
নিখোঁজের তিনদিন পর সুনামগঞ্জ-৩ আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মনোনয়নপ্রত্যাশী মাওলানা মোস্তাক আহমদ গাজীনগরীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দিরাই উপজেলার শরিফপুর বাট্টা এলাকায় শ্যামনগর নদীতে ভাসমান অবস্থায় তার মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে। তিনি দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও জেলা সহ-সভাপতি। শান্তিগঞ্জের বড়মোহা দারুল উলুম ইসলামিয়া আরবিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ছিলেন। এ ঘটনায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। মরদেহটি একনজর দেখতে নদীর তীরে শত শত মানুষ ভিড় করেন। এ সময় স্বজনসহ নেতাকর্মীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
নিহত মুশতাক আহম্মদ শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নের গাজীনগর গ্রামের আব্দুল মন্নানের ছেলে। স্বজনদের অভিযোগ, প্রথমে তাকে গুম করা হয়েছে। পরে খুন করে নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে। পরিবারের লোকজন জানান, মঙ্গলবার রাতে মাওলানা মুশতাক আহমদ গাজীনগরী নিখোঁজ হয়েছিলেন। বুধবার বিকালে তার স্ত্রী রুবি বেগম শান্তিগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। তার সন্ধান চেয়ে প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ ও সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেছিলেন দলের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী।
এর আগে পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে তাকে মদনপুর-দিরাই সড়ক মোড়ে সর্বশেষ দেখা যায়। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের আলফাত স্কয়ারে এবং শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরে ও সিলেট সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন-বিক্ষোভ সমাবেশ করেন দলের নেতাকর্মী ও স্বজনরা। এ সময় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাওলানা মো. মুশতাক আহম্মদ গাজীনগরীর সন্ধান না পাওয়া গেলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তারা। জেলা জমিয়তের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাও. রোকনউদ্দিন জানান, মঙ্গলবার মাওলানা মুশতাক আহমদ সুনামগঞ্জ শহরে যান। এ সময় একজন কর্মী হুজুরকে সিএনজিতে তুলে দিয়েছিলেন। ১১টা ২০ মিনিট পর্যন্ত উনাকে দিরাই সড়ক মোড়ে একটি সিসি ক্যামেরায় দেখা গেছে। সিসি ক্যামেরা থেকে বের হওয়ার পরে উনাকে আর পাওয়া যায়নি।
মাওলানা মুশতাক আহমদের ফুফাতো ভাই সুনামগঞ্জ শহরের বাসিন্দা জুনেদ আহমেদ বলেন, আমাদের ধারণা প্রথমে তাকে গুম করা হয়েছে। পরে খুন করে নদীতে ফেলে দেয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান তিনি। জেলা বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সদস্য এটিএম হেলাল বলেন, মাওলানা মোস্তাক গাজীনগরী একজন ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়েছেন। শুক্রবার তার লাশ পাওয়া গেছে নদীতে। এ ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে খুঁজে বের করে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান তিনি। নিহতের স্ত্রী রুবি বেগম বলেন, মঙ্গলবার রাত ১০টা ৫১ মিনিটে তিনি ফোনে বলেছিলেন আমি সুনামগঞ্জে এসেছি। আসবো বলে ফোন রেখে দেন তিনি। এর দুই মিনিট পরে আবার তিনি ফোন দিয়ে বলেছেন, আমি এক ঘণ্টার মধ্যে বাড়িতে আসছি। এটা ছিল তার শেষ কথা। দিরাই থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে তদন্তসহ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে পুলিশ।