
সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধের প্রতিবাদে প্রায় এক সপ্তাহ অগ্নিগর্ভ ছিল নেপাল। সরকারের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ শুরু করেছিল দেশটির তরুণ প্রজন্ম। ৪ সেপ্টেম্বর প্রতারণা রুখতে সোশ্যাল মিডিয়ার ২৬ টি প্ল্যাটফর্ম বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি।
প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেই দেশজুড়ে সহিংস আন্দোলন শুরু হয়। কাঠমান্ডুর রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখান তরুণ প্রজন্ম। ভাঙচুর করে নেপালের সংসদ ভবন। শুধু তাই নয়, বিক্ষোভ কারীরা নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং একই সরকারের মন্ত্রীদের বাড়িতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। রাস্তায় নামিয়ে তাদের পেটাতে শুরু করেন। এমন পরিস্থিতিতে পরিবার নিয়ে নেপাল ছেড়ে পালান অনেক মন্ত্রী।
পাশাপাশি সেনার নির্দেশে পদত্যাগ করে পালান দেশটির প্রধানমন্ত্রীর আসনে থাকা কেপি শর্মা ওলি। এই ঘটনার প্রায় ১৮ দিন পর জনসমক্ষে দেখা গেল কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (ইউএমএল) এর চেয়ারম্যান কেপি শর্মা অলিকে। পদত্যাগের পর প্রথমবার তিনি জনসমক্ষে উপস্থিত হলেন। জানা গিয়েছে, দলের ছাত্র সংগঠন, রাষ্ট্রীয় যুব সংঘ কর্তৃক আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শনিবার ভক্তপুরে গিয়েছেন কেপি শর্মা ওলি।
ব্যাপক বিক্ষোভের পর গত ৯ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেছিলেন ওলি। তারপর থেকে তিনি জনসমক্ষে অনুপস্থিত ছিলেন। জানা গিয়েছে, প্রথমে কেপি শর্মা ওলিকে নেপাল সেনাবাহিনীর সুরক্ষায় রাখা হয়েছিল এবং পরে একটি অস্থায়ী বাসভবনে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। এখন, একটি দলীয় সভায় যোগদান দিতে দেখা গেল ওলিকে। এই উপস্থিতি তরুণদের সঙ্গে তার সংযোগ স্থাপন এবং রাজনৈতিক প্রভাব বজায় রাখার একটি প্রচেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্রের খবর, জেন-জেড-এর সহিংসতা এবং চাপের মুখে ওলিকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। বিক্ষোভ এবং অগ্নিসংযোগের মধ্যে তাকে হেলিকপ্টারে করে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। তার পদত্যাগের পর প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে তার স্থলে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়েছে। যদিও ওলি বারবার দাবি করেছেন যে, তিনি পুলিশকে গুলি চালানোর নির্দেশ দেননি, তবুও তার সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষ ছড়িয়ে পড়েছিল।
এই আন্দোলন কে এখন “জেন-জেড বিপ্লব” বলা হচ্ছে। এবং মানুষ এটিকে ২০০৬ সালের গণআন্দোলনের সঙ্গে তুলনা করছে। যখন রাজা জ্ঞানেন্দ্রকে উৎখাত করে নেপালকে একটি প্রজাতন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়ে ছিল। বর্তমানে সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে, এবং ২০২৬ সালের মার্চে নির্বাচনের সময়সূচী নির্ধারণ করা হয়েছে, তবে কাঠমান্ডু এবং অন্যান্য প্রধান শহরগুলিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। তবে নেপালের সহিংস আন্দোলনে এখনও পর্যন্ত ছাত্র যুব-সহ মোট ৭৪ জন বিক্ষোভকারী মারা গিয়েছেন।