Image description

মানুষ মৃত্যুর পর কোথায় যায়? মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের প্রকৃত চিত্র বিজ্ঞানের আওতাধীন নয়। কারণ বিজ্ঞান শুধু দৃশ্যমান ও পরিমাপযোগ্য বিষয় নিয়েই গবেষণা করতে পারে, তা জীবন সমাপ্ত হওয়া পর্যন্ত কিংবা মৃত্যু-পরবর্তী অতি স্বল্প সময় পর্যন্ত। কিন্তু ইসলাম শিক্ষা দেয়, মৃত্যু মানেই সমাপ্তি নয়, বরং এটি এক নতুন জীবনের সূচনা। পরকালে বিশ্বাস করা ইমানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর মাধ্যমে মহান আল্লাহর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। এই দুনিয়ায় সৎকর্মীরা প্রায়ই নির্যাতিত হয়, তাদের প্রাপ্য পুরস্কার তারা এখানে পায় না। অন্যদিকে অসৎ ব্যক্তিরা শাস্তি এড়িয়ে যায়। তাই ন্যায়বিচারের পূর্ণ রূপ আখেরাতেই প্রকাশ পাবে।

কোরআন ঘোষণা করছে, মৃত্যুই জীবনের শেষ নয়। বরং এরপরই শুরু হবে প্রকৃত ও স্থায়ী জীবন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমিই তো মৃতকে জীবিত করি আর লিখে রাখি, যা তারা অগ্রে প্রেরণ করে এবং যা পেছনে রেখে যায়। আর প্রতিটি বস্তুকেই আমি সুস্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষণ করে রেখেছি।’ (সুরা ইয়াসিন ১২)

মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন, ‘তারা কি মনে করে না যে, তারা পুনরুত্থিত হবে মহান দিনে, যেদিন সব মানুষ বিশ^প্রভুর সামনে দাঁড়াবে?’ (সুরা মুতাফফিফিন ৪-৬) ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তিনি অবশ্যই তোমাদের সবাইকে একত্র করবেন পুনরুত্থান দিবসে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। (সুরা নিসা ৮৭)

মৃত্যুর পর মানুষের আত্মার নতুন যাত্রা শুরু হয়। আত্মা কোথায় যায়, কেমন অবস্থায় থাকে, এসব কিছুই অদৃশ্য জগতের অংশ, যা শুধু ওহির মাধ্যমেই মানুষ জানতে পারে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আমি কিতাবে কোনো ত্রুটি করিনি। অতঃপর তাদের রবের কাছে সমবেত করা হবে।’ (সুরা আনআম ৩৮) হাদিসে এসেছে, মুমিনের মৃত্যুর সময় ফেরেশতারা তার আত্মা কোমলভাবে বের করে নেয় এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দেয়। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘ভয় করো না, দুঃখ করো না, বরং তোমাদের জন্য সেই জান্নাতের সুসংবাদ, যা তোমাদের প্রতিশ্রুত দেওয়া হয়েছিল। (সুরা ফুসসিলাত ৩০)

মৃত্যুর পর কবর জগতে মুনকার-নাকির প্রশ্ন করবেন, ‘তোমার রব কে? তোমার ধর্ম কী? তোমার নবী কে?’ মুমিন উত্তর দিতে পারবে, আর কাফের ব্যর্থ হবে। উত্তর অনুযায়ী তার জান্নাত বা জাহান্নামের জানালা খুলে দেওয়া হবে।

কেয়ামতের দিন আল্লাহর এ বাণী প্রমাণিত হবে, ‘আল্লাহ তোমাদের জীবন দান করেন, তারপর তোমাদের মৃত্যু দেন, তারপর তোমাদের একত্র করবেন পুনরুত্থান দিবসে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। (সুরা জাসিয়া ২৬) অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘মানুষ বলে, যখন আমি মৃত্যুবরণ করব, তখন কি আবার জীবিত হবো? সে কি মনে করে না যে, আমি তাকে শূন্য থেকে সৃষ্টি করেছি?’ (সুরা মারইয়াম ৬৬-৬৭)

সেদিন প্রতিটি মানুষ ময়দানে হাজির হবে নগ্ন, খৎনাবিহীন অবস্থায়। তাদের হাতে দেওয়া হবে আমলনামা। কাউকে ডান হাতে, কাউকে বাম হাতে। যারা ডান হাতে পাবে তারা আনন্দিত হবে। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার আমলনামা ডান হাতে পাবে, তার হিসাব সহজ হবে। আর সে আনন্দে পরিবারের কাছে ফিরে যাবে।’ (সুরা ইনশিকাক ৭-৮) আর যার মন্দ কাজ বেশি হবে, তার ভাগ্যে জাহান্নাম নির্ধারিত থাকবে। কোরআন বলা হয়েছে, ‘যে কেউ অণু পরিমাণ ভালো কাজ করেছে, সে তা দেখবে। আর যে কেউ অণু পরিমাণ মন্দ কাজ করেছে, সেও তা দেখবে।’ (সুরা জিলজাল ৭-৮)

সৎকর্মীরা জান্নাত লাভ করবে। কোরআনে জান্নাতের বর্ণনা এসেছে, ‘তাদের জন্য থাকবে এমন জান্নাত, যার তলদেশে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ। সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। তাদের জন্য থাকবে পবিত্র সঙ্গিনী আর আল্লাহর সন্তুষ্টি।’ (সুরা আলে ইমরান ১৫) জান্নাতের মাটি হবে মেশক ও জাফরান, ইট হবে সোনা-রুপার, কংকর হবে মুক্তা ও রতœ। সেখানে থাকবে দুধ, মধু, পানি ও শরাবের নদী। ফলমূল, বাগান, প্রাসাদ সবই থাকবে। জান্নাতের সবচেয়ে বড় পুরস্কার হবে আল্লাহর সাক্ষাৎ। কোরআনে এসেছে, ‘সেদিন কিছু মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হবে, তারা তাদের রবের দিকে তাকিয়ে থাকবে।’ (সুরা কিয়ামাহ ২২-২৩)

অন্যদিকে অবিশ্বাসী ও পাপাচারীদের জন্য থাকবে জাহান্নাম। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জন্য হবে নিশ্চয় এক সংকুচিত জীবন এবং আমি তাকে কেয়ামত দিবসে উঠাব অন্ধ অবস্থায়।’ (সুরা তাহা ১২৪) তিনি আরও বলেছেন, ‘সেদিন অনেক মুখ হবে কালো, কালিমা সেগুলোকে আচ্ছন্ন করবে। তারাই কাফের, পাপাচারী।’ (সুরা আবাসা ৪০-৪২) তারা শুধু নিজেদের নয়, বরং যাদের পথভ্রষ্ট করেছে তাদের গুনাহও বহন করবে। জাহান্নামের দরজায় ফেরেশতারা তাদের জিজ্ঞেস করবে, ‘তোমাদের কাছে কি রাসুল আসেনি, যারা তোমাদের রবের আয়াতগুলো পাঠ করত এবং আজকের এ দিনের ব্যাপারে সতর্ক করত? তারা স্বীকার করবে, হ্যাঁ, এসেছিল।’ (সুরা জুমার ৭১)

মৃত্যুর পর ফেরার আর কোনো সুযোগ নেই। কোরআনে এসেছে, ‘যখন তাদের কারও মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন সে বলে, হে আমার রব! আমাকে ফিরিয়ে দাও, যাতে আমি সৎকাজ করি। কখনোই নয়! এটা কেবল একটি কথা, যা সে বলে।’ (সুরা মুমিনুন ৯৯-১০০)

অন্যদিকে জান্নাতের দরজায় মুমিনদের ফেরেশতারা অভ্যর্থনা জানাবে। তারা বলবে, ‘শান্তি তোমাদের জন্য, তোমরা ধৈর্যধারণ করেছিলে। কতই না চমৎকার এ চূড়ান্ত আবাস।’ (সুরা রাদ ২৪)

আল্লাহ দুনিয়ার জীবনকে ক্ষণস্থায়ী খেলা ও ক্রীড়া বলেছেন, আর আখেরাতকে বলেছেন চিরস্থায়ী আবাস। জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা মানুষকে ন্যায়-অন্যায়ের শিক্ষা দেয়, জবাবদিহির বোধ জাগায় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে উদ্বুদ্ধ করে। আমাদের প্রত্যেকের কামনা হওয়া উচিত আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাতের অনন্ত সুখ। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমিন।