Image description

এ যেন এক মহাকাব্যিক যাত্রা। যে যাত্রার পরতে পরতে রয়েছে রোমাঞ্চ। রয়েছে বিভিন্ন বাঁক ও জানার  তীব্র কৌতূহল। দেশের সংগীতের অন্যতম দিকপাল সাবিনা ইয়াসমিনকে নিয়ে তৈরি ডকুফিল্ম ‘জুঁইফুল: সাবিনা ইয়াসমিন’-এ ঠিক যেন এভাবেই উপস্থাপন করা হয়েছে শিল্পীকে। এতটা গভীরভাবে এই কিংবদন্তিকে জানার সুযোগ এর আগে দর্শকদের হয়নি। গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজের নির্মাণ ও সঞ্চালনায় ডকুফিল্মটি সাবিনা ইয়াসমিনের জন্মদিন উপলক্ষে চ্যানেল আইতে প্রচার হয় গতকাল বেলা ২টা ৩০ মিনিটে। ২ ঘণ্টা ৪৮ মিনিটের এই ডকুফিল্ম যেন সাবিনার গানের পাখি হয়ে ওঠার অসামান্য এক উপাখ্যান। এ এক বিশাল কর্মযজ্ঞ! ব্যাপক গবেষণার ফসল প্রামাণ্যচিত্রটি। কতোটা মেধা, গবেষণা, শ্রম ও সময় ব্যয়ে এটি তৈরি হয়েছে তা খুব সহজেই আঁচ করা যায়। এর আগে শাইখ সিরাজ ‘চিত্রনায়িকা ববিতার ছাদকৃষি’ নামের একটি অনুষ্ঠান করেছিলেন, যা ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিল। তবে এবার সাবিনাকে নিয়ে বিশাল পরিসরে তিনি নির্মাণ করেছেন ‘জুঁইফুল: সাবিনা ইয়াসমিন’। এতে উঠে এসেছে ষাটের দশক থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সাবিনা ইয়াসমিনের সংগীতযাত্রা, ব্যক্তিজীবনের অজানা কথা এবং নানা স্মৃতিময় গল্প। 

একান্ত সাক্ষাৎকার, আর্কাইভাল ভিডিও ও ছবি, কালজয়ী গান পরিবেশনা এবং সমসাময়িক শিল্পীদের অংশগ্রহণ ডকুফিল্মটিকে করেছে পরিপূর্ণ ও আলাদা। ডকুফিল্মে তিন ধাপে সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। সাবিনা ইয়াসমিনের বাসায়, একটি দৃষ্টিনন্দন রিসোর্টে এবং চ্যানেল আইয়ের স্টুডিওতে। এর নির্মাণশৈলী সরল অথচ গভীর। সাবিনা ইয়াসমিনের ব্যক্তিগত জীবন, সংগীত ও সমাজ-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট সমন্বিতভাবে মুন্সিয়ানার মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন শাইখ সিরাজ। এতে সাবিনা প্রথম গান গাওয়ার স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে অনেকটাই আবেগী হয়ে পড়েন। ১২ বছর বয়সে আলতাফ মাহমুদের হাত ধরে সিনেমায় গান গাওয়ার সুযোগ কীভাবে পেয়েছেন, তা উঠে এসেছে ডকুফিল্মটিতে। দিলশাদ ইয়াসমিন থেকে সাবিনা ইয়াসমিন হয়ে ওঠার গল্প ছিল দারুণ উপভোগ্য ও নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের জন্য শিক্ষণীয়। প্রথম পারিশ্রমিক বিষয়ে সাবিনা জানান, খেলাঘরে গান করে তখন তিনি পেতেন ১০ টাকা পারিশ্রমিক। আর ১৯৬৭ সালে প্রথম প্লেব্যাক করে তিনি পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন ৫০০ টাকা। 

নিজের পরিবারের সদস্যদের বর্ণনা তিনি করেন এতে। পাশাপাশি ব্যক্তিজীবনের অজানা গল্পও উঠে আসে। ডকুফিল্মটিতে সাবিনা ইয়াসমিনের গান তার সামনেই পরিবেশন করেন এই প্রজন্মের জনপ্রিয় শিল্পী কনা, লিজা, কোনাল, ইমরান, ঝিলিক, রাকিবা ঐশী ও আতিয়া আনিসা। এই ৭ জন শিল্পী পরিবেশন করেন সাবিনার ১২টি প্রিয় গান। প্রতিটি গানের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মজার ও আবেগঘন প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন সাবিনা ইয়াসমিন নিজেই। নতুন প্রজন্মের এ শিল্পীদের সঙ্গে এই কিংবদন্তি ভাগ করে নিয়েছেন সে সময়ের স্মৃতি ও সংগ্রামের অভিজ্ঞতা। সাফল্যমণ্ডিত ক্যারিয়ারে কোনো অতৃপ্তি আছে কিনা- প্রশ্নের উত্তরে সাবিনা ইয়াসমিন জানান, তার সংগীত জীবনে অনেক সাফল্য এসেছে। তবে সংগীত সংশ্লিষ্টদের রয়্যালিটির বণ্টন নিয়ে সন্তুষ্ট নন তিনি। তার কথায়, একজন শিল্পী, সুরকার বা গীতিকার যদি প্রয়োজনীয় এবং ন্যায্য রয়্যালিটি পেতেন, তাহলে তাদের পুরো জীবনটাই সচ্ছল ও মর্যাদাপূর্ণ হতে পারতো। এ বিষয়টি নিয়ে সরকারকে কাজ করার অনুরোধও করেন তিনি। 

এদিকে মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে এ ডকুফিল্মকে নিজের জন্মদিনের সেরা উপহার হিসেবে অভিহিত করেছেন সাবিনা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, এতটা তথ্যবহুল ও চমকপ্রদ হবে ডকুফিল্মটি সেটা ভাবিনি। সব মিলিয়ে এটা আমার জন্য বিশাল এক সারপ্রাইজ। এটা আমার জন্য যেমন আনন্দের তেমনি সম্মানের। নির্মতা শাইখ সিরাজ বলেন, সাবিনা ইয়াসমিন শুধু একজন শিল্পী নন, তিনি আমাদের সংস্কৃতির ইতিহাস। তার সংগ্রাম, সাফল্য, শিল্পীসত্তা সবকিছুই পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চেয়েছি এই ডকুফিল্মে। এটি কেবল ইতিহাসের দলিল নয়, বরং একটি সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ। সব মিলিয়ে শাইখ সিরাজের এই প্রামাণ্যচিত্রটি হয়ে উঠেছে বর্ণাঢ্য, শিক্ষণীয় ও অসামান্য নির্মাণের দৃষ্টান্ত। এমন একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য ভূয়সী প্রশংসার দাবি রাখেন নির্মাতা শাইখ সিরাজ। তার দূরদর্শী নির্মাণ, পরিকল্পনা ও উপস্থাপনার কারণেই ‘জুুঁইফুল: সাবিনা ইয়াসমিন’ কালের সাক্ষী হয়ে রইলো। যার মাধ্যমে সাবিনা ইয়াসমিনের মতো ব্যক্তিত্বকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিশদভাবে জানতে পারবে। পাশাপাশি শাইখ সিরাজের এ ধরনের ডকুফিল্ম তৈরির প্রয়াসও যেন ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকে, সেটা নিশ্চয়ই চাইবেন সংস্কৃতিপ্রেমী থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শকরাও।