Image description
 

খুলনা সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নিম্নআয়ের মানুষের মাঝে গত সোমবার খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রয় (ওএমএস) কর্মসূচির চাল ও আটা বিতরণের দায়িত্বে ছিলেন জেলা খাদ্য অফিসের উপপরিদর্শক আব্দুল হালিম। কিন্তু ওই ওয়ার্ডে সেদিন ওএমএস বিক্রয় কেন্দ্র থেকে কোনো পণ্য বিক্রি হয়নি। সিএসডি গোডাউনের হিসাব খাতার তথ্য অনুযায়ী, ওই দিন কেসিসির ৩১টি ওয়ার্ডেরই চাল-আটা উত্তোলন করা হয়।

 

বিষয়টি জানাজানি হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। স্থানীয় নিম্নআয়ের মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। প্রশাসন ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছে অভিযোগ গেলে পরদিন মঙ্গলবার দুদিনের বরাদ্দ পণ্য একদিনে বিক্রি করা হয়। অথচ ওএমএস নীতিমালায় এভাবে বিক্রির কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।

 

মূলত ওএমএস কার্যক্রম নিয়ে খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে অতি লাভজনক এ ব্যবসার সঙ্গে একচেটিয়া জড়িত ছিলেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। বরাদ্দ উত্তোলন করে জনগণের মাঝে বিক্রি না করে কালোবাজারে বেচে দিয়ে মোটা অঙ্কের মুনাফা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ছিল সর্বাধিক। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এসব নেতার অনৈতিক কাজে বাধা দেওয়ার সুযোগ ছিল না। বরং অপকর্মের সহযোগী হয়ে টাকা কামিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড পরিদর্শক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জুলাই বিপ্লবের পর অধিকাংশ ডিলার পালিয়ে গেলে খুলনা মহানগরে ওএমএস কার্যক্রম কার্যত মুখথুবড়ে পড়ে। পরে নতুন ডিলার নিয়োগের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হলে বিপুলসংখ্যক আবেদন জমা পড়ে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার আগ মুহূর্তে কয়েকজন পুরোনো ডিলার হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাদের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেয়।

খাদ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, টেন্ডারের পর নিয়ম মেনে ১৫টি ওয়ার্ডে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়। চারটি ওয়ার্ডে লটারিতে জয়ী ঠিকাদারের বিষয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন নেতিবাচক থাকায় তাদের কার্যাদেশ না দিয়ে নিজস্ব পরিদর্শক দিয়ে কার্যক্রম চালানো হয়। এর মধ্যে আলোচিত ৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাড়াও রয়েছে ১০, ১২ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ড। আদালতের নির্দেশের কারণে ১২টি ওয়ার্ডে আওয়ামী শাসনামলে নিযুক্ত ঠিকাদার দিয়ে কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে।

নীতিমালায় রয়েছে, গোডাউন থেকে মাল উত্তোলন ও কেন্দ্রে বিক্রির সময় ঠিকাদারকে অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও তার বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের পদে থাকা এসব ঠিকাদার তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে কাজ চালাচ্ছেন। এর মধ্যে দাপুটে এক ঠিকাদার একাই পাঁচটি ওয়ার্ডে ওএমএসের কাজ করছেন।

এদিকে ওএমএসের পণ্য নিম্নআয়ের মানুষের মাঝে বিক্রি না করে কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগের পাশাপাশি এসব অনিয়ম সংঘটনে পরিদর্শক ও উপপরিদর্শকদের সহযোগিতারও বিস্তর অভিযোগ মেলে। এজন্য চলে মোটা অঙ্কের অর্থের লেনদেন। ডিলারদের কাছ থেকে প্রতিদিন এক হাজার টাকা উৎকোচ দাবি ও টাকা আদায়ের অভিযোগে সম্প্রতি ওএমএস বিষয়ক কমিটির ছাত্র প্রতিনিধি আসাদুল্লাহ গালিব খুলনা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। ডিলারদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর তিনি খাদ্য ভবনে গেলে একজন খাদ্য পরিদর্শক ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করার হুমকি দেন।

ছাত্র প্রতিনিধির অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে খাদ্য পরিদর্শক মমতাজ পারভীনকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এছাড়া ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা আব্দুল হালিমকে কল করা হলে তার দুটি মোবাইল নম্বরই বন্ধ পাওয়া যায়।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ তানভির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সব ওয়ার্ডে নতুন ডিলার নিয়োগ দিতে পারলে সমস্যার সুরাহা হতো। কিন্তু আদালতের আদেশ আছে। সম্প্রতি আরো ছয় মাসের জন্য তাদের স্টে অর্ডার এক্সটেনশন হয়েছে। ফলে আগামী ৯ মার্চ পর্যন্ত সাবেক ডিলাররাই ১২টি ওয়ার্ডে কাজ করবেন। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত আব্দুল হালিম অসুস্থ থাকায় ও সেদিন প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় মাল তুলতে পারেননি। তবে পরদিন ঠিকমতো কাজ করেছেন।