Image description
নতুন দল নিবন্ধন : ১১টি দল আদালতের মাধ্যমে নিবন্ধন পায়

নতুন রাজনৈতিক দলের সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয় নিবন্ধন প্রক্রিয়া। আর রাজনৈতিক দলকে সত্যায়িত করে নিবন্ধন দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর নতুর রাজনৈতিক দলের সূচনা হয় দুই শতাধিক। এদের মধ্যে ১৪৩ টি দল নিবন্ধনের জন্য কাগজপত্র নিয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে আবেদন করে। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করবে ইসি। এর আগে ইসির সরেজমিনে গিয়ে তথ্য যাচাই বাছাই করে তা কমিশনের কাছে উপস্থাপন করে দাবী আপত্তির বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শুনানির মাধ্যমে তা নিষ্পত্তি করবে। নিবন্ধন ছাড়া কোনো দল নিজ প্রতীকে ভোটে প্রার্থী দিতে পারে না। এবার নিবন্ধনের জন্য ১৪৩টি নতুন দল আবেদন করলে এর মধ্যে ১২১টি দলকে অযোগ্য বিবেচনা করে চিঠি পাঠিয়েছে ইসিঅ আর ২২টি দলের মাঠ পর্যায়ে তদন্ত শেষ হয়েছে। এখন সেসব তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, দলের মাঠ পর্যায়েরর তথ্য যাচাই বাছাইয়ের জন্য কমিশনের নিকট পাঠানো হয়েছে। যাচাই বাছাই শেষ হলে চলতি সপ্তাহের মধ্যে দলগুলোর নাম প্রকাশ করা হবে।

রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বিষয়ে গত ১১ সেপ্টেম্বর বৈঠকে বসে নির্বাচন কমিশন। বৈঠক শেষে কমিশন সূত্র জানায়, এনসিপির নিবন্ধন পাওয়া নিশ্চিত হলেও দলটির প্রতীক বরাদ্দ এখনও চূড়ান্ত হয় নি। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিবন্ধন আবেদন চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দিয়ে গেজেট প্রকাশ ও নিবন্ধন সনদ প্রদান করবে কমিশন। ইসির উপসচিব মো. মাহবুব আলম শাহ্ সই করা এ সংক্রান্ত এক চিঠিতে এ তথ্য জানা গেছে। ইসির অন্য একটি সূত্র বলছে, এবার নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সহ আমজনতার দল, জনতার দল, বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি।

২০০৮ সাল থেকে নিবন্ধন কার্যক্রম চালু করে কমিশন। এই নিয়মে অর্ধশতাধিক দল ইতোমধ্যে নিবন্ধন পেয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু দল সব শর্ত পূরণ না করায় নির্বাচন কমিশন থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়। আদালতের নির্দেশে শেষ পর্যন্ত অনেকেই নিবন্ধন পেয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান হওয়ায় আদালতের নির্দেশ অমান্য করার সুযোগ না থাকায় বাধ্য হয়ে নিবন্ধন দিয়েছে ইসি। তবে এবার আদালতে যাওয়ার এ প্রক্রিয়া কঠিন করছে নির্বাচন কমিশন। ইসি সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনে আদালতের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। আগে শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ার পরও নানা কারসাজি করে অনেক দল আদালতের নির্দেশে নিবন্ধন সনদ পেয়েছে। এবার ইসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখন থেকে কোনো দল নিবন্ধন না পেলে লিখিত আকারে মার্ক আউট করে দেবে কোন কোন শর্ত পূরণে তারা ব্যর্থ হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এর ফলে কোনো দল আদালতে গেলেও সরাসরি নিবন্ধন আদায় সম্ভব হবে না। শর্ত পূরণ না হওয়ায় আদালতও বিষয়টি বিবেচনায় নেবে। এক্ষেত্রে নিবন্ধন পাওয়ার জন্য ইসির দেওয়া কারণকে ভুল প্রমাণ করতে হবে। এই পদক্ষেপে নিবন্ধন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হবে এবং যোগ্যতা অর্জন না করা দলগুলোর নিবন্ধন পাওয়া কঠিন হবে।

ইসির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে নিবন্ধিত ৫১টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে অন্তত ১১টি আদালতের রায়ে নিবন্ধন পেয়েছে। গত কয়েক বছরে আদালতের আদেশেই নিবন্ধন পায় আমার বাংলাদেশ পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি। এর আগে ২০১৯ ও ২০২৩ সালে আদালতের নির্দেশে তৃণমূল বিএনপি, ইনসানিয়াত বিপ্লব, বাংলাদেশ কংগ্রেস ও বাংলাদেশ জাসদ নিবন্ধন পায়। এছাড়াও শর্ত পূরণ, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল হয়। দলগুলো হলো- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা। সস্প্রতি আদালতের আদেশে জামায়াতে ইসলামী ও জাগপা নিবন্ধন ফিরে পেলেও ইসি কেবল জামায়াতের নিবন্ধন ফিরিয়ে দিয়েছে।

নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, আগে নিবন্ধন না দেওয়ার কারণ লিখিতভাবে জানানো হতো না। এতে অনেক দল আদালতের মাধ্যমে সহজেই নিবন্ধন আদায় করত। এখন থেকে নির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে চিঠি পাঠানো হবে। ফলে আদালতও যাচাই না করে নিবন্ধন দেওয়ার সুযোগ পাবে না।