
মুন্সীগঞ্জকে বলা হয় নদীনির্ভর জেলা। এখানে বহু নদী প্রবাহিত হয়েছে। পদ্মা, মেঘনা, ধলেশ্বরী, শীতলক্ষ্যা, ইছামতি, কালীগঙ্গা, গজারিয়া নদী (মেঘনার শাখা), কাজলরেখা, রজতরেখা নদীর পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য ছোট নদী ও খাল। মুন্সীগঞ্জের চারপাশ নদীবেষ্টিত হওয়ায় নৌপথে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। নদী দখল, দুষণ, বালুখেকোদের কবলে পড়ে বিপর্যস্ত মুন্সীগঞ্জ।
গত কয়েকদিন নদী পাড়ের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় নদী ও বালুখেকোদের উৎসব চলছে রীতিমতো। নদী রক্ষা কমিশনের করা নানা সময়ের তালিকায়ও উঠে এসেছে দখলের এই ভয়ঙ্কর তথ্য। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ২০১৯ ও ২০২৩ সালে নদী দখলদারকে তালিকা প্রকাশ করে পরে অজ্ঞাত কারণে তা সরিয়ে ফেলে। ওই তালিকা অনুযায়ী দখলদার প্রতিষ্ঠান ব্যক্তির তালিকায় ছিল- গজারিয়া উপজেলায় পশ্চিম বাহেরচরে নারায়ণগঞ্জ ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড শিপ বিল্ডিং লি., সাকিরগাঁও এলাকায় সুপারবোর্ড মিলস লি., সুপার ফরমিকা এন্ড লেমেলিশন লি., সামুদা কেমিক্যাল কমপ্লেক্স লি., আনোয়ার জুট শিপনিং মিলস লি., রঘুরচর এলাকায় বেঙ্গল এনার্জি লিঃ। ব্যক্তি পর্যায়ে এই এলাকায় দখল করেছেন মিন্টু দেবনাথ (মুদি দোকান), মো. জিল্লু খান (মিষ্টির দোকান), সৈয়দ শাহ আলম (কসমেটিক দোকান), আ. রহমান (কসমেটিক দোকান)। বেলতলী এলাকায় খাল দখল করে বাড়ি নির্মাণ করেছেন এমদাদ মোল্লা ও মো. স্বপন, সিংপাড়া এলাকায় আবুল বাসার। রাঢ়ী এলাকায় খাল দখল করে বাড়ি নির্মাণ করেছেন নার্গিস, ঠান্ডু, কামাল হাওলাদার, সিরাজ বেপারী, সালাম, কাড়াল, সোনা মিয়া সেক, ছালাম চোকদার, সোনা মিয়া সেক, ছালাম চোকদার, মরিয়ম বিবি, জালাল সেক, ওসমান, আমজাদ সিপাই, হালেম সেখ, সুমন মাদবর।
গজারিয়া উপজেলার নয়ানগরে নদী দখল করে গড়ে উঠেছে থ্রি এ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেড। পাশেই চলছে বালু উত্তোলন, নদী দখল। দেদারছে বর্জ্য মিশছে নদীর পানিতে। থ্রি এ্যাঙ্গেলের বিরুদ্ধে দেদার অভিযোগ থাকার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী প্রশাসন। বরং তাদেরকে পুরস্কৃত করেছিল। ২০২১ সালে মুন্সীগঞ্জের শীর্ষ নদী দখলকারী হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পরও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নতুন জাহাজ নির্মাণ চুক্তি করেছিল।
আওয়ামী লীগ আমলে এসব নদী দখলের তালিকা প্রকাশ করার পরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং একপর্যায়ে তালিকা হাওয়া করে দেয়া হয়।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মিরেরসরাইয়ে গড়ে উঠেছে শাহ সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লি.। অনেকটা নদীর মাঝে গড়ে ওঠা এই কারখানা নিয়ে পরিবেশবাদীদের আপত্তি দীর্ঘদিনের। প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব পণ্য পরিবহনের জন্য নদীর উপর বসিয়েছে জেটি। মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন এবং জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে দখলদার হিসেবে চিহ্নিত করলেও এখন পর্যন্ত নদী রক্ষায় হয়নি কার্যকর পদক্ষেপ।
চলতি বছরের ১লা জুন সরব হয়েছিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। তারা গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় জানায়, শাহ সিমেন্ট কোম্পানি প্রায় ২৪ একর নদীর জমি বালু ও মাটি ফেলে ভরাট করেছে। ফলে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে এবং নদীর শ্রেণি পরিবর্তন হয়েছে। দখল করা জমিতে গড়ে ওঠা স্থাপনা ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যার পানিপ্রবাহে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। এ ছাড়া, কারখানার তরল ও কঠিন বর্জ্য নদীতে ফেলার ফলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ক্লিংকার ধুলো বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে নদীতে গিয়ে মিশে পরিবেশ দূষণ করছে।
মুন্সীগঞ্জে নদী দখলদারের পাশাপাশি বালুর ব্যবসাও রমরমা। বালু উত্তোলনে সরকার নির্ধারিত স্থানের থোড়াই পাত্তা দেন তারা। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা ও গজারিয়ায় দুই কিলোমিটার এলাকা ঘুরে প্রায় ৫০টির মতো বালু তোলার ভেকু দেখতে পাওয়া যায়।
মুন্সীগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মেয়র মোহাম্মদ ফয়সালের ছায়াতলে ও সহযোগিতায় নদীদখলের উৎসব হয়েছে। বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ করতো নয়ন ও পিয়াস নামে দুই ভাই। তারা আওয়ামী লীগ পতনের পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছে। তারা এতটাই ভয়ঙ্কর ছিল যে, পুলিশের ফাঁড়িতেও হামলা করেছিল। বর্তমানে বালু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন কিবরিয়া মিজি। লিজে বালু তোলার কাজ করলেও রাতের আঁধারে কিংবা প্রকাশ্যেই বর্তমানে নির্ধারিত স্থানের বাইরে থেকে বালু উত্তোলন করছেন তিনি।
গত সপ্তাহে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদীতে বালুমহাল নিয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শুটার মান্নান নিহত হয়। গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের বড় কালীপুরা গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীতে এ ঘটনা ঘটে। শীর্ষ সন্ত্রাসী নয়ন-পিয়াস গ্রুপের লালু-জুয়েল তাকে হত্যা করেছে বলে দাবি নিহতের স্বজনদের। গত এক বছরে বালু নিয়ে এ এলাকায় ১০টির মতো হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।
মুন্সীগঞ্জের পঞ্চসার এলাকায় এক বালু ব্যবসায়ী আকমল হোসেন বলেন, বালু হচ্ছে- কাঁচা টাকা। যে যতটা ভেকু বসাতে পারে। কারও কিছু বলার নাই। বালুর টাকা সব জায়গায় যায়। ব্যবসায় কোনো আওয়ামী লীগ-বিএনপি নাই।
বালুশ্রমিক মো. হাসান। দৈনিক ৮০০ টাকা বেতনে চাকরি করেন। তিনি জানান, নদীদখল আর বালু কাটার কারণে ভাঙন বাড়ছে। আমাদের নিজের গ্রামও যে কোনো সময় নদীতে চলে যেতে পারে। তিনি বলেন, আমার করার কিছুই নাই। ভাতের জন্য কাজ করি। কী করবো নিজের কোনো জমিজমা নাই।
নদী পাড়ের এলাকাবাসী বলছেন, দখলদাররা ভয়ঙ্কর তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা দায়। স্থানীয় বাসিন্দা নিয়ামত আলী বলেন, আগে নদীর মাছ খেতাম নিয়মিত। এখন নদীর পাড়ে থেকেও আমাদের চাষের মাছ খেতে হয়। এখন নদীতে পানি বেশি, যখন কমে যায় তখন একেবারেই মাছ পাওয়া যায় না। নদীতে মাছ মরে ভেসেও থাকে। নদী দখল হচ্ছে চোখের সামনে কিন্তু কোনো কথা বলা যায় না।
এলাকাবাসী নদী রক্ষায় নিজস্ব উদ্যোগও নিয়েছিলেন। ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ রজতরেখা নদীর উৎসমুখ খুলে দিয়ে নদীর জীবন ফিরিয়ে আনতে কাজ করেন তারা। কিন্তু নানান জটিলতায় এ উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি। নদীর মুখে পূর্বরাখি বাঁধ দিয়ে প্রবাহ বন্ধ করায় অস্তিত্ব সংকটে পড়ে নদীটি। বাঁধের কারণে নদীস্রোত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। নদীটি এখন অস্তিত্ব সংকটে। এমনকি ব্যবহার হচ্ছে বাজারের বর্জ্য ফেলার কাজে। গড়ে উঠেছে স্থাপনা। একসময় নদী দিয়ে নৌকা চলাচল করতো। এখন বদ্ধ খাল বললেও ভুল হবে না।
স্থানীয় বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, নদীদখল ও দূষণের কারণে স্থানীয় জমির উর্বরতা কমে গেছে। ধান ও আলু চাষ করতাম। এখন আবাদ কমে গেছে। অধিক পরিমাণে সেচ দিতে হয়। আর পানি নেমে যাওয়ার রাস্তা না থাকায় ধান আবাদ করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
মাছের কথা জানতে চাইলে বলেন, এখানে আগে জাল ফেললে ভরে মাছ উঠতো। এখন মাছ বিক্রির জো নেই। কৃষি কাজের পাশাপাশি মাছ ধরার কাজ করেন মো. মিজান। তিনি বলেন, এখন যে অবস্থা মাছ তো পাওয়াই যায় না। আর কৃষির পরিস্থিতি আবাদ বন্ধ করে দেয়ার মতো। কয়দিন পর মজদুরি করা লাগবে।
মুন্সীগঞ্জ শহরের পাশ দিয়ে একসময় শতবর্ষী কাটাখালী খাল প্রবাহিত হতো। শহরের পানি নিষ্কাশনের প্রধান মাধ্যম ছিল এই খাল। বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনের ফলে শহর জলাবদ্ধতা থেকে অনেকটা রক্ষা পেতো কিন্তু এখন সেই খাল প্রায় হারিয়ে গেছে। প্রভাবশালী মহলের ব্যক্তিগত স্বার্থে খালের জায়গা দখল হয়ে যাচ্ছে। খালের পানি দূষিত হচ্ছে। একসময় যে খাল শহরকে বাঁচাতো, এখন তার অস্তিত্বই সংকটে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পৌরসভা কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব পালন করছে না। সময়মতো উদ্যোগ না নেয়ায় খাল রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। ফলে শহরের মানুষকে এখন জলাবদ্ধতার যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে। খালটি ভরাট করে দখলের অভিযোগ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল হাসানের বিরুদ্ধে। এলাকাবাসী জানান, এই খাল দিয়েই শহরের পানি নামতো। এখন পানি নামতে না পারায় জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।
খালটি প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ। খালটি দখল করে প্রথমে নালা বানানো হয়। এরপর তাতে ড্রেনেজের ব্যবস্থা করা হয়। বর্তমানে যে যেভাবে পারছে দখল করছে খাল। প্রায় ডোবায় পরিণিত হয়েছে খালটি। এখনো চলছে বাড়ি বানানোর কাজ। রাস্তার পাশেও ফেলা হচ্ছে বালু। নেই পানি প্রবাহ।
শওকত মিয়া বলেন, এই খাল আগে নদীর মতো বড় ছিল। নৌকা চলতো। এখন যে যার মতো দখল করছে। নাজমুল হাসানের লোকদের ভয়ে কেউ কোনো কথা বলে না। এলাকাবাসী জানান, নাজমুল হাসান এই এলাকায় বালুর ব্যবসায়ীদের দেখভাল করতেন। আওয়ামী লীগ আত্মগোপনের যাওয়ার পর প্রভাব কমেছে। তবে এখনো সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে তার অধীন লোকেরা। বর্তমানে যেভাবে পারছেন দখল করে স্থাপনা তৈরি করছেন।
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য অধিগ্রহণ করা জমি ও নির্মাণ করা বাঁধ ঘেঁষেই মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। দীর্ঘ একমাস ধরে ড্রেজার দিয়ে বেপরোয়াভাবে লাগাতার চলছে বালু উত্তোলন। এতে ধসে পড়তে শুরু করেছে প্রকল্প রক্ষাবাঁধ। বিলীন হুমকিতে প্রকল্পটি। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পের বাঁধ ঘেঁষে যেভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, তাতে যেকোনো দিন প্রকল্প রক্ষাবাঁধ ভেঙে বিলীন হতে পারে ভরাট জমি।
মুন্সীগঞ্জ ও গজারিয়ার শিল্পকারখানায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা এবং সরকারের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ২০১৬ সালে ৩৫০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এ প্রকল্পের জন্য গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নে মেঘনা নদীর তীরে ষোলআনি ও দৌলতপুর দু’টি মৌজায় ২৫৪.০১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। পরে কেন্দ্রটি ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার করার সিদ্ধান্ত হয়।
সরজমিন প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্প রক্ষাবাঁধের ৮০ থেকে ১০০ ফুটের মধ্যেই বেশ কয়েকটি ড্রেজার চলছে। অপেক্ষা রয়েছে বেশ কয়েকটি বাল্কহেড। রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের এক কর্মকর্তা বলেন, আওয়ামী লীগের সময় বালু উত্তোলন হয়েছে কিন্তু প্রকল্প থেকে দূরে। এখন প্রকল্পের পাশেই চলছে বালু উত্তোলন। অভিযোগ রয়েছে এই বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ করছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা। এদিকে অবৈধভাবে বালুকাটা বন্ধে প্রায়শই অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানান মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক ফাতেমাতুল জান্নাত। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট সীমানার বাইরে গিয়ে কোনো অবস্থাতেই বালু উত্তোলন করা যাবে না। যদি কেউ সীমা লঙ্ঘন করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মুন্সীগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির বলেন, নদী দখল ও বালুমহাল নিয়ে আমরা সবসময় তৎপর আছি। আমরা নৌ-পুলিশের সঙ্গে নিয়ে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। আমরা এই তৎপরতা কমাতে সর্বোচ্চ সচেষ্ট রয়েছি। গত শুক্রবার রাতেও অভিযান হয়েছে। আমরা নদী রক্ষায় সচেষ্ট আছি।
গত ২৪শে সেপ্টেম্বর মেঘনা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসককে (ডিসি) লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. সোলায়মান (তুষার) মুন্সীগঞ্জের জনৈক মো. কামাল হোসেনের পক্ষে ডাক ও ই-মেইলে জনস্বার্থে এ নোটিশ পাঠান। নোটিশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি এ সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় হাইকোর্টে রিট দায়েরসহ অন্যান্য আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, সরকারি অনুমোদিত বালুমহালের সীমানা ছাড়িয়ে কালিরচর মৌজার ভেতর, ফসলি জমি ও বসতবাড়ির কাছে বালু তুলছিলেন ইজারাদারদের লোকজন। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বালুর মহাল ভাসানচর মৌজায়, কিন্তু ওরা কাটছে কালিরচরের জমি। এখানে তিন ফসলি জমি রয়েছে। এলাকাবাসী বলেন, আমরা গরিব মানুষ। বাড়িঘর ভেঙে গেলে কোথায় থাকবো? যারা বালু কাটে তারা প্রভাবশালী, আমাদের কথা কেউ শোনে না।
নোটিশে বলা হয়, মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা মেঘনা নদী এখন অবৈধ অস্ত্র প্রশিক্ষণ এবং বালি সন্ত্রাসীদের আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। নদীর তীরবর্তী অসংখ্য গ্রাম শত শত খননকারীর গর্জনে দিনরাত কাঁপছে। ফসলি জমি, মসজিদ, মাদ্রাসা এবং শত শত বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। তবুও প্রশাসন নীরব দর্শক।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বাংলাবাজার এলাকার মানুষ রয়েছেন নদী ভাঙনের শঙ্কায়। রঞ্জন সেন বলেন, এই গ্রামে এই বছর ৩০ টার মতো বাড়ি ভাঙছে। এখন একটা মসজিদ, মন্দির আর একটা স্কুল যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে।
সদর উপজেলার শিলই ইউনিয়নের পূর্ব রাখির কান্দি এলাকায় পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। তাদের দাবি, এই এলাকার প্রায় ৩শ একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মুন্সীগঞ্জ জেলা সভাপতি এডভোকেট মজিবুর রহমান বলেন, আমরা যারা নদীকে ভালো রাখতে চাই। আর দখলদাররা চায় নদী মরে যাক। মুন্সীগঞ্জে যারা যখন ক্ষমতায় থাকে প্রশাসন তাদের সহায়তা করে। বিভিন্ন কারখানাগুলো ইটিপি সিস্টেম ব্যবহার করে না। তারা দূষণকারীদের কাছে ঘুষ নিতে ব্যস্ত থাকে।
তিনি বলেন, আমরা চাই নদী বিশেষজ্ঞদের দ্বারা এলাইন্টমেন্ট করে বালুমহাল ইজারা দেয়া। পুলিশ প্রশাসন যেন যার টাকা তার না হয়ে জনগণের নদীর হয়। কাটাখালী খালের বিষয়ে তিনি বলেন, এই খালটা ইতিমধ্যে খুন করা হয়েছে। এই খালটা নিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টাও কথা বলেছেন। আমাদের দাবি এই খালটা যাতে খনন করে জীবন ফিরিয়ে দেয়া হয়। এই খালটা সোজা রজতরেখা নদীতে গেছে। এই খালটা রক্ষা হলে পরিবেশ রক্ষা হয়। আমাদের একটাই কথা, নদীর জায়গা কারও না। নদীর জায়গা নদীরই। নদী সরকারও ইজারা নিতে পারে না।