
ভোটার তালিকা থেকে মৃত ব্যক্তির নাম বাদ দিতে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর জন্য ওই কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তথ্য-সংবলিত মৃতদের নামের তালিকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কর্তৃপক্ষ তাদের তালিকা দেখে ভোটার তালিকা থেকে মৃত ব্যক্তিদের নাম বাদ দেবে ইসি।
জানা গেছে, জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে অনেক সময় পরিবারের তথ্যের ভিত্তিতে ইসি কর্মকর্তারা তথ্য যাচাই ছাড়াই তালিকা থেকে একজন ভোটারের নাম কেটে দেন। নিকট অতীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এতে হুলুস্থুল পড়ে যায় ইসিতে। এ কারণে স্পর্শকাতর এই কাজটি নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহায়তা নেবে কমিশন। একইভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধন করতে গিয়ে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কর্তৃপক্ষের দেওয়া একই ব্যক্তির এক-দুটি নয়, বরং চার থেকে পাঁচটি জন্মসনদ পেয়েছে ইসি। তবে এসবের সুরাহাও চাচ্ছে ইসি।
ইসিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পঞ্চগড়ের বোদা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নগরকুমারী এলাকার বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন মনু ২০০৮ সালে ভোটার হন। কিন্তু ২০১৭ সালে বোদা পৌরসভা নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি তিনি। উপজেলা নির্বাচন অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে তার নাম নেই। শুধু বোদাই নয়, এ উপজেলার তেঁতুলিয়া ও আটোয়ারী উপজেলা নির্বাচন অফিস ২০১০ সাল থেকে ২০১৭ সালের ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমের সময় আরো অনেক জীবিত মানুষকে মৃত দেখিয়ে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেয়।
একইভাবে দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের বাসিন্দা সহিদা বেগমের (৮৪) ক্ষেত্রেও একই ধরনের ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নজরে আনা হলে টনক নড়ে ইসির। পরে তাকে জীবিত ভোটারদের তালিকায় ফেরানো হয়। সর্বশেষ হালনাগাদে আরো বেশকিছু জীবিত মানুষকে মৃত দেখানো হয়। পরে ওইসব ব্যক্তির অনুরোধে ইসি তাদের নাম তালিকায় পুনর্বহাল করে।
এনআইডি অনুবিভাগের ডিজি হুমায়ুন কবীর আমার দেশকে বলেন, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন সংস্থার সঙ্গে আমরা একটি সভা করব। মূলত দুটি ইস্যুতে সভা করা হবে। এর মধ্যে একটি একই নাগরিকের একাধিক জন্মসনদ নেওয়া; অপরটি মৃত ব্যক্তিদের তালিকা সংগ্রহ করা।
হুমায়ুন কবীর বলেন, নতুন ভোটার করা কিংবা ভোটার হওয়ার পর এনআইডিতে থাকা ভুল সংশোধন- উভয় ক্ষেত্রেই একটি জন্মসনদ থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু আমরা দেখতে পাই, একই ব্যক্তির এক-দুটি নয়; বরং চারটির মতো জন্মসনদ রয়েছে। এ কারণে ওই ব্যক্তির ভোটার করা ও আইডিতে থাকা ভুল সংশোধন করা সম্ভব হয় না। তাই একজন নাগরিকের একটি জন্মসনদ নিশ্চিত করার জন্য তাদের অনুরোধ জানানো হবে।
এনআইডির ডিজি আরো বলেন, দ্বিতীয় সমস্যাটি মৃত্যুজনিত কারণ। ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমের সময় পরিচিতজনের অভিযোগের ভিত্তিতে নাম বাদ দেওয়া হয়। একই সময় অনেক নাগরিককে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির ফলে মুছে ফেলা মৃত ব্যক্তির তথ্য যাচাই করা সম্ভব হয় না। অসাবধানতাবশত জীবিত ব্যক্তি মৃত স্ট্যাটাসে চলে যান; অর্থাৎ তার এনআইডিটি লক হয়ে যায়।
ভোটার ব্যক্তিদের কাছ থেকেও কিছু অভিযোগ পাই। আগামীতে এ রকম জটিলতা এড়াতে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা বৈঠক করব। ওই বৈঠকে তাদের থেকে মৃত ব্যক্তিদের তালিকা নেব। ওই তালিকার আলোকে এনআইডির ভোটার ডেটাবেজ থেকে মৃতদের নাম বাদ দেব।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের হালনাগাদ ভোটার তালিকায় ২১ লাখের বেশি মৃত ব্যক্তির নাম বাদ দেওয়া হয়। জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তালিকা সংগ্রহ না করায় অনেক জীবিত ব্যক্তির নামও ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে অনেক সময় বেকায়দায় পড়ে যায় নির্বাচন কমিশন। আগামীতে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের সহায়তা নিয়ে মৃত ব্যক্তির নাম বাদ দিতে চায় ইসি।