Image description

এনসিপির অভ্যন্তরে আপত্তি ওঠায় এখনই জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সমঝোতায় যাচ্ছে না দলটি। জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি এবং নির্বাচনের আগে সনদের বাস্তবায়ন চাইলেও এনসিপি জামায়াতের সঙ্গে আন্দোলনে থাকবে না। তবে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনসহ যে দলগুলো পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়, তারা থাকবে। অন্যরা বাকি চার দাবি সংস্কার, বিচার, নির্বাচনী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এবং জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল নিষিদ্ধের দাবিতে নিজেদের মতো কর্মসূচি দেবে অথবা অবস্থান নেবে। 

গতকাল শনিবার জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপি, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি ও খেলাফত মজলিসের নেতাদের বৈঠকে এসব আলোচনা হয় বলে দলগুলোর সূত্র সমকালকে নিশ্চিত করেছে। 

জামায়াত সূত্র জানায়, এ দলগুলো নিয়ে বিএনপিবিরোধী বৃহত্তর রাজনৈতিক সমঝোতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা রয়েছে। মধ্যপন্থি এবং বামপন্থি দলগুলোকেও এতে স্বাগত জানানো হবে। তবে কারও সঙ্গে জোট হবে না।  

এনসিপিতে আপত্তি, উপদেষ্টা রাজি নন 
জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতায় এনসিপিতে আপত্তি রয়েছে। দলটির সূত্র জানায়, জুলাই সনদ প্রশ্নে একমত হলেও দলটির নেতাদের একাংশ ধর্মভিত্তিক কোনো দলের সঙ্গে জোটে রাজি নন। সরকারে থাকা দুই ছাত্র উপদেষ্টাও রাজি নন। 

উপদেষ্টা মাহফুজ আলম গতকাল শনিবার ইঙ্গিতপূর্ণ ফেসবুক পোস্টে তা স্পষ্ট হয়। যুক্তরাজ্য সফরে থাকা উপদেষ্টা নিজের ভেরিফায়েড প্রোফাইলে লেখেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসরে আরেকটি মওদুদীবাদী প্রক্সি দলের প্রয়োজন নেই। ইতোমধ্যে অর্ধ ডজন মওদুদীবাদী দল প্রক্সি হিসেবে কাজ করছে। আপনি কিছুই যোগ করতে পারবেন না!’ 
এ পোস্টে একজন কমেন্ট করেন, ‘যারা প্রক্সি হতে চাইছে তাদেরকে সামনাসামনি বসে বোঝান আল্লারওয়াস্তে। উনারা বুঝতে পারছেন না বোধহয়।’ জবাবে মাহফুজ লেখেন, ‘সামনাসামনি বুঝলে পাবলিকলি বলতাম না।’ 

এর আগে অবশ্যই এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক এবং রাজনৈতিক লিয়াজোঁ প্রধান আরিফুল ইসলাম আদীব সমকালকে বলেন, কোনো জোট বা যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি এনসিপি। 
একই কথা বলেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। জামায়াতের বৈঠকে এনসিপিকে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানানোর কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, জুলাই সনদ নিয়ে কাছাকাছি অবস্থানে থাকা দলগুলোর সঙ্গে কথা হয়। 

আদীব ফেসবুকে পোস্টে লেখেন, ‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধানের যে দাবি, তা নিয়ে অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছিল। এনসিপি শুধু উচ্চকক্ষে পিআর বিষয়ে একমত। এ ছাড়া সন্ত্রাসী ও ফ্যাসিবাদের সহযোগী হিসেবে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিতের দাবির সঙ্গে এনসিপির সমর্থন থাকবে।’ এ পোস্ট শেয়ার করেন এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এনসিপি সূত্র জানায়, সরকারের উপদেষ্টাসহ একাধিক নেতা বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতায় আগ্রহী। 

আট দলের আন্দোলনের সিদ্ধান্ত 
গতকাল জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপি, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি ও খেলাফত মজলিসের নেতাদের বৈঠক হয়। গত ২৬ আগস্ট নেজামে ইসলাম বাদে বাকি সাত দল বৈঠক করেছিল। ওই বৈঠকে সমন্বয় করেছিল এনসিপি। 
পাঁচ দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন করা যায় কিনা, তা গতকালের বৈঠকে আলোচনা হয়। দলগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত নিজেদের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার বিষয়টি গোপন রাখা হবে। সংবাদমাধ্যমকে কোনো দল আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানাবে না। 

বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, সংস্কারের জন্য নির্বাচনের আগে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, জুলাই গণহত্যার বিচার, নির্বাচনী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এবং জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল নিষিদ্ধের দাবি তোলা হবে। নিজেদের মধ্যে সমঝোতা রক্ষায় পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি তোলা বাধ্যতামূলক নয়। যেসব দল সংসদের উভয় কক্ষে পিআর চায়, তারা এ দাবিতে কর্মসূচি দেবে। যারা শুধু উচ্চকক্ষে পিআর চায়, তারা তা নিজেদের দাবিনামায় রাখবে। এসব দাবি আদায়ে দলগুলো যে যার মতো বিক্ষোভ, সমাবেশের কর্মসূচি দেবে। তবে কোনো দল চাইলে কর্মসূচি নয় বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমেও নিজের অবস্থান জানাতে পারে।  

দলগুলো পৃথক সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরবে। আজ রোববার সংবাদ সম্মেলন করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস। বৈঠক সূত্র জানায়, অন্যরা পরবর্তী সময়ে সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচি জানাবে। মামুনুল আজ বিদেশ যাবেন বলে দলটি আগেভাগে সংবাদ সম্মেলন করবে। এবি পার্টি সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচি দেবে দলটির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর দেশে ফেরার পর। ইসলামী আন্দোলন সোমবার কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে। 

বৈঠকে যোগ দেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন গণঅধিকার পরিষদের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন জানান, তিনি গণঅধিকারের প্রতিনিধি ছিলেন। দলটি নিম্নকক্ষে নয়, উচ্চকক্ষে পিআর চায়। এ ছাড়া গণঅধিকার বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছে। ফলে জামায়াতের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকার সুযোগ নেই। তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার মতো দাবিতে তারা একমত। 

জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন সংসদের উভয় কক্ষে পিআর চাইলেও বিএনপি কোনো কক্ষেই পিআরে রাজি নয়। দলটির অবস্থান হলো জুলাই সনদে থাকা সংবিধান সংস্কারের সিদ্ধান্তগুলো পরবর্তী সংসদে বাস্তবায়ন করা হবে। গতকাল বৈঠক করা দলগুলোর অবস্থান এর বিপরীতে। বৈঠক সূত্র জানায়, জুলাই সনদ ছাড়া নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না– এমন মনোভাব তুলে ধরেছে দলগুলো।