
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্তের কাজ চলছে পুরোদমে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু আসনের প্রার্থীর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে চলছে প্রার্থীদের বিষয়ে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই ১৮০টির মতো আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার লক্ষ্য রয়েছে। অক্টোবরেই অনেক প্রার্থীকে দলীয় বার্তা দেয়া হবে যাতে তারা আগে থেকেই নির্বাচনী প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারেন। চূড়ান্ত হওয়া প্রার্থী তালিকায় বিএনপি’র সঙ্গে রাজপথে থাকা সমমনা দলের কয়েকজন নেতার নামও আছে। তফসিল ঘোষণার পর বাকি প্রার্থীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সূত্র জানায়, রাজনৈতিক পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করবে বিএনপি। নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াতসহ অন্যান্য দলের তৎপরতার বিপরীতে দলের নির্বাচনী কার্যক্রম জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। সোমবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনার পর এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এখন থেকেই দলের সম্ভাব্য প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের নিজ নিজ এলাকায় দলীয় তৎপরতা বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয় বৈঠকে। এ ছাড়া নির্বাচন সামনে রেখে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে দলীয় বার্তা পৌঁছে দেয়ারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে হাইকমান্ড থেকে।
দলীয় সূত্র জানায়, চলতি মাসের মধ্যেই অর্ধেকের বেশি আসনে দলীয় প্রার্থীদের গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হবে। যাতে তারা আগে থেকে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করতে পারেন। সিলেট বিভাগের বেশ কয়েকটি আসনে দলীয় প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত করেছেন দলীয় হাইকমান্ড। এর মধ্যে মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ (সদর-সিটি করপোরেশন) আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মোক্তাদির। এ ছাড়া সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) আসনে বিএনপি’র দলীয় প্রার্থী হচ্ছেন গুম হওয়া নেতা এম ইলিয়াস আলীর পত্নী তাহসিনা রুশদীর লুনা। সিলেটের বাকি আসনগুলোতে একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। তাদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করছে দলীয় হাইকমান্ড। মৌলভাবাজারের দু’টি আসনেও দলীয় প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত। এর মধ্যে মৌলভীবাজার-৩ (সদর-রাজনগর) আসনে সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ছেলে এম নাসের রহমানকে দলীয় প্রার্থী করা হচ্ছে।
মৌলভীবাজার-৪ (কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল) আসনে দলীয় প্রার্থী করা হচ্ছে হাজী মুজিবুর রহমান মুজিবকে। হবিগঞ্জ জেলার চারটি আসনের মধ্যে তিনটিতেই দলীয় প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত। হবিগঞ্জ-১ আসনে দলীয় প্রার্থী নিয়ে দো-টানা রয়েছে। এই আসনে ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি’র দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া। বিএনপি এবারো তার বিষয়ে ভাবছে। যদিও ড. রেজা কিবরিয়া নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো অবস্থান জানাননি। এ আসনে বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আছেন শেখ সুজাত মিয়া। তিনি এই আসনের সাবেক এমপি। হবিগঞ্জ-৩ (সদর, লাখাই, শায়েস্তাগঞ্জ) আসনে সাবেক পৌর মেয়র আলহাজ জি কে গউছ দলীয় প্রার্থী হচ্ছেন এটা প্রায় নিশ্চিত। হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমীরীগঞ্জ) আসনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবনকে দলীয় প্রার্থী করা হচ্ছে। এ ছাড়া হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনে দলীয় প্রার্থী হতে যাচ্ছেন সৈয়দ মো. ফয়সল। এসব প্রার্থীদের শিগগির নির্বাচনী কার্যক্রম চালাতে দলীয় বার্তা দেয়া হবে বলে সূত্র জানিয়েছে। যদিও এসব আসনে এখন দলের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী তৎপর রয়েছেন।
দলীয় প্রার্থীর বাইরে সমমনা কয়েকটি দলের নেতাদের বিষয়েও বিএনপি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। কয়েকটি দলের শীর্ষ নেতাদের জন্য আগে থেকেই আসন ছেড়ে দেবে বিএনপি। এসব আসনের বিষয়ে শিগগিরই সংশ্লিষ্ট দলের নেতাদের জানিয়ে দেয়া হবে। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ঢাকার মিরপুর অঞ্চলের একটি আসন ছেড়ে দেয়ার আলোচনা আছে। এ ছাড়া মধ্য ঢাকার একটি আসনে ছাড় পেতে পারেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি। উত্তর সিটির একটি আসনে ছাড় দেয়া হতে পারে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থকে। লক্ষ্মীপুরের একটি আসনে ছাড় দেয়া হতে পারে জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বা তার পত্নী তানিয়া রবকে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ঢাকা দক্ষিণ সিটির একটি আসনে নির্বাচন করতে চাইছেন। এই আসটিতে বিএনপি’র একজন সিনিয়র নেতা আগে কয়েক দফা এমপি হয়েছেন। এ আসনটি নিয়ে একাধিক বিকল্প সামনে রেখে কাজ করছে বিএনপি হাইকমান্ড।
সর্বশেষ সোমবার রাতে হওয়া বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নির্বাচন প্রস্তুতির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে ৩১ দফার আলোকে নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন করা হবে বলে জানানো হয়। এ ছাড়া প্রতিটি আসনে দলীয় বা সমমনা দলের একক প্রার্থী করার বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, সামনে নয়া রাজনৈতিক মেরূকরণ হতে পারে এমনটি মাথায় রেখে দলীয় প্রার্থী এবং নির্বাচন প্রস্তুতির বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। জামায়াতসহ সমমনা দলগুলোর জোট, জাতীয় পার্টির অবস্থান, নির্বাচনের পরিবেশ এসব বিষয় মাথায় রেখেই সামনে দলের নির্বাচনী কৌশল চূড়ান্ত করা হবে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।