Image description
 

রোববার দিবাগত রাত ১টা ৪০ মিনিটে জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আসছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, নোবেল বিজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূস। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় রোববার রাতেই তাঁর পৌঁছানোর কথা রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন ২৬ সেপ্টেম্বর।

 

এদিকে, এ বছর প্রধান উপদেষ্টার সফরকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা জোরদারের জন্য নিউইয়র্ক পুলিশ, মেয়র অফিস এবং ফরেন সার্ভিসের কাছে বাড়তি সহায়তা চেয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশের কনসুলার জেনারেল অফিস। চিঠিতে তারা নোবেল বিজয়ী ও বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নিরাপত্তার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত ও যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা বিমানবন্দর, হোটেল এবং জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে গণজমায়েতের ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে, আওয়ামী লীগ সমর্থকরাও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে পারেন বলে আশঙ্কা করছে কনস্যুলেট অফিস।

 

এ ব্যাপারে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মোহাম্মাদ মোজাম্মেল হক জনকন্ঠকে বলেন, আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে, আওয়ামী লীগের সমর্থকরা প্রধান উপদেষ্টার আগমনকে কেন্দ্র করে বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করবেন। এ কারণে আমরা স্থানীয় প্রশাসন, নিউইয়র্ক পুলিশ, মেয়র অফিসের কাছে বাড়তি নিরাপত্তা চেয়ে চিঠি দিয়েছি। একইভাবে নিউইয়র্কের ফরেন সার্ভিসকেও বিষয়টি অবগত করেছি। আশা করি, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সহায়তা করবেন।

 

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সফরকে কেন্দ্র করে যেকোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বিএনপি-জামায়াত আলাদাভাবে অবস্থান করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। তবে আমরা সতর্ক অবস্থানে থাকবো।

এদিকে কনস্যুলেট অফিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি কর্মসূচি চলাকালে শৃঙ্খলা বজায় রাখা, কূটনৈতিক প্রোটোকল মানা এবং যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়িয়ে চলা অত্যাবশ্যক। একইসঙ্গে বলা হয়েছে, কনস্যুলেট প্রাঙ্গণ বা অফিস সংলগ্ন এলাকায় অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের সমাবেশ বা বিক্ষোভ কার্যক্রমকে বেআইনি হিসেবে গণ্য করা হবে।

জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ জনকন্ঠকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। সেখানে তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যদি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করে, তবে তা মোকাবিলা করবে সে দেশের কর্তৃপক্ষ।

এ ব্যাপারে নিউইয়র্কের যুবদল নেতা মাসুদ রানা জনকন্ঠকে বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস শান্তিতে নোবেল বিজয়ী একজন বিশ্বসমাধিত ব্যক্তি। তার আগমনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে, সেজন্য আমরা সতর্ক অবস্থানে থাকবো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একটি নেতা বলেন, তারা হাইকমান্ডের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন। নির্দেশ আসলেই আমরা বিক্ষোভে নেমে পড়বো।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানিয়েছে, ২২ সেপ্টেম্বর ড. ইউনূস নিউইয়র্কে পৌঁছাবেন এবং ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্য দেবেন। তার ভাষণে জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী গণতান্ত্রিক সংস্কার, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় এবং সাবেক স্বৈরাচারী শাসন-পরবর্তী বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার চিত্র তুলে ধরা হবে।

ড. ইউনূসের ভাষণে জুলাই মাসের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রত্যয় তুলে ধরবেন। পাশাপাশি তার ভাষণে উঠে আসতে পারে রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু, অর্থায়ন, এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দক্ষিণ এশিয়ার ভূমিকাসহ বিভিন্ন বিষয়। স্বৈরাচারী হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের এগিয়ে চলাও উঠে আসতে পারে তার বক্তব্যে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই সফরে ড. ইউনূসের সঙ্গে থাকছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন ঐক্যের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়াও, ড. ইউনূস তাঁর নিউইয়র্ক সফরে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সাইডলাইনে উচ্চপর্যায়ের কিছু বৈঠকে অংশ নেবেন এবং রোহিঙ্গা সংকট সমাধান নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে। ড. ইউনূসের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে জাতিসংঘ ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের আয়োজন করেছে। এই সম্মেলন থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কার্যকর ও সময়ানুবর্তী পরিকল্পনা আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। যা দীর্ঘস্থায়ী সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।

জাতিসংঘের মিডিয়া অ্যাক্রেডিটেশন অ্যান্ড লিয়াজঁ ইউনিট (মালু) জানিয়েছে, জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনটি নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। একসঙ্গে শান্তি, উন্নয়ন ও মানবাধিকারের পথে ৮০ বছর ও তার বেশি প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে এক মঞ্চে মিলিত হবেন ১৯৩টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা। এদিকে, গত শুক্রবার থেকে সাইডলাইনে বিভিন্ন বৈঠক শুরু হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন।

এবারের সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু হলো এসডিজি অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন নিয়ে আলোচনা হবে। সেখানে বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা হবে। অধিবেশনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) নৈতিক ব্যবহার এবং এর সুশাসন নিয়ে আলোচনা হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই আলোচনায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে একটি প্রযুক্তি-ভিত্তিক প্রতিবেদন তুলে ধরা হবে।