Image description

বিকেলে ঘর থেকে বেরিয়েছি, গাজীপুর যাব। আজকে পূজা শুরু। গাজীপুরে বাসান ও ভাওয়াল মির্জাপুর থানার দুটি পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করব। তারপরে বগুড়া যাব। আমার থানায় ৬৬টা পূজা মন্ডপ হয়েছে, যতগুলো পারি পরিদর্শন করব ও তাদের সাথে দেখা করব। এছাড়া নিজেরও কিছু কাজ আছে।

পথের মধ্যে শুনলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বিষয়ঃ নীলক্ষেতে ডাকসুর ব্যালট পেপার ছাপানো! দুইবার ডাকসুর ভিপি হয়েছি। কিন্তু আমি আসলে জানি না ডাকসুর ব্যালট পেপার ছাপানোর নিয়ম কী! এ নিয়ে যখন বিতর্ক চলছিল, তখন কিছু বলিনি। কারণ আমি আবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের অর্থাৎ চাকসুর জিএস ছিলাম। আমি জানি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রেস আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার ছাপার কাজগুলো কোথা থেকে করে জানি না। আমি বোধ করি, এটি হওয়ার কথা নিশ্চিতভাবে সরকারি বা অনুমোদিত কোনো প্রেস থেকে।

এইবারে যখন প্রশ্ন উঠল, তখন প্রথম থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ এটা অস্বীকার করতে লাগলেন যে, না! এরকম কিছুই হয়নি। মাঝখানে যিনি ডাকসু নির্বাচনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তিনি খানিকটা অদ্ভুত এবং অশ্লীল কথা বললেন! কেন নীলক্ষেত কি কোন রেড এরিয়া নাকি? নিষিদ্ধ পল্লী নাকি? যে ওখানে ছাপানো যাবে না। ভাষাটা ভালো লাগেনি। নীলক্ষেতে ছাপানোর জন্য আমরাও কখনো কখনো প্রয়োজনে যেতাম। নীলক্ষেতে যা ছাপানো হয়, তার মধ্যে ভালো-মন্দ দুই রকমই আছে। এক নাম্বারও আছে, দুই নাম্বারও আছে। এই বিতর্কে জড়াতে চাইনি।

কিন্তু আজকে এই গাড়িতে যেতে যেতে এই ব্যাপারে উপাচার্যের প্রেস ব্রিফ শোনার পর আমার মনে প্রশ্ন তৈরি হল। দেখলাম যে উনি বললেন, এটা তারা দুটি প্রেসকে ছাপতে দিয়েছিলেন, সেই প্রেস তাদের কোন অনুমতি ছাড়া সাব-কন্ট্রাকে দিয়েছিলো নীলক্ষেতের কোনো প্রেসকে। এই ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত লাগল। আমি যখন নিজে দু-একটা ব্যবসা করেছি, তখন দেখেছি, যে আমি যার কাজ নেব তার কাজ আমি সাব-কন্ট্রাক্টে করতে পারব কিনা সেটা মূল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। ডাকসু ইলেকশনের ব্যালট পেপার ছাপানোর মত কাজ, সেটা জানানোই হয়নি কর্তৃপক্ষকে ! এটাও মেনে নিতে হবে?

এতদিন পর জানানো হচ্ছে এবং তার চেয়ে একটা বিষয় লক্ষ্য করবার, এর ফলে যে কোন অনিয়ম হয়নি, ওই প্রতিষ্ঠান কোন অন্যায় কাজ করেনি, সব কাজ ঠিকঠাক মতো কাজ হয়েছে, সেই ব্যাপারে তিনি (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি) সার্টিফিকেট দিচ্ছেন। এই অভিযোগ তো অন্যান্যরা করেছে। একটি প্যানেল তো সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ গুলো করেছিল। তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গায়ে লাগায়নি। এখন গণমাধ্যমে রিপোর্ট হবার পর তারা সংবাদ সম্মেলন করে সাফাই গাইছেন!

 

একেবারে নিষ্কণ্টক, প্রশ্নের বাহিরে একটা ডাকসু নির্বাচনই আমরা দেখতে চেয়েছিলাম। যে অভিযোগগুলো উঠেছে তার তদন্ত হওয়া উচিত ছিল। এখন কোন তদন্ত ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর কি করে বললেন যে, সাব-কন্টাক্ট দিয়েছে আমাদের জানায়নি; কিন্তু তাতে কোন ভুল হয়নি; সবই ঠিকঠাক মত হয়েছে। তিনি আবার যুক্তি দেখাচ্ছেন! এটা গ্রহণযোগ্য নয়।

আমি দাবি করবো যে, এই কাজ তিনি কেন করলেন? ব্যালট ছাপানোর দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান যে এই কাজ করেছে, সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ কিনা? তার জন্য কি হবে সেটা স্পষ্টভাবে আমাদেরকে অর্থাৎ শিক্ষার্থী এবং দেশবাসীকে জানানো হোক এবং শিক্ষার্থীকে জানানো হোক। এই ব্যাপারে যথাযুক্ত তদন্ত করে আমাদের সন্তোষজনক জবাব দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। সবাইকে ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

লেখক: সাবেক ভিপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি