
রাজধানী ঢাকায় মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটি এই সময়ে দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টি। আর ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে বৃষ্টি হয়েছে ২০৩ মিলিমিটার। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বৃষ্টিপাতের ধরন অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টায় হওয়া ২০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতকে অতি ভারী শ্রেণির বৃষ্টিপাত বলা হয়। টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকায় তীব্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। রাস্তা-ঘাটে পানি জমে যান চলাচলে দেখা দেয় দুর্ভোগ।
বুধবার ঢাকার বিভিন্ন এলাকা- পল্টন, রামপুরা, কাকরাইল, নিউমার্কেট, মগবাজার, মিরপুর, মতিঝিল, শান্তিনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বিরামহীন বৃষ্টিতে রাজধানীর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে হাঁটুসমান পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন ওই সকল এলাকার মানুষজন। বিভিন্ন যানবাহনের হাঁটুসমান পানিতেই চলতে দেখা গেছে। যে সকল বেসরকারি পেশাজীবী মানুষজন সকালে কর্মক্ষেত্রে যান, তারা বেশি ভোগান্তিতে পড়েন। তবে, সকালে সড়কগুলো পানিতে ডুবে থাকলেও বেলা গড়াতেই কমতে থাকে পানি।
মিরপুর এলাকার বাসিন্দা ইমাম হাসান অমি বলেন, মিরপুরের কিছু এলাকা এমনিতেই একটু নিচু। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানিতে ডুবে যায়। আজ তো ঢাকায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে। মিরপুর এলাকা যেন সমুদ্র হয় গেছে। বাসার বারান্দা থেকে পানির পরিস্থিতি দেখে আর বাসা থেকে বের হওয়ার ইচ্ছে হয়নি। নিউমার্কেট এলাকায় বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন একজন। গন্তব্য বসুন্ধরা। জলাবদ্ধতার বাগড়ায় আটকে ছিলেন এক জায়গায়। ওই যাত্রী বলেন, আগে আগে বের হয়েছি দূরে যাবো বলে। রাস্তায় বের হয়ে দেখি এখন হাঁটার মতো পরিস্থিতিই নেই। ঠিকমতো দাঁড়ানো যাচ্ছে না, রাস্তার ময়লা পানি আবার গায়ে এসে পড়ছে বার বার। ভারী বৃষ্টিপাতের মধ্যে চলাচলের কারণে গাড়ির ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বিকল হয়ে যায় কিছু কিছু গাড়ি। সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মনির হোসেন কাজীপাড়া এলাকায় গাড়ি বিকল হয়ে আটকে ছিলেন। তিনি বলেন, মিরপুর-১০ থেকে কোনোমতে পানি ঠেলে এ পর্যন্ত এলাম। কিন্তু রাস্তায় পানি বেশি থাকার কারণে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেছে। এখন টেনে টেনে নিতে হচ্ছে।
৪ দিনের ছুটি, বৃষ্টি মাথায় ঢাকা ছেড়েছে ঘরমুখো মানুষজন: দুর্গাপূজা ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলে টানা চারদিনের ছুটিতে রাজধানী ছাড়ছেন নাগরিকরা। বুধবার ভোরে রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ও আশপাশের এলাকায় ঢাকা ছাড়তে যাত্রীদের আনাগোনা দেখা গেছে। বৃষ্টির কারণে যাত্রীর সংখ্যা কম বলে জানিয়েছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। ভোর থেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে অনেক যাত্রী বাসের জন্য সায়েদাবাদ ও এর আশপাশে বাসস্ট্যান্ডগুলোতে আসতে থাকেন। ক্রমে বৃষ্টি কমার সঙ্গে বেড়েছে যাত্রীদের সংখ্যাও। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় জোনাকি সার্ভিসের টিকিট কাউন্টারে দায়িত্ব পালনকারী মোর্শেদ আলম বলেন, আমাদের গাড়ি নোয়াখালী, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর এলাকায় চলাচল করে। আজ কিছু যাত্রী আছে। ছুটির হিসাবে খুব বেশি চাপ নেই। মূলত বৃষ্টির কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারেনি। আশা করছি, বৃষ্টি থেমে গেলে যাত্রী বাড়বে। পরিবার নিয়ে পূজার ছুটিতে গ্রামে যাবেন অঙ্গন পাল। শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ডের হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি, অপেক্ষা করছিলেন গাবতলী পর্যন্ত যাওয়ার কোনো যানবাহন পাওয়া যায় কিনা। তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে পূজার ছুটি কাটাতে বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হলাম। কিন্তু এখন হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে আছি। নারী-শিশুদের নিয়ে বিপাকে আছি।
ওদিকে, সোমবার রাতে বৃষ্টির আগাম বার্তা দিয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ দল (বিডব্লিউওটি) বলেছিল, দেশের ওপর ধেয়ে আসছে একটি শক্তিশালী মৌসুমি বৃষ্টিবলয় প্রবাহ। এটি ৩০শে সেপ্টেম্বর রাত থেকে শুরু হয়ে ৫ই অক্টোবর পর্যন্ত দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতে পারে।