
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হচ্ছে রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর)। এই আয়োজন ঘিরে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এবার সারা দেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপ ও মন্দিরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর সারা দেশে ৩১ হাজার ৪৬১টি দুর্গাপূজা হয়েছিল। সেই হিসাবে এবার এক হাজার ৮৯৪টি দুর্গাপূজা বেশি হচ্ছে। এছাড়া ঢাকা মহানগরে ২৫৯টি পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, দুর্গাপূজায় বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যেন নির্বিঘ্নে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন করতে পারেন, সেজন্য র্যাব, বিজিবি, আনসারের পাশাপাশি যৌথ বাহিনীও কাজ করে চলছে বলে জানিয়েছে।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, দুর্গাপূজায় বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মাঠ পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপতথ্য ছড়িয়ে কেউ যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে এজন্য পুলিশের সব ইউনিট সজাগ রয়েছে।
তিনি বলেন, দুর্গাপূজা ঘিরে বেশ কয়েকটি অপতথ্য ছড়ানো হয়েছিল। আমরা আবার সেগুলোর ফ্যাক্টচেকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এ বছর সারাদেশে ৩১ হাজার ৫৭৬টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হবে। এর মধ্যে ৭ হাজার ৫৪টি মণ্ডপকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ, ১০ হাজার ৯৭২টিকে গুরুত্বপূর্ণ এবং ১৩ হাজার ৫৫০টি মণ্ডপকে সাধারণ হিসেবে ধরা হয়েছে। অধিক গুরুত্বপূর্ণ ৭ হাজার ৫৪টি পূজা মণ্ডপে বিশেষ নিরাপত্তা দেবে পুলিশ।
গত বছর সারাদেশে ৩২ হাজার ৬৬৬টি, ২০২৩ সালে ৩২ হাজার ৪০৭টি, ২০২২ সালে ৩২ হাজার ১৬৮টি, ২০২১ সালে ৩১ হাজার ৫০৭টি, ২০২০ সালে ৩০ হাজার ৭১০টি এবং ২০১৯ সালে ৩১ হাজার ৯১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হয়েছিল।
এ বছর বিজয়া দশমীর দিন ২৬ হাজার ৪৩৫টি পূজা মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন হবে। পরবর্তী দিনে এক হাজার ৩১১টি পূজা মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন হবে এবং ৩ হাজার ৮৩০টি মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন হবে না।
বিজিবি জানিয়েছে, দুর্গাপূজা উপলক্ষে সীমান্তবর্তী এলাকা এবং ঢাকাসহ সারাদেশে দুই হাজার ৮৫৭টি মণ্ডপের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে বাহিনীর ৪৩০ প্লাটুন সদস্য। সীমান্তবর্তী এলাকাসহ সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবির ২৪টি বেইজ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।
র্যাব সদর দপ্তর থেকে জানিয়েছে, দুর্গাপূজায় সব ধরনের ঝুঁকি বিবেচনায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তারা। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজধানীতে ৯৪টি টহলসহ সারাদেশে ২৮১টি টহল দল মোতায়েন করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী এ বাহিনী।
এদিকে আনসার সদর দপ্তর জানিয়েছে, পূজা নিরাপদ ও নির্বিঘ্নভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী (আনসার-ভিডিপি) ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ৯ দিন সারাদেশের ৩১ হাজার ৫৭৬ পূজা মণ্ডপে মোতায়েন থাকবেন দুই লাখের বেশি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আনসার-ভিডিপি সদস্য।
ঢাকা মহানগরে ২৫৯টি পূজা
গত শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব লিখিত বক্তব্যে বলেন, এবার সারা দেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপ ও মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর সারা দেশে ৩১ হাজার ৪৬১টি দুর্গাপূজা হয়েছিল। সেই হিসাবে এবার এক হাজার ৮৯৪টি দুর্গাপূজা বেশি হচ্ছে। এবার ঢাকা মহানগরে ২৫৯টি পূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর ঢাকা মহানগরে ২৫২টি পূজা হয়েছিল। সেই হিসাবে এবার ঢাকা মহানগরে সাতটি পূজা বেশি হবে।
পূজার সূচি তুলে ধরে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, শনিবার শারদীয় দুর্গাপূজার বোধন। রোববার মহাষষ্ঠী। সোমবার মহাসপ্তমী। মঙ্গলবার মহাষ্টমী। বুধবার মহানবমী। বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমী, সেদিন বেলা ৩টায় ঢাকাসহ সারা দেশে বিজয়ার শোভাযাত্রা বের হবে। এবার দেবীর আগমন গজে, গমন দোলায়।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় লিখিত বক্তব্যে। এতে বলা হয়, শারদীয় দুর্গাপূজা নিয়ে ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও ধর্ম উপদেষ্টার সঙ্গে আলাদা বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে পূজা আয়োজনের নানা দিক আলোচনায় এসেছে। তারা তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা জানিয়েছেন। দুই উপদেষ্টাও সুন্দরভাবে পূজা আয়োজনের কথা তাদের জানিয়েছেন। প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন।
দেশে বিভিন্ন মণ্ডপে ইতিমধ্যে হওয়া হামলার চিত্র লিখিত বক্তব্যে তুলে ধরেন জয়ন্ত কুমার দেব। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত এসব ঘটনায় পদক্ষেপ নিয়েছে। দুর্বৃত্তদের অনেকে ধরা পড়েছে।
পূজার মধ্যে তারা এমন হামলা দেখতে চান না উল্লেখ করে জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, ৩৬৫ দিনই নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হবে। শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পদক্ষেপ নয়, রাষ্ট্রের আলোকিত চেতনা ও সামাজিক প্রতিরোধের মাধ্যমে এই সহিসংতার অবসান ঘটাতে হবে। পূজার পাঁচ দিনের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবলে হবে না, বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ গড়তে চাইলে ৩৬৫ দিনের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ ঘটাতে হবে। দুর্বৃত্তদের বিচারের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এমনটা তাঁরা দেখতে চান।
মণ্ডপ এলাকায় বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকার সব এলাকায় পূজা মণ্ডপে গোয়েন্দা পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং মণ্ডপের আশেপাশে ও ভেতরে কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে দেখলে তাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে আনা হচ্ছে। এছাড়া নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠনগুলোর কার্যকলাপের ওপরও বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে, যাতে তারা কোনো অপকর্ম বা অঘটন ঘটাতে না পারে। ডিবি ২৪ ঘণ্টাই জনকল্যাণে জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রাঙ্গণে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে পুলিশের নিরাপত্তা পরিকল্পনা, মহড়ার আপডেট সম্বন্ধে বিস্তারিত তুলে ধরবেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
গত বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের হল অব প্রাইডে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত সভায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, আসন্ন দুর্গাপূজা নিরাপদে সুন্দরভাবে উদযাপিত হবে। পুলিশ পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় সতর্ক অবস্থায় থাকবেন। দুর্গাপূজা উপলক্ষে পুলিশ প্রাক পূজা, পূজা চলাকালীন এবং প্রতিমা বিসর্জন ও পূজা পরবর্তী তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে পূজাকেন্দ্রিক পুলিশের নিরাপত্তা কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
আইজিপি আশা প্রকাশ করেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আসন্ন দুর্গাপূজা উৎসবমুখর ও আনন্দঘন পরিবেশে নিরাপদে নির্বিঘ্নে হবে। এজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।