
সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিষয়টি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করতে হবে কর্তৃপক্ষকে। ইসি এ বিষয়ে ইতোমধ্যে সরকারের সবুজ সংকেত পেয়েছে।
এর আগে গত ৩০ জুলাই নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এই ইস্যুতে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। সভায় ইসি ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা একমত হন। ইতোমধ্যে ওই সভার কার্যবিবরণী চূড়ান্ত হয়েছে। শিগগির মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে চিঠি পাঠাবে ইসি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এর মাধ্যমে বয়স গোপন করে সরকারি চাকরি পাওয়ার পথ বন্ধ হচ্ছে। ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমদ আমার দেশকে বলেন, আগামীতে সরকারি চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে জন্মনিবন্ধন সনদ, একাডেমিক সনদ এবং জীবনবৃত্তান্তের পাশাপাশি ‘এনআইডি’ও চাওয়া হবে। ২০১৯ সাল থেকে এটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে যুক্ত করতে অনুরোধ জানিয়ে আসছে ইসি। কিন্তু বিগত সরকার বিষয়টি আমলে নেয়নি। আওয়ামী লীগের পতনের পর নতুন সরকার বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করেছে। এখন চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে এনআইডিও চাওয়া হবে।
এনআইডি অনুবিভাগের ডিজি হুমায়ুন কবীর আমার দেশকে বলেন, সরকারি চাকরিতে আগে এনআইডি বাধ্যতামূলক ছিল না। এ সুযোগে অনেকে প্রকৃত বয়স লুকিয়ে চাকরি নেন। এতদিন ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে বেতন-ভাতা হওয়ায় এনআইডির প্রয়োজনীয়তা ছিল না। বর্তমান সমন্বিত বাজেট এবং হিসাবব্যবস্থার (আইবাস) মাধ্যমে বেতন দিচ্ছে সরকার। ফলে অনেক চাকরিজীবী তথ্যগত ত্রুটির কারণে সমস্যায় পড়ছেন।
এর কারণ হিসেবে এনআইডির ডিজি বলেন, এনআইডির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির প্রকৃত বয়সে গরমিলের কারণে অনেকের বেতন বন্ধ রয়েছে। আমরা যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করছি আবেদনকারীদের এনআইডি সংশোধন করে দেওয়ার। যেহেতু এখন জনপ্রশাসনের আইনি কাঠামোর মধ্যে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে, ভবিষ্যতে চাকরিজীবীরা এ সমস্যার সম্মুখীন হবেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ছবিসহ জাতীয় পরিচয়পত্র চালু হয় ২০০৮ সালে। প্রথম দিকে মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে সরকারি চাকরিতে এনআইডি বাধ্যতামূলক করেনি ইসি। অথচ সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে সেবা প্রদানে এনআইডি বাধ্যতামূলক করে। এ নিয়ে নাগরিকদের পক্ষ থেকে নানা ধরনের অভিযোগ আসে ইসিতে। সে সময় কমিশন জানিয়েছিল সেবা পেতে এনআইডি লাগবে না। কিন্তু বেসরকারি সংস্থাগুলো বিশেষ করে ব্যাংক, স্কুল-কলেজ ও সিম নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ ইসির নির্দেশ আমলে নেয়নি।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, সময়ের পরিক্রমায় এনআইডির প্রয়োজনীয়তা বাড়ে। ইসিও নিজেদের সক্ষমতা অর্জন করায় সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে এনআইডিকে অগ্রাধিকার তালিকায় রাখার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম ২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যাদি আমলে নিয়ে চাকরিতে নিয়োগদান ও অন্যান্য সেবা প্রদানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে চাহিদাপত্র (ডিও) পাঠায়। ওই বছরেরই ৫ মার্চ জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যাদি বিবেচনাপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সব মন্ত্রণালয়-বিভাগকে অনুরোধ জানিয়ে পত্র জারি করে। অর্থ মন্ত্রণালয়, মহাহিসাব নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, ভূমি মন্ত্রণালয় তাদের অধীনস্থ কার্যালয়গুলো উক্ত পত্রানুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দেয়। তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এ নির্দেশনা আলোর মুখ দেখেনি।
২০২৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ২০টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ফের বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারি-আধাসরকারি অফিস, প্রতিষ্ঠানে নিয়োগদানের ক্ষেত্রে বয়স প্রমাণের ভিত্তি হিসেবে জন্ম সনদ অথবা এসএসসি সনদের পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্র বিবেচনায় নেওয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে পত্র পাঠানো হয়। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এরই মধ্যে দেশে জুলাই বিপ্লব ঘটে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। এরপর দায়িত্ব নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এটাকে উপযুক্ত সময় বিবেচনায় নতুনভাবে গত ১ জুন ২৭ মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এনআইডি চাওয়া নিয়ে বৈঠক করেন ইসির সিনিয়র সচিব। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩০ জুলাই আরেকটি সভা হয়। ওই সভায় সরকারি চাকরির নিয়োগে এনআইডি বাধ্যতামূলক রেখে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে সব পক্ষ একমত হয়।