
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী জালাল আহমদ ওরফে ‘জ্বালাময়ী জালাল জানিয়েছেন বিচারিক আদালতের পর জনতার আদালতে চ্যালেঞ্জ করছি, ‘আমি রবিউল কে ছুরি আঘাত করিনি। ঘটনার পর আমি আমার মোবাইল দিয়ে ঘটনাস্থলের ছবি তুলে রেখেছি। ঘটনার ক্রাইম সিন দেখে স্পষ্ট বোঝা যাবে যে, রবিউল ইসলাম তার বেড থেকে উঠে আমার বেডের সামনে এসে আমাকে আক্রমণ করেছে! আমার মোবাইল এই মুহূর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে হেফাজতে রয়েছে। আইনের চোখে আমি জালাল আহমদ অপরাধী না, বরং নির্যাতিত।
বুধবার ( ২৩ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ কথা জানিয়েছেন।
ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান, চলার পথে কারো সাথে আমার দেখা হলেই আমাকে জিজ্ঞেস করে আমি কেন রবিউল ইসলাম কে ছুরি আঘাত করে করেছি ।এমনকি কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করলে এবং তা ঢাবির শিক্ষার্থী সংসদ সহ বিভিন্ন গ্রুপে শেয়ার করলে সেখানে কমেন্ট করে আমি কেন আমার রুমমেট কে ছুরিকাঘাত করেছি! তাই আমি বিচারিক আদালতের পর জনতার আদালতে চ্যালেঞ্জ করছি –‘আমি রবিউল কে ছুরি আঘাত করিনি।‘
বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি জানান, প্রহসনের মামলায় আদালতে দাঁড়িয়ে আমি বিচারকের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেছিলাম, আমি রবিউল ইসলামকে ছুরি দিয়ে আঘাত করিনি।বরং রবিউল ইসলাম তার বেড থেকে উঠে গিয়ে রুমে পড়ে থাকা পুরোনো টিউবলাইট দিয়ে আমাকে মাথায় আঘাত করার চেষ্টা করলে আমি জালাল আহমদ ডান হাত দিয়ে তা প্রতিরোধ করলে আমি ও রবিউল উভয়ই আহত হই। এই সময় আমি রক্তাক্ত হাত বিচারককে দেখাই। আমি এই সময় দাবি জানিয়েছিলাম, তাকে (রবিউল) মেডিকেলে পরীক্ষা করানো হোক। তাহলেই ফরেনসিক পরীক্ষায় কিসের আঘাত তা বোঝা যাবে ।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর আমি আমার মোবাইল দিয়ে ঘটনাস্থলের ছবি তুলে রেখেছি। ঘটনার ক্রাইম সিন দেখে স্পষ্ট বোঝা যাবে যে, রবিউল ইসলাম তার বেড থেকে উঠে আমার বেডের সামনে এসে আমাকে আক্রমণ করেছে! আমার মোবাইল এই মুহূর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে হেফাজতে রয়েছে। আইনের চোখে আমি জালাল আহমদ অপরাধী না, বরং নির্যাতিত। আমি আবার দাবি জানাচ্ছি যে,তাকে (রবিউল) মেডিকেলে পরীক্ষা করানো হোক। তাহলেই ফরেনসিক পরীক্ষায় কিসের আঘাত তা বোঝা যাবে । এতে আপনাদের অবুঝ মন সান্ত্বনা পাবে।
এসময় তিনি আরও জানান আমাকে যারা প্রশ্ন করছেন, তাদের জ্ঞাতার্থে বলছি:
১)আমি যদি তাকে ছুরিকাঘাত করতে যেতাম তাহলে শুধু সে আহত হতো, আমি আহত হতাম না!কিন্তু আমি কেন আহত হলাম? কিভাবে আমার হাতে আঘাত পেলাম? আমার শরীর কেন রক্তাক্ত হলো?
২)ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম স্যার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ স্যার, শাহবাগ থানার ওসি এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আমার কাছে একটি শব্দও জিজ্ঞাসা করেননি । ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাওয়া তাদের দায়িত্ব ছিল। কোনো কিছুই তারা জিজ্ঞেস না করে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করার উদ্দেশ্যটা কী?
৩)রবিউল ইসলামের নাক ডাকার কারণে আমি রাতে ঘুমাতে পারতাম না! অসংখ্য বার রাতে ঘুম ভেঙে গেছে। আমার এবং রবিউল ইসলামের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের ভিত্তিতেই হল প্রশাসন তাকে অন্য রুমে চলে যেতে বলেছিল। কিন্তু সে যাই নি কেন? সে উল্টো আমাকে চলে যেতে বলে। আমি কি তার মতো নাক ডাকি?
৪) গত জানুয়ারি মাসে রবিউল ইসলামের পরীক্ষা শেষ এবং জুলাই মাসে ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। কোন ক্ষমতা বলে সে এখনো পর্যন্ত হলে রুম দখল করে আছে?
৫)পুলিশ আইনগতভাবে ১২ ঘণ্টার মধ্যে আমার অপরাধ সম্পর্কে আমাকে জানাতে বাধ্য ।আটক ব্যক্তির পরিবারকে খবর দেবেন এটাও আইনে বলা আছে। কিন্তু আইন অনুসরণ না করে মব সৃষ্টি করে অপরাধী কে বাঁচিয়ে দিলেন এবং নিরাপরাধ ব্যক্তি কে জেলে দিলেন । এই বাংলাদেশ দেখার জন্য কি ১৮ বছর রাজপথে লড়াই করেছি? কারা মব সৃষ্টি করেছিল সেদিন, সব প্রমাণ রেখে দিয়েছি! পোস্ট ডিলিট করে লাভ নাই। কারণ আমি স্ক্রিনশট রেখে দিয়েছি।
আমি গত ১৮ সেপ্টেম্বর উকিল নোটিশ পাঠিয়েছি যেখানে আগামী ৭ দিনের মব সন্ত্রাসীদের বিচার, হলের সিট ফিরিয়ে দেওয়া এবং হলের মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। এই সময়ের মধ্যেই দাবি পূরণ না হলে পরবর্তী সময়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের ৪৬২ নম্বর রুমের বাসিন্দা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী রবিউল হককে টিউবলাইট দিয়ে বুকে আহত করার অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শাহবাগ থানায় তার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা করে। এরপর মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জালাল আহমদকে আদালতে পাঠায়। পরে বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেবার জন্য মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান তিনি।