Image description
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন

ডলারের বিপরীতে দ্বিপক্ষীয় শক্তিশালী বাণিজ্য রয়েছে এমন দেশগুলোর মুদ্রার তুলনায় বাংলাদেশের টাকার মান সবচেয়ে বেশি কমেছে। গত বছরের মার্চ থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে টাকার মান কোনো কোনো দেশের মুদ্রার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি থেকে ১২ গুণ পর্যন্ত কমেছে। ওই সময়ে অর্থনৈতিক সংকটে দুই বছর আগে দেউলিয়া হওয়া শ্রীলংকার মুদ্রার মান ডলারের বিপরীতে বেড়েছে। কম্বোডিয়ার মুদ্রার মানও বেড়েছে। অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত পাকিস্তানি মুদ্রার মান সবচেয়ে কম কমেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চ মাসের শেষে ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার বিনিময় হার দাঁড়ায় ১২২ টাকায়। ২০২৪ সালের মার্চের তুলনায় ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত টাকার মান কমেছে ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ। একই সময়ে ডলারের বিপরীতে মুদ্রার মান কমার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার মুদ্রা। ইন্দোনেশিয়ান রুপিয়ার মান কমেছে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে আছে ভিয়েতনামের মুদ্রা। দেশটির মুদ্রা ভিয়েতনামিজ ডংয়ের মান ডলারের বিপরীতে কমেছে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ভারতীয় মুদ্রা। দেশটির মুদ্রা ভারতীয় রুপির মান ডলারের বিপরীতে একই সময়ে কমেছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ। পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে চীনের মুদ্রা। দেশটির মুদ্রা চীনা ইউয়ানের মান কমেছে ২ দশমিক ২ শতাংশ। ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে ফিলিপাইনের মুদ্রা। দেশটি অর্থনৈতিক সংকটে থাকার পরও ফিলিপাইন পেসোর মান ডলারের বিপরীতে কমই কমেছে মাত্র ১ দশমিক ৯ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে সবচেয়ে কম কমেছে পাকিস্তানি মুদ্রার মান। দেশটি বহুমুখী অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করার পরও পাকিস্তানি রুপির মান কমেছে দশমিক ৮ শতাংশ।

দুই বছর আগে শ্রীলংকা অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়েছিল। পরে অবশ্য ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দেশটির মুদ্রা শ্রীলংকান রুপির মান ডলারের বিপরীতে কমেনি। বরং বেড়েছে ১ দশমিক ৬ শতাংশ। কম্বোডিয়ান রিয়েলের মান ডলারের বিপরীতে বেড়েছে ১ শতাংশ।

সূত্র জানায়, আলোচ্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার বেশি। ওই সব দেশে তুলনামূলকভাবে অনেক কম। যে কারণে বাংলাদেশের মুদ্রার মান বেশি কমছে। এছাড়া ডলারের দাম কমার সুবিধা ওই সব দেশগুলো নিতে পারছে। কিন্তু বাংলাদেশ পারছে না। কারণ বাংলাদেশের মান বাড়লে রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। হুন্ডির প্রবণতা বেড়ে যায়। অন্য দেশে এমনটি হয় না। তারা এককভাবে রেমিট্যান্স বা রপ্তানির ওপর নির্ভরশীলও নয়। বাংলাদেশ বৈদেশিক খাতের দিক থেকে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। যে কারণে এ দুই খাতে সুবিধা দিতে মুদ্রাকে সব সময় অবমূল্যায়িত রাখা হয়। ডলারের বিপরীতে টাকার প্রকৃত বিনিময় হারের চেয়ে বাজারের দাম সব সময়ই একটু বেশি রাখা হয়। কারেন্সি সুবিধা নামে এটি প্রবাসী ও রপ্তানিকারকদের দেওয়া হয়। মার্চে ডলারের বিপরীতে টাকার প্রকৃত বিনিময় হার ১০২ টাকা ০৫ পয়সা। বাজারের দাম ১২২ টাকা। বাড়তি দামের সুবিধা পাচ্ছেন প্রবাসী ও রপ্তানিকারকরা। ফলে দেশের রপ্তানি বাণিজ্য বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাড়তি সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু তারপরও রপ্তানি আশানুরূপভাবে বাড়েনি। এদিকে বিপরীতে আমদানি খরচ বেড়েছে। যা মূল্যস্ফীতিকে চাপে রাখছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে ২০২১ সালের আগস্টে তখন ডলারের দাম ছিল ৮৪ টাকা ৯৫ পয়সা। ২০২৫ সালের মার্চে তা বেড়ে ১২২ টাকা ওঠে। মে মাসে বেড়ে ওঠে ১২৩ টাকায়। আগস্টে আবার কমে ১২২ টাকা ৫০ পয়সার মধ্যে রয়েছে। ওই চার বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৩৭ টাকা ৫৫ পয়সা অর্থাৎ ৪৪ দশমিক ২০ শতাংশ। টাকার মান স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারের ওপর হস্তক্ষেপ কমিয়েছে। ব্যাংকগুলোতে ডলারের প্রবাহ বাড়ায় এর দাম কমছে, টাকার মান বাড়ছে। আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে বেশি দামে ডলার কিনে দাম ধরে রেখেছে। কিন্তু এখন ডলার কেনা কমিয়ে দিয়েছে। ফলে ডলারের দাম কিছুটা কমেছে।