Image description

গেলো ছয় মাস ধরে রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন অপরাধ বেড়েছে। বেশির ভাগই খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মবের ঘটনা। পুলিশের তথ্য বলছে, রাজধানীতে গড়ে প্রতিমাসে খুন হচ্ছে ২০ জনের মতো। তবে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আছে বলে দাবি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এদিকে আইন ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাজনৈতিক ছত্রছায়া ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় এসব ঘটনার বড় কারণ।

তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা বিল্লাল হোসেনের নেতৃত্ব মালিবাগের সোহাগ পরিবহনের অফিসে হামলা চালানো হয় গেল ৩ আগস্ট রাতে।

ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয় সোহাগ পরিবহনের মালিকের ছোট ভাই, গাড়ি চালক ও কর্মচারিদের। ঘটনার দুই দিন পেরিয়ে গেলেও গ্রেপ্তার হয়েছে মাত্র দুজন। মূল আসামিরা এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

সোহাগ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফারুক তালুকদার সোহেল বলেন, ‘দুইজনকে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছেন। বাকিদের আনার চেষ্টা করছেন, যেটা উনারা বলেন। তবে প্রধান যে তুই তিনজন তারা এখনও ধরা পড়েননি।’

এদিকে গেল ১ সেপ্টেম্বর রাতে আসামি ধরতে গিয়ে আদাবরে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে হামলার শিকার হয় পুলিশের এক সদস্য। শুধু তাই নয়, নোয়াখালীর মাইজদী শহরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অবৈধ দোকান উচ্ছেদ অভিযানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর হামলা, নারায়গঞ্জের সোনারগাঁওয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামিকে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে গত ১ সেপ্টেম্বর।

গেলো ছয় মাস ধরে রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন অপরাধের মাত্রা বেড়েছে ব্যাপক। বেশির ভাগই খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মবের ঘটনা। ঢাকা মহানগর পুলিশের তথ্য বলছে, কেবল রাজধানীতেই গেলো ছয় মাসে খুনের ঘটনায় মামলা হয়েছে ১২১টি, ডাকাতির ৩৩টি, ছিনতাই ২৪৮টি এবং চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে এক হাজার ৬৮টি।

পুলিশ এ হিসেব অনুযায়ী, রাজধানীতে গড়ে প্রতিমাসে খুন হচ্ছে ২০ জনের মতো। প্রতিদিনই খুন, ছিনতাইসহ নানা অপরাধের তথ্য গণমাধ্যমে প্রচারিত হলেও পুলিশের দাবি পূর্বের চেয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আছে।

ডিএমপি উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘যে ঘটনাগুলো ঘটছে সেগুলো খুব বেশি আতঙ্কিত হওয়ার মতো বিষয় না। আমরা কোনো একটা ঘটনাও প্রত্যাশা করি না। এ পর্যন্ত এ বছরের প্রথম ছয় মাসে চাঞ্চল্যকর যে কয়টি ঘটনা ঘটেছে, দুই একটা ঘটনা ছাড়া আমরা সবকয়টি ঘটনারই রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছি।

আইন ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরাধীরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা, প্রশাসন নিস্ক্রিয়তা ও সরকারের নিয়ন্ত্রণ সিথিল হয়ে যাওয়া, অপরাধ অনুযায়ী বিচার না হওয়া- এসব ঘটনার কারণ।

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ওমর ফারুক বলেন, ‘ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর আমরা তো আপনাকে (পুলিশকে) এমন মেশিন দিয়েছি, টুলস দিয়েছি, পোশাক দিয়েছি, গাড়ি দিয়েছি- আপনি তাদের ধরবেন গ্রেপ্তার করবেন। সঠিক ইনভেস্টিকেশনে তাদের বিচার করবেন। তাদের কোর্টে দিবেন, সেখানে প্রোপার ট্রায়ালের মাধ্যমে তাদের বিচার হবে। কোথাও কিছু হচ্ছে না। যেমন পুলিশ ইনঅ্যাক্টিভ হয়ে গেছে, আগে ছিল অতি অ্যাক্টিভ, জুলুম করতো, এখন ইনঅ্যাক্টিভ হয়ে গেছে, জুলুমবাজরা যেখানে সেখানে জুলুম করে বেরাচ্ছে। তারা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চলে গেছে।’

অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসলে বা রাজনৈতিক দল রাজনৈতিকভাবে অনুকূল অবস্থায় থাকলে তার একটা বড় সংখ্যক নেতাকর্মী মনে করে যে, সে এখন যা খুশি তাই করতে পারবে। দেশে প্রচলিত কোনো আইন বা নিয়মের কোনো তোয়াক্কা করে না।’

এমন পরিস্থিতিতে আইনের কঠোর প্রয়োগ না হলে, আগামী কয়েকমাসে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।