
Kafayet Shakil (কেফায়েত উল্লাহ চৌধুরী)
ভোটের সত্য তথ্য তুলে ধরায় বিএনপি-ছাত্রদলের ভাইয়েরা গত তিনদিন আমাকে প্রচুর গালি দিয়েছেন। এতে আমি বিচলিত নই। ভাইদের অনুরোধ করবো, গালাগালি না করে জাকসুর ভোটের পরিসংখ্যানটা বিবেচনা করুন। ৭৯৩৪ ভোটের মধ্যে ছাত্রদলের ভিপিপ্রার্থী সাদী মাত্র ৬৪৮টি ভোট পেয়েছেন। আত্মপর্যালোচনা করুন, সংশোধন করুন। গালি দিলে উন্নতি হবে না, আত্মপর্যালোচনা করে উন্নতির চেষ্টা করলে উন্নতি হতে পারে। আমি কল্যাণকামী বলেই সংস্কারের জন্য সমালোচনা করছি।
দেখুন অভিযোগ করার জন্য অভিযোগ না করে ফ্যাক্ট পর্যালোচনা করুন। জাবির বর্তমান ভিসি, প্রক্টর স্যার বিএনপিপন্থি। নির্বাচন কমিশনও বিএনপির ডাইহার্ট নেতাদের নিয়ে গঠিত। এই ক্যাম্পাসে জামায়াতপন্থি শিক্ষক নেই বললেই চলে। নিশ্চয় এই প্রশাসন অন্তত শিবিরকে ফেবার দিবে না। আর যদি দিয়ে থাকে তাহলে নিশ্চয় বিএনপির সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার যথেষ্ট সুযোগ এখনো রয়েছে।
পুরো নির্বাচনের প্রতিটি কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল। সেইসব ক্যামেরার ভিডিও আবার ক্যাম্পাসের মোড়ে মোড়ে লাইভ হয়েছে। এর বাইরে শত শত গণমাধ্যমের ক্যামেরা ছিল। আমি একটি কেন্দ্রও গণমাধ্যমহীন দেখিনি। কিন্তু ভোট বর্জন বা ভোটকে বিতর্কিত করার মতো কোনো ফুটেজ এত সাংবাদিকের কেউ তুলে আনতে পারেনি। বর্তমানে সব টিভির মালিক বিএনপি নেতারা। দুই-তিনটি পত্রিকা ছাড়া একটা টিভিও জামায়াতের হাতে নেই। তবু কেন তারা কিছু দেখাতে পারলো না? কারণ দেখানোর মতো কিছু ঘটেইনি।
আপনি হয়তো বলবেন, একজন ছেলে এসে বলেছে তার ভোট হয়ে গেছে। এই অভিযোগ শুধু একজনই করেছে। অর্থাৎ কেউ তার ভোটটা জাল দিয়ে গেছে। যদি কারচুপি হতো এমন অভিযোগ শত শত আসতো। যেমনটা আওয়ামী আমলে আসতো। শত জুলুম নির্যাতন এবং মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের পরও তথ্য চাপা দিতে তারা পারেনি। এখনতো তেমন পরিস্থিতি নেই তবু কেউ অভিযোগ করলো না কেন? কারণ এমন ঘটনা আর ঘটেনি। এত বড় একটি নির্বাচন একটি মাত্র জাল ভোটের জন্য কি বাতিল হতে পারে?
মেয়েদের হলে ঘণ্টা নিয়ে বলবেন। সেটি ছিল গুজব। পরে যা নিশ্চিত করা হয়েছে, কেন তারা ঘণ্টা দেয়। এটি সেখানকার ২০ বছরের সংস্কৃতি। তবুও যৌক্তিকতার খাতিরে আপনাদের দাবি আমলে নিলাম। কিন্তু প্রমানতো করতে হবে। ওই কেন্দ্রের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজতো রেকর্ড আছে। পারলে ছাত্রদল সেই ফুটেজ এনে দেখাক না। ভোট চুরি করলেতো সেটা সিসিটিভিতে দেখা যাবে। কিন্তু সেটা না করে শুধু অভিযোগ করে গেলে হবে?
এর বাইরে সব অভিযোগ ছিল, প্রার্থীকে কেন্দ্রের ভেতর ঢুকতে না দেওয়া নিয়ে। এ অভিযোগ অন্য প্যানেলও করেছে। এছাড়া, ওএমআর কাউন্ট মেশিন নিয়ে বিরোধ ছিল সেটাতো ব্যবহারই করা হয়নি, এখন হাতে গুনেছে। ব্যালট নিয়ে কথা ছিল, সেটার অবশিষ্টগুলোও বুঝিয়ে দিয়েছে। তারপরও অভিযোগ ধোপে টিকে?
আর ভোটে যত অনিয়ম হয়েছে পুরোটা ইলেকশন কমিশনের দায়। আর ইলেকশন কমিশনেতো সব বিএনপিপন্থিরা ছিলেন। ভোট বানচাল করতে তারাই সব বিতর্কের তৈরি করেছেন। এখন ভোটের অনিয়ম নিয়ে বলতে গেলে নিজেদের গায়ে থুথু দেওয়া হয়।
অভিযোগ কারা করেছে? শুধু ছাত্রদল আর বামরা। এরা ভোট পেয়েছে সবাই মিলে ৮০০+-। অথচ শিবির ছাত্রদলের বাইরে এই নির্বাচনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস), বিজয়ী জিতুর প্যানেল এবং স্বতন্ত্র আরো বহু প্রার্থী ছিল। কই তারাতো অভিযোগ করলো না। তারা ছাত্রদল থেকে ভালো ভোটও পেয়েছে। এক দেড়শো ভোটের ব্যবধানে হারা প্রার্থীও আছে। কই তারাতো অভিযোগ করেনি। তাছাড়া, কারচুপি খালি ছাত্রদলের সঙ্গেই হলো? বেছে বেছে কি ওরা শুধু ছাত্রদলের ভোটগুলোই চুরি করলো? বাকিরা এত ভোট পেল ছাত্রদল কেন ৬০০ পায়?
আমি পুরো নির্বাচন নিজ চোখে দেখেছি। যা দেখেছি তাই লিখেছি। সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে ভোট নিয়ে উৎসব দেখেছি। মিথ্যা একটা অভিযোগে ভোট বাতিলের চক্রান্তে ছাত্রদলের প্রতি ক্ষোভ দেখেছি। যা আল্টিমেটলি বিএনপির প্রতি যাচ্ছে। এই ছেলেগুলো আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ভোটার। এদের পরিবারও ভোটার। এরাই আগামীর চেঞ্জ মেকার। আমার মনে হয়েছে এদের সিদ্ধান্তকে অবজ্ঞা করে ছাত্রদল ভুল করছে। বিএনপিকে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
ছাত্ররা চাচ্ছিল ৩৩ বছর পর আসা জাকসু যেন বানচাল না হয়। আমি শুধু আমার লেখনির মাধ্যমে একটা অযথা অভিযোগে জাকসু বানচালের চক্রান্তোর সমালোচনা করেছি। কারণ গণমাধ্যম রাষ্ট্রের আয়না। সাংবাদিকরা জনগণের মুখপাত্র। সত্যকে সত্যের মতো করে তুলে ধরাই আমাদের কাজ। কেউ ভুল করলে তা ধরে দিয়ে শুধরে দেওয়া আমাদের কাজ। আমি সেটাই করেছি।
আমার দায়িত্ব ছিল ভুলগুলো শুধরে দেওয়া। আমি দিয়েছি। আমলে না নিয়ে গালি দিলে নিজের ক্ষতি নিজেরা ডেকে আনবেন। এসব অবান্তর অভিযোগের মাধ্যমে আওয়ামী আমলের ভোট চুরির প্রমানিত সত্যকেও আপনারা বিতর্কিত করছেন। ওবায়দুল কাদের সবসময় বলতেন, বিএনপি অভিযোগ পার্টি। এদের কাজ খালি অভিযোগ দেওয়া। যদিও তখনকার প্রেক্ষাপটে অভিযোগ দেওয়া ছাড়া কিছুই করার ছিল না। কিন্তু সেই অভিযোগের প্রমাণ ছিল। ভোট চুরির শত শত ভিডিও এখনো অনলাইনে মিলবে।
কিন্তু এখানে ভিসি, প্রক্টর, নির্বাচন কমিশনার সব আপনার হওয়ার পরও অভিযোগ করে নিজেদের হাস্যরসে পরিণত করছেন। জানি না, দলের হাই কমান্ড এগুলো পর্যালোচনা করে কিনা? না করলে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনেও বিএনপিকে অভিযোগ পার্টি হয়েই থাকা লাগে কিনা শঙ্কা করছি।
এখন ফ্লোর আপনাদের হাতে ছেড়ে দিলাম। কেন ছাত্ররা ছাত্রদলকে অপছন্দ করছে, কেন ৭৯৩৪ ভোটে আপনারা মাত্র ৬৪৩ ভোট পান তার পর্যালোচনা করলে করতে পারেন। আর যদি মনে করেন আমাকে জামায়াত-শিবির আখ্যা দিলে আপনাদের সব দুর্বলতার সমাধান হয়ে জয় চলে আসবে তাহলে হাজারবার শিবির বলে গালি দেন আমার আপত্তি নেই। সত্যি বলার জন্য জন্য আমি হাজার না, লাখো বার শিবির ট্যাগ খেতে প্রস্তুত আছি। যত ট্যাগ দেন আমি সত্য বলেই যাবো।