Image description

দীর্ঘ ৩৩ বছর পর আগামী ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। ভোটারদের কাছে নিজেদের ইশতেহার তুলে ধরছেন প্রার্থীরা। প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। নির্বাচনে আটটি প্যানেল ও স্বতন্ত্রসহ কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫টি পদের বিপরীতে লড়ছেন ১৭৯ প্রার্থী। এবারের নির্বাচনে শিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী ঐক্য জোট’ প্যানেল থেকে বিএনসিসি, ক্যাডেট, হ্যান্ডবল খেলোয়াড়সহ লড়ছেন ছয় নারী শিক্ষার্থী।

এর মধ্যে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে লড়ছেন দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা, সহ-ক্রীড়াসম্পাদক (মেয়ে) পদে লড়ছেন গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ফারহানা আক্তার লুবনা, সহ-সমাজসেবা ও সহ-মানবসেবা উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক (মেয়ে) পদে লড়ছেন ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী নিগার সুলতানা। এছাড়া কার্যকরি সদস্য পদে লড়াই করা তিনজন নারী শিক্ষার্থী হলেন—ইতিহাস বিভাগের নাবিলা বিনতে হারুন, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ফাবলিহা জাহান ও আইন ও বিচার বিভাগের নুসরাত জাহান।

যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে লড়াই করা আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের ২০২৪-২৫ সেশনে সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন যৌক্তিক আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন তিনি। এছাড়া সারা দেশে ধর্ষণের প্রতিবাদে গঠিত ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের সদস্য ছিলেন।

শিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচনের বিষয়ে মেঘলা বলেন, আমি ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করেছি। এরপর গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিতে সরব ছিলাম। জাকসু নির্বাচন হবে এমন ইঙ্গিত পাওয়ার পর থেকেই আমি নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করি। আমার সঙ্গে বেশ কয়েকটি প্যানেলের নেতারা যোগাযোগ করেছিল। তবে এর মধ্যে একমাত্র শিবির আমার কাঙ্ক্ষিত পদে নির্বাচনের প্রস্তাব দেয়। পরবর্তী সময়ে সবকিছু বিবেচনায় আমি তাদের প্যানেলের হয়ে নির্বাচন করছি।

শিবিরের সঙ্গে নির্বাচন করায় ট্যাগিংয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাকে যেই দল থেকে নির্বাচন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তারাই এখন শিবির সমর্থিত প্যানেলের হয়ে নির্বাচন করায় আমাকে ট্যাগ দিচ্ছে। এটা খুবই হতাশার। তবে প্রচারণায় শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, শিক্ষার্থীরা ব্যালটের মাধ্যমে এসব ট্যাগিংয়ের জবাব দেবে।

সহ-ক্রীড়াসম্পাদক (মেয়ে) পদে লড়াই করা গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ফারহানা আক্তার লুবনা ক্যাম্পাসে খেলাধুলায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন। তিনি একবার বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় হল চ্যাম্পিয়ন ও একবার রানার্সআপ হওয়ার খেতাব অর্জন করেছেন। তিনি চ্যান্সেলর কাপ হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন। এছাড়া তার গার্লস গাইড ও বিএনসিসিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে।

খেলোয়াড় হয়ে শিবিরের সমর্থিত প্যানেলে নির্বাচন করার বিষয়ে লুবনা বলেন, নারীদের বিষয়ে শিবিরের অবস্থান একেবারেই স্পষ্ট। নারীরা সমাজের অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য বলে মনে করেন তারা। তাদের জন্য সমান সুযোগ, নিরাপদ পরিবেশ ও নেতৃত্বের জায়গা নিশ্চিত করা সবার দায়িত্ব ও অঙ্গীকার। কোনো রাজনৈতিক অবস্থান বা প্যানেল যেটাই হোক না কেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে সব সময় চাই নারী শিক্ষার্থীরা যেন নিজেদের দক্ষতা ও নেতৃত্ব প্রদর্শনের পূর্ণ সুযোগ পান।

তিনি বলেন, আমি স্কুল-কলেজ থেকেই খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত। ক্যাম্পাসে এসেও বিভিন্ন খেলায় অংশগ্রহণ করেছি। ‍তিনি বলেন, খেলোয়াড় হয়ে এখানে আসার মূল লক্ষ্য আমি মাঠের চর্চাকে শুধু খেলায় সীমাবদ্ধ রাখতে চাইনি, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে সক্রিয় অংশ নিতে চেয়েছি।

 

সহ-সমাজসেবা ও সহ-মানবসেবা উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক (মেয়ে) পদে লড়াই করা নিগার সুলতানা ক্যাম্পাসের কোরআন অ্যান্ড কালচারাল স্টাডি ক্লাবের কো-হেড হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

কার্যকরি সদস্য পদে লড়াই করা নাবিলা বিনতে হারুন হিস্টোরি ডিবেটিং ক্লাবের সদস্য। এছাড়াও তিনি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সংগঠন তরীতে শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন।

 

কার্যকরি সদস্যপদে প্রতিযোগিতা করা নুসরাত জাহান ইমা প্রীতিলতা হলের হ্যান্ডবল দলের খেলোয়াড়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও সামাজিক সংগঠন বাঁধন ও পথের প্রাণের একজন সক্রিয় সদস্য।

আরেক কার্যকরি সদস্য ফাবলিহা জাহান ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং ক্লাবের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একই সঙ্গে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার ক্লাবের সদস্য। তিনি বলেন, শিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচনের অন্যতম কারণ হলো শিবিরের শিক্ষার্থীবান্ধব কার্যক্রম ও নারীর প্রতি সম্মান। তারা বিগত সময় থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ওয়েলফেয়ার কার্যক্রম করেছে ক্যম্পাসে। নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি তারা অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল এবং নারীদের নিরাপত্তাবিষয়ক ইস্যুতে অত্যন্ত ভোকাল। ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসের নারী শিক্ষার্থীদের সাইবার বুলিং ইস্যুতে দ্রুততম সময়ে প্রশাসনের কাছে স্মারক প্রদান করেছে। এমনকি নারীদের এ বিষয়ে আইনি সহায়তার ব্যাপারেও আশ্বাস দিয়েছে সংগঠনটি।

 

এ সময় তিনি বলেন, শিবিরকে একটা গোষ্ঠী সব সময় নারীদের প্রতি অসহনশীলভাবে উপস্থাপন করতে চায়, তবে তার কোনো ধরনের আভাস আমি তাদের কাজের মধ্যে পাইনি।