Image description

এক সময়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন পঞ্চাশোর্ধ আলেপ মৃধা। ঘামঝরা পরিশ্রমে চার ছেলে-মেয়েকে মানুষ করেছেন তিনি।

অথচ সেই সন্তানদের কাছেই এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেন এই মানুষটি। জীবনের শেষ প্রহরে এসে তাঁর কপালে জুটেছে নিদারুণ কষ্টের গল্প। স্ট্রোকজনিত অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে গত আড়াই বছর ধরে ফুটপাতেই চলছে তার জীবন-সংসার। তবুও সন্তানদের কাছে আর ফিরতে চান না তিনি। তাঁর আকুতি, অনুযোগ, সব মিলিয়ে যেন এক আর্তনাদে ধ্বনিত হয়—‘মইরা যাওয়াই ভালো ভাই!’

ফরিদপুর শহরের সরকারি সার্কিট হাউস সংলগ্ন সড়কের পাশে দেখা মেলে এই দম্পতির। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বাসভবনের সামনেই মাদুর বিছিয়ে দুই মাস ধরে রয়েছেন তারা। এর আগে শহরের বিভিন্ন জায়গায় একইভাবে কাটিয়েছেন দিনরাত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আলেপ মৃধা ফরিদপুর শহরতলীর শোভারামপুর স্লুইসগেট এলাকার মৃত মঙ্গল মৃধার ছেলে। ছয় বছর আগে তার প্রথম স্ত্রী রেনু বেগম ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে আলমগীর মৃধা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান, ছোট ছেলে রানা মৃধা ফুটপাতে ব্যবসা করেন। দুই মেয়েই স্বামীর সংসারে।

তিন বছর আগে স্ট্রোক করে শরীরের এক পাশ অচল হয়ে যায় আলেপ মৃধার। তার অভিযোগ, দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকে সন্তানদের নির্যাতনের শিকার হয়ে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার রাতে দেখা যায়, খোলা আকাশের নিচে বসে শিল্পী বেগম পরম যত্নে অসুস্থ স্বামীকে খাইয়ে দিচ্ছেন। খাবার হিসেবে শুকনো খিচুড়ি দিয়ে গেছেন কোনো এক দয়ালু মানুষ।

অসুস্থ আলেপ মৃধা অস্পষ্ট কণ্ঠে বলতে থাকেন— আগে আমি অটো চালাইতাম। আমার ছাওয়াল-মাইয়্যারা খাবার দেয় না। কেউ ভাত দেয় না ভাই। গতকাল থেইক্যা না খাইয়া আছি। আমার এক সাইড পড়া, হাঁটতে পারি না। আমার কপালে কি কষ্ট! মইরা যাওয়াই ভালো ভাই!

অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, ছেলে-মেয়ে আর মেয়ে জামাই মেরে তাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের। স্ত্রীকে ইশারা করে বলেন— বাড়িতে গেলেই ওরে মারে। আমি ওই বাড়ি আর থাকব না।

এ বিষয়ে কথা হয় বড় মেয়ে শাবনুর বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রথম স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থাতেই বাবার দ্বিতীয় বিয়ে। এরপর থেকেই তিনি আলাদা হয়ে যান। শাবনুরের ভাষ্য— ওই বউ ছাড়া কিছুই বোঝে না। আমাদেরও দেখতে পারত না। আমার মা বিভিন্ন বাসায় কাজ করে আমাদের বড় করেছে। এই বউয়ের কারণে সব জমিজমা বিক্রি করেছে। এখন সরকারি জায়গায় থাকি। এসব কারণে আমার মা মারা গেছে। তবে মারধরের অভিযোগ মিথ্যে। আমরা অনেকবার গিয়েছি নিতে, যায় না। গেলে কিছুদিন থেকে আবার চলে যায়।

এ প্রসঙ্গে তরুণ সমাজকর্মী আবরার নাদিম ইতু বলেন, আমি খোঁজ নিয়েছি। ছেলের সাথেও কথা হয়েছে। পারিবারিক কিছু ঝামেলা আছে। আমরা সমাজসেবার সঙ্গে যোগাযোগ করে একটা সমাধানের চেষ্টা করব।

ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন, বিষয়টি আপনার মাধ্যমেই জানলাম। খোঁজ নিয়ে দ্রুত একটা ব্যবস্থা করা হবে।