি আসনের মধ্যে একটি সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া-সলঙ্গা) আসনে জামায়াতের নির্দিষ্ট ভোট ব্যাংক রয়েছে। যেখান থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান।
খুলনা বিভাগের খুলনার দুটি, সাতক্ষীরার চারটি, যশোরের দুটি, বাগেরহাটের দুটি, ঝিনাইদহে একটি, মেহেরপুরের একটি ও চুয়াডাঙ্গার একটি আসনে দলটির ভোট ব্যাংক রয়েছে।
এর মধ্যে ২০০১ সালে খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসন থেকে চারদলীয় জোটের হয়ে নির্বাচিত হন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। সর্বশেষ ২০০৮ সালে ১ লাখ ৫ হাজার ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন তিনি। যেখানে বিজয়ী আওয়ামী লীগের নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬০ ভোট পান। হিন্দু অধ্যুষিত এ আসনটিতে ১৯৯৬ সালে এককভাবে জামায়াতের এএইচএম গাউসুল আজম পান মাত্র ১৫ হাজার ৯৬০ ভোট।
খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসন থেকে ১৯৯১ সালে একক ও ২০০১ সালে জোটগত নির্বাচনে জয়ী হন জামায়াতের শাহ মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস। তবে ২০০৮ সালে তিনি ১ লাখ ১৬ হাজার ১৬২ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন। বিজয়ী আওয়ামী লীগের সোহরাব আলী সানা পান ১ লাখ ৩১ হাজার ১২১ ভোট।
সাতক্ষীরার চারটি আসনেই জামায়াতের নির্দিষ্ট ভোট ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনটি ২০০১ ও ২০০৮ সালে জোটের শরিক বিএনপিকে ছেড়ে দেয়। ১৯৯১ সালে জয়ী হয় জামায়াত। সর্বশেষ একক ভোটে ১৯৯৬ সালে ৫০ হাজার ৫৪ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন দলটির প্রার্থী শেখ আনসার আলী।
সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনে ১৯৯১ ও ৯৬ সালে জয়ী হন জামায়াতের কাজী শামসুর রহমান। ২০০৮ সালে চারদলীয় জোটের হয়ে জয় পান দলের প্রয়াত নেতা আব্দুল খালেক মন্ডল। অবশ্য ২০০৮ সালের নির্বাচনে ১ লাখ ১৪ হাজার ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন তিনি। যেখানে জাতীয় পার্টির এম এ জব্বার ১ লাখ ৩৩ হাজার ভোট পেয়ে জয়ী হন।
সাতক্ষীরা-৩ (আশাশুনি, কালীগঞ্জ, দেবহাটা) আসনে ১৯৯১-তে একক ও ২০০১ সালে জোটের হয়ে নির্বাচিত হন এএ রিয়াছাত আলী বিশ্বাস। তবে ২০০৮ সালে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮০২ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন। বিজয়ী আওয়ামী লীগের আফম রুহুল হক ১ লাখ ৪২ হাজার ৭০৯ ভোট পান। সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর-কালীগঞ্জ) আসন থেকে ২০০১ সালে জয়ী হলেও ২০০৮ সালে ১ লাখ ১৭ হাজার ৬৭৫ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন জামায়াতের গাজী নজরুল ইসলাম। জয়ী জাতীয় পার্টির গোলাম রেজা পান ১ লাখ ৫১ হাজার ১৪৭ ভোট।
যশোর-১ (শার্শা) আসনে ২০০৮ সালে জোটের হয়ে জামায়াতের আজিজুর রহমান ৮৮ হাজার ৭০০ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন। বিজয়ী আওয়ামী লীগের শেখ আফিল উদ্দিন পান ৯৪ হাজার ৫৫৬ ভোট। এককভাবে ১৯৯৬ সালে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে নূর হোসেন পান ৩২ হাজার ২৯৪ ভোট।
যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা) আসনে ২০০১ সালে জোটের হয়ে বিজয়ী হন জামায়াতের আবু সাঈদ মোহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেন। তবে ২০০৮ সালে ১ লাখ ৩৩ হাজার ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন। যেখানে বিজয়ী আওয়ামী লীগের মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ পেয়েছেন ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৭৫ ভোট। এককভাবে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ৪৮ হাজার ৩৯৩ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন জামায়াতের প্রার্থী। যশোর-৬ কেশবপুরেও দলটির কিছু ভোট রয়েছে।
বাগেরহাটের চারটি আসনের মধ্যে দুটিতে জামায়াতের উল্লেখযোগ্য ভোট রয়েছে। এর মধ্যে বাগেরহাট-৩ (মোংলা-রামপাল) আসনে ২০০৮ সালে ৬৬ হাজার ১৭৭ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন জামায়াতের শেখ আবদুল ওদুদ। বিজয়ী আওয়ামী লীগের হাবিবুন নাহার পান ৯৭ হাজার ১৫ ভোট। এককভাবে ১৯৯৬ সালে জামায়াতের গাজী আবু বকর ৩৪ হাজার ৩২১ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন।
বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) আসন থেকে ১৯৯১ সালে একক ও ২০০১ সালে চারদলীয় জোট থেকে জয়ী হন মুফতি আব্দুস সাত্তার আকন। তবে ২০০৮ সালে তিনি হেরে যান। মেহেরপুরের দুটি আসনেই জামায়াতের কিছু ভোট রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা-২ (সদরের একাংশ ও জীবননগর) আসনে ১৯৯১ সালে বিজয়ী হন জামায়াতের হাবিবুর রহমান। তবে ২০০৮ সালে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪১৮ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন। যেখানে বিজয়ী আওয়ামী লীগের আলী আজগর টগর পান ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩২৩ ভোট। আর একক ভোটে ৯৬ সালে তৃতীয় হন জামায়াতের প্রার্থী।
ঝিনাইদহ-২ (শৈলকূপা) ও ঝিনাইদহ-৩ (কোটচাঁদপুর-মহেশপুর) আসনেও জামায়াতের উল্লেখযোগ্য ভোট রয়েছে। খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া, মাগুরা ও নড়াইলের আসনগুলোতে তেমন ভোট নেই দলটির।
রংপুর বিভাগের রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে তৃতীয় হন জামায়াতের প্রার্থী। জেলার বাকি পাঁটি আসনে তেমন ভোট নেই দলটির। আর গাইবান্ধার পাঁচটি আসনের মধ্যে তিনটিতে দলটির কিছু ভোট রয়েছে।
এর মধ্যে গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে ২০০৮ সালে ৭২ হাজার ৯৩ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন মাওলানা আব্দুল আজিজ। যেখানে বিজয়ী জাতীয় পার্টির আব্দুল কাদের খান পান ১ লাখ ৬০ হাজার ৮ ভোট। এর আগে ২০০১ সালে জয়ী হন জামায়াতের আব্দুল আজিজ।
গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্লাপুর-পলাশবাড়ী) আসনে ২০০৮ সালে জোটের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৭৬ হাজার ৪৬০ ভোট পান জামায়াতের নজরুল ইসলাম। বিজয়ী আওয়ামী লীগের ফজলে রাব্বি পান ১ লাখ ৭৯ হাজার ৮৫ ভোট।
গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনে ৭০ হাজার ১১১ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন জামায়াতের আব্দুর রহিম সরকার। যেখানে বিজয়ী মহাজোট প্রার্থী মনোয়ার হোসেন পান ১ লাখ ৪৫ হাজার ২০১ ভোট।
নীলফামারী-৩ (জলঢাকা) আসনে ১৯৯৬ সালে একক ও ২০০১ সালে জোটগত বিজয়ী হন জামায়াতের মিজানুর রহমান চৌধুরী। আর ২০০৮ সালে ৬৬ হাজার ৮৪৯ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন জামায়াতের আজিজুল ইসলাম। যেখানে বিজয়ী জাতীয় পার্টির কাজী মারুফ কাদের পান ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৮৮ ভোট। নীলফামারীর চারটি আসনের মধ্যে ২ ও ৩ আসনে জামায়াতের ভোট ব্যাংক আছে।
দিনাজপুরের ছয়টি আসনের মধ্যে দুটিতে জামায়াতের উল্লেখযোগ্য ভোট রয়েছে। এর মধ্যে দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসনে ২০০১ সালে জোটগতভাবে জয়ী হন দলটির প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কাফী। ২০০৮ সালে জোটের প্রার্থী হিসেবে ১ লাখ ৭ হাজার ১৬৮ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন দলটির প্রার্থী মোহাম্মদ হানিফ। অবশ্য ১৯৯৬ সালে ১৯ হাজার ৪৬৩ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন দলটির প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কাফী।
দিনাজপুর-৬ (নবাবগঞ্জ, বিরামপুর, হাকিমপুর ও ঘোড়াঘাট) আসনে ১৯৯১ ও ২০০১ সালে জয়ী হন জামায়াতের আজিজুর রহমান চৌধুরী। ২০০৮ সালে ১ লাখ ৩২ হাজার ৭৫২ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন জামায়াতের আনওয়ারুল ইসলাম।
এছাড়াও রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলার কয়েকটি আসনে জামায়াতের কিছু ভোট থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলার মতো তেমন অবস্থান নেই।
রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের মন্তব্য
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবির) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জামায়াত একটি গণহত্যাকারী শক্তি। তারপরও তারা দেশে রাজনীতি করছে এটা খুবই দুঃখজনক। তবে আমি মনে করি, দেশের মানুষ তাদের ভোট দেবে না। তাই তারা নানা ধরনের তৎপরতা চালিয়ে ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করবে; যা পরবর্তী সময়ে নিজেদের জনপ্রিয়তা বলে প্রচার করতে পারে।’
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জামায়াত আগামী নির্বাচনে কতটুকু ভালো করবে তা ভোটেই বোঝা যাবে। তবে তাদের কিছু ভোট বাড়তে পারে। যদিও তারা ক্ষমতায় যাওয়ার মতো বাস্তবতা এখনও তৈরি হয়নি। আর মানুষ কোনও চরমপন্থাকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখবে, এখনও সেই পরিবেশ তৈরি হয়নি। বিশেষ করে তাদের অতীত ভোটের পরিসংখ্যানও তাই বলে।’
আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বাংলা ট্রিবিউন বলেন, ‘অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, দেশের মানুষ ক্ষমতার রাজনীতির বিরুদ্ধে সবসময় রায় দেয়। যেমন ৯১-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একটু অবস্থান ভালো থাকায় দলটির নেতারা ধরেই নিয়েছিলেন তারা ক্ষমতায় আসছেন। কিন্তু নিরপেক্ষ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়ে জনগণ বিএনপিকেই বেছে নিয়েছেন। ঠিক এবার বিএনপি নিজেদের ক্ষমতার কাছাকাছি মনে করলে, আর বিষয়টি জনগণ বুঝতে পারলে তা ভিন্ন আবহ তৈরি করতে পারে। তখন অতীতের ভোট প্রাপ্তির পরিসংখ্যান বিবেচনায় না এনে জামায়াতকেও বেছে নিতে পারে।’