
৯২ ভাগ মুসলমানের এই বাংলাদেশের মানুষ কখনোই উগ্রবাদকে প্রশ্রয় দেয়নি মন্তব্য করে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু কিন্তু ধর্মান্ধ নন। বাংলাদেশ ‘ইসলামী উগ্রবাদীর উত্থান ঘটছে’ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও হিন্দুত্ববাদী ভারত অপপ্রচার চালালেও বাংলাদেশের মানুষ সম্প্রতিতে বিশ্বাসী। তারা কখনোই কোনো ধর্মীয় উগ্রতা বরদাস্ত করেনি।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীরে শরীয়ত মাওলানা আবু জাফর কাশেমীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ও সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খায়রুল আহসানের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল দৈনিক ইনকিলাব ভবনে সম্পাদকের সাথে সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ সব কথা বলেন।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রতিনিধিদলে আরো উপস্থিত ছিলেন দলের সিনিয়র নায়েবে আমির আলহাজ মুহাম্মদ আজম খান, নায়েবে আমির শাইখুল হাদিস আল্লামা আবুল কাসেম কাসেমী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মুফতি এনায়েতুল্লাহ আশরাফ হাফেজ্জী, যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর আমির মাওলানা মুহাম্মদ হোসাইন আকন্দ।
এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, ৯২ ভাগ মানুষ মুসলমান হলেও নানান ধর্মের মানুষ ও জাতিগোষ্ঠী একসঙ্গে বসবাস করছেন। এখানে সব মতপথ এবং ধর্মের মানুষকে নেতৃত্ব দিতে পারে এমন নেতৃত্বের খুবই প্রয়োজন। জাতীয়তাবাদী এবং ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী অথচ সব ধর্মবর্ণ-গোত্রের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতার প্রয়োজন। এ ধরনের নেতা তারেক রহমানকে ছাড়া কাউকে দেখছি না। কারণ তারেক রহমান মধ্যপন্থী ধারার রাজনীতি করলেও ইসলামী মূলধারার রাজনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মীয় উগ্রবাদী নেতার যেমন গ্রহণযোগ্যতা নেই; তেমিন ইঙ্গো মার্কিন চেতনা এবং বাম চেতনায় বিশ্বাসী তথাকথিত প্রগতিশীল নেতার গ্রহণযোগ্যতা নেই। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যাপিত জীবনে ইসলামী চেতনা ধারণ করেন কিন্তু কথাবার্তা ও কর্মের মাধ্যমে সব ধর্মবর্ণের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য মধ্যপন্থী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তথাকথিত প্রগতিশীলতার এবং ইসলামী চেতনা পছন্দ করেন না এমন ব্যক্তিরা যেমন তারেক রহমানকে মানেন; তেমনি তৌহিদী জনতা এবং সমাজে ইসলামী ধারার রাজনীতি করেন এমনকি উগ্র ইসলামী চিন্তা করতে অভ্যস্ত ব্যক্তিরাও তারেক রহমানকে অপছন্দ করেন না।
তিনি বলেন, তারেক রহমান দেশে এলে রাজনীতির চিত্রই পাল্টে যাবে। আলেমদের কেউ কেউ মনে করছেন বিএনপি ক্ষমতায় এলে শরিয়াবিরোধী অবস্থান নেবেন। আবার কেউ কেউ প্রচার করছেন বিএনপি ক্ষমতায় এলে ইসলামী উগ্রবাদকে প্রশ্রয় দেবেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তারেক রহমান শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র হিসেবে যে চেতনা ধারণ করতে হয় তিনি সেটাই করছেন। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, ইসলামী চেতনা ধারণ করেন কিন্তু সব ধর্মের মানুষ প্রতিই তার সমান টান।
এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, ইসলামের মূলধারা ঠিক রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বাতিলের সাথে আপোস না করে হকপন্থীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দেশের বাস্তবতা এমন যে ইসলামের মূলধারাকে পাশ কাটিয়ে আগামীতে কেউ ক্ষমতায় যেতে পারবে না। ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করলেও আমার কোনো সংশয় নেই। নির্বাচন যথাসময়ে হবেই ইন শা-আল্লাহ। তবে হিন্দুত্ববাদীদের এজেন্ডায় আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে কেউ কেউ পি আর পদ্ধতির নির্বাচনের দাবি করছে। যুগপৎ আন্দোলনের নামে জামায়াতে ইসলামী বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। পি আর নামের কিছুই থাকবে না। এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, বর্তমানে দেশে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট বিরাজ করছে। এ সংকট দীর্ঘায়িত হলে ধর্মীয় সংকটও দেখা দিতে পারে। বৈদেশিক ঋণের বোঝা দিন দিন বাড়ছে। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের অর্থনৈতিক সংকট নিরসনের কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন না। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আনতে পারছে না। বিদেশিরা জানিয়ে দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সময় তারা বিনিয়োগ করার ঝুঁকি নেবেন না। প্রধান উপদেষ্টা নিজের ব্যবসার সুদ মওকুফ করিয়ে নিয়েছেন। জাপানে কর্মী প্রেরণে রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স নিয়েছেন। নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার ব্যতীত দেশ জাতির মুক্তি নেই। সোশ্যাল মিডিয়া আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে। আলেম ওলামাদের সম্পর্কে কুধারণা যাতে সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং ভূরাজনীতির চিত্র তুলে ধরে চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, চীন-বাংলাদেশের সুসম্পর্ক দীর্ঘকালের। চীন বাংলাদেশের উন্নয়নের পরীক্ষিত অংশীদার। চীনের উইঘর মুসলিমদের নির্যাতনের নানামুখী প্রোপাগান্ড চালানো হয়। উইঘরের নির্যাতিত মুসলমানরা কোনো দেশে আশ্রয় নেয়নি। চীনের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ধরে রাখতে হবে। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া, কাবুল ও ইয়ামেনে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বর্বরোচিত হামলায় ধ্বংসের কথা স্মরণ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আধুনিক দাজ্জাল। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরাই রোহিঙ্গাদের সমস্যা সৃষ্টি করে আরাকান আর্মি তৈরি করেছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল নিয়ে পৃথক খ্রিষ্টান রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখছে। এদেশের দেশপ্রেমিক জনগণ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীর স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা রুখে দেবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইসলামের মূলধারার প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলে উল্লেখ করে এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার দীর্ঘ ১৬ বছরে দেশের জনগণ ভোটের অধিকার, নাগরিক অধিকার এবং মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনে দেশবাসী জাতীয়তাবাদী ইসলামী মূল্যবোধের সরকারকেই ক্ষমতায় আনতে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালাবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোট : এদিকে, সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অ্যাড. খায়রুল আহসানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ইনকিলাব ভবনে সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন। প্রতিনিধি দলের অন্যান্য সদস্যরা হচ্ছেন নেজামে ইসলাম বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাওলানা হারিছুল হক, জাতীয় ওলামা কাউন্সিলের মাওলানা আতাউর রহমান আতিকী, খেলাফতে দাওয়াতে ইসলামীর চেয়ারম্যান মুফতি মিসবাউল হক, বাংলাদেশ জনসেবা আন্দোলনের চেয়ারম্যান মুফতি রফিকুল ইসলাম, ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক ফোরামের চেয়ারম্যান প্রিন্সিপাল মো. রফিকুল ইসলাম ও ইসলামিক লিবারেল পার্টির চেয়ারম্যান মুফতি ফরিদ উদ্দিন কাসেমী।
ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, ইসলামিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দ দীর্ঘদিন যাবত দৈনিক ইনকিলাবের সাথে সুসম্পর্ক রেখে চলেছেন। তারা এদেশের মাটি ও মানুষের জন্য এবং দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আজীবন কাজ করে যাচ্ছেন। ইনকিলাব সম্পাদক আরো বলেন, বাংলাদেশ যতদিন থাকবে ততদিন ওলামায়ে কেরাম এই দেশকে গড়ার ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের জাঁতাকল থেকে দেশকে রক্ষার জন্য পূর্বকাল থেকে আজ অবধি ওলামায়ে কেরাম ভূমিকা রেখে চলেছেন। তিনি আরো বলেন, ইনকিলাব সবসময় ইসলাম, আলেম-ওলামা, সাধারণ জনগণ এবং দেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখবে ইনশাল্লাহ।
দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কর্ণধার তারেক রহমান এদেশের মাটি ও মানুষের এবং দেশটাকে উন্নত দেশের কাতারে নেয়ার জন্য পরিকল্পনা করছেন। দেশের জনগণ যদি বিএনপিকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে তাহলে তিনি দেশটাকে উন্নয়নের মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবেন এবং তারেক রহমান ওয়াদা করেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কখনো ইসলাম এবং শরিয়াহবিরোধী কোনো আইন-কানুন করবেন না এবং কাউকে এ বিষয়ে নাক গলাতে দেবেন না।
সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খায়রুল আহসান বলেন, দৈনিক ইনকিলাব এদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার সহযোগী হিসেবে এবং আলেম-উলামা ও সাধারণ জনগণের খেদমতে দীর্ঘদিন নিয়োজিত রয়েছে। আমরা এ বিষয়ে ইনকিলাবের প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। ইনকিলাবের সম্পাদকের দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
তিনি আরো বলেন, আমরা ইসলাম ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য জানমাল ব্যয় করতে প্রস্তুত আছি।