
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ তথ্য মতে, দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৬টি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতন পরবর্তী সময়ে দেশের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) পরিবর্তন হয়েছে। এসময় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হলেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তাকে সরকার সরিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে একটিতেও নেই নারী উপাচার্য।
জানা গেছে, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে একমাত্র নারী ভিসি পায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। ২০২৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ড. শুচিতা শারমিন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে নিয়োগ পান। তবে এ পদে আট মাসও টিকতে পারেননি তিনি। অনিয়ম ও প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের টানা ২৯ দিনের আন্দোলনের মুখে গত ১৩ মে তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এর আগে, আওয়ামী সরকার পতনের পর আন্দোলনের মুখে নারী ভিসিদের মধ্যে পদত্যাগ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক সাদেকা হালিম, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার ও পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. হাফিজা খাতুন।
তাদের মধ্যে জবি ভিসি সাদেকা হালিম সরকার পতনের তিন দিনের মাথায় ২০২৪ সালের ১১ আগস্ট পদত্যাগ করেন। এর আগে, আওয়ামী দোসর হিসেবে তিনিসহ রেজিস্ট্রার, প্রক্টরসহ পুরো প্রক্টরিয়াল বডি এবং হল প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা। পদত্যাগ না করলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণাও দিয়েছিলেন তারা। আন্দোলনের মুখে ওইদিনই ভিসি পদ থেকে পদত্যাগ করেন সাদেকা হালিম। অবশ্য হাসিনা সরকার পতনের পর আর একদিনও বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি তিনি। ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন তিনি।
২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার। তবে জুলাই বিপ্লবের পর তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের মুখে ওই বছরের ১৮ আগস্ট উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।
২০২২ সালের ১২ এপ্রিল পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন। হাসিনা সরকার পতনের ১৬ দিনের মাথায় ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন তিনি। এর আগে, ১০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম মোস্তফা কামাল খান, ট্রেজারার ড. কেএম সালাহ উদ্দিন পদত্যাগ করেন। ১৪ আগস্ট প্রক্টর ড. মো. কামাল হোসেন এবং ছাত্র উপদেষ্টা নাজমুল হোসেনকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে উপাচার্য ড. হাফিজা খাতুনের পদত্যাগের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে একদল শিক্ষার্থী।
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম নারী ভিসি হিসেবে ২০১৪ সালে নিয়োগ পান অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। এরপর রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত হয়ে ২০১৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ভিসি হন তিনি। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে ভিসি থাকাকালে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতিসহ নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এসব নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন আন্দোলন করলেও জাবির প্রথম উপাচার্য হিসেবে দুই মেয়াদ দায়িত্ব পালন সম্পন্ন করেন তিনি। এসময় সকল গুরুত্বপূর্ণ পদে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। ২০২২ সালের ১ মার্চ তার দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্যের সময়সীমা শেষ হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পর নারী ভিসি পায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েট। দেশের দ্বিতীয় ও বুয়েটের প্রথম নারী ভিসি হিসেবে চার বছরের জন্য ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর নিয়োগ পান অধ্যাপক খালেদা একরাম। তবে দায়িত্ব পাওয়ার দুই বছরের মধ্যেই ২০১৬ সালের ২৪ মে মারা যান তিনি।