Image description
♦ এখন পর্যন্ত যাচ্ছে ৮৮ দেশে ♦ পাঁচ বছরে বাড়বে ৮ গুণ ♦ তৈরি হচ্ছে ৪৭ কোটি ডলারের বাজার

রপ্তানির বাজারে নতুন সম্ভাবনা মেড ইন বাংলাদেশের খেলনাসামগ্রী। একসময় চীনের ওপর নির্ভরশীল ছিল খেলনার বাজার। এখন কাঁচামাল আমদানি করে বিভিন্ন ধরনের খেলনা দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পোশাকের পর খেলনা শিল্প মেড ইন বাংলাদেশের বড় ব্র্যান্ড হতে পারে।

বর্তমানে বিশ্বের ৮৮টি দেশে বাংলাদেশের খেলনা রপ্তানি হয়ে থাকে। তবে বিশ্ববাজারের তুলনায় রপ্তানি অনেক কম। বিশ্বে খেলনার বাজার ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি হলেও বাংলাদেশের রপ্তানি ৭৭ মিলিয়ন ডলার। এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ে নীতি সহায়তা পেলে ২০৩০ সালের মধ্যে এ বাজার ৮ গুণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে বিশ্বের খেলনা বাজারের ৮০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে চীন। তবে মজুরি বেড়ে যাওয়ায় তারা ধীরে ধীরে নিম্নমানের খেলনা উৎপাদন থেকে সরে আসছে। ফলে বাংলাদেশের জন্য তৈরি হচ্ছে নতুন সুযোগ। বর্তমানে দেশে এ খাতে বিনিয়োগ ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশের খেলনাসামগ্রী রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৫ দশমিক ২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮৮টি দেশে রপ্তানি হয় ৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০৩০ সালে এই রপ্তানির আকার বেড়ে দাঁড়াতে পারে প্রায় ৪৭ কোটি ডলার। ফলে বৈশ্বিক খেলনা রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান হবে ২৮তম।

বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং জালালাবাদ পলিমারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম আহমেদ বলেন, প্লাস্টিক খাতে বাংলাদেশে প্রায় ৫ হাজারের মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে ২৫০টি খেলনাসামগ্রী উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। এ খাতে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন মানুষ কর্মরত রয়েছেন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে খেলনাসামগ্রী রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৫.২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮৮টি দেশে রপ্তানির মাধ্যমে তা ৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পণ্যের মান নিশ্চিতকরণ, অপ্রতুল অবকাঠমো, গবেষণা কার্যক্রমের অনুপস্থিতি এবং নতুন পণ্যের ডিজাইন উদ্ভাবনে পিছিয়ে থাকায় এ খাতের সম্ভাবনা থেকে আমরা পিছিয়ে আছি। এ খাতের উন্নয়নে প্রশিক্ষণ প্রদান, জয়েন্ট ভেঞ্চার বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা, অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন, খেলনাসামগ্রী শিল্পের নীতিমালা প্রণয়ন, পণ্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির ওপর সম্পূরক শুল্ক কমানো প্রয়োজন। রেডমিন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল ইসলাম বলেন, খেলনা রপ্তানির জন্য আমাদের আলাদা বাজার চিহ্নিত করতে হবে। দেশে তৈরি কিছু পণ্য কম মানের হলেও বিক্রি করা যায়। তবে বিশ্ববাজারে পণ্যের মান সর্বোচ্চ রাখতে হবে।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের বিষয়টি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ হলেও বিগত বছরগুলোতে আমাদের রপ্তানি গুটিকয় পণ্যের ওপর অধিকমাত্রায় নির্ভরশীল ছিল। খেলনাসামগ্রী রপ্তানির বৈশ্বিক বাজার ১০২ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যেটি ২০৩০ সালে ১৫০ বিলিয়নে পৌঁছাবে, সেখানে এ খাতে আমাদের রপ্তানি মাত্র ৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। নীতিসহায়তা পেলে এ খাত দেশের রপ্তানিতে বড় ভূমিকা রাখবে।

এনবিআরের সদস্য মুহাম্মদ মুবিনুল কবীর বলেন, এলডিসি পরবর্তী সময়ে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি সম্ভাবনাময় অন্যান্য খাতের ওপর নজর দিতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সংশ্লিষ্ট নীতিমালা সহজ করার জন্য ও বন্ডেড সুবিধা প্রদানে কাজ করে যাচ্ছে। গত ৪০ বছর তৈরি পোশাক খাতে সহায়তা দেওয়া হলেও এ খাতের সক্ষমতা কতটুকু বেড়েছে তা নিয়ে চিন্তার সময় এসেছে। তাই খেলনা শিল্পের উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা প্রাপ্তির চেয়ে নিজেদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানো এবং পণ্যের উদ্ভাবনী কার্যক্রমে বেশি হারে মনোযোগী হতে হবে।