রাজউকের প্লট পেতে শেখ রেহানা, তার দুই মেয়ে-টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী ভয়াবহ জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। তারা নিজেদের ভাসমান, অসহায় ও গরিব হিসাবে পরিচয় দিয়ে প্লট বরাদ্দ নেন-এমন সাক্ষ্য দিয়েছেন রাজউকের তিন কর্মকর্তা।
বৃহস্পতিবার ঢাকার চার নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. রবিউল আলমের আদালতে রাজউকের উপপরিচালক মো. মাহবুবার রহমান, সহকারী পরিচালক অসীম শীল ও উল্লাস চৌধুরী তিনটি পৃথক মামলায় সাক্ষ্য দেন।
দুদকের প্রসিকিউটর খান মো. মঈনুল হাসান (লিপন) এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, প্লট বরাদ্দ নেওয়ার সময় জমা দেওয়া তিনটি হলফনামায় মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। আসামিদের ঢাকা শহরে ও ঢাকার বাইরে একাধিক প্লট-বাড়ি থাকা সত্ত্বেও মিথ্যা হলফনামা দিয়ে তারা প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। জব্দকৃত ডকুমেন্টে তাদের জীবন বৃত্তান্তসহ ৪৪টি তথ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল।
তিনি আরও বলেন, ‘তাদের নিজ নামে বা তাদের পৌষ্যদের নামে কোনো সম্পত্তি নেই। তারা নিজেদের ভাসমান, অসহায়, গরিব মানুষ দেখিয়ে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার আবেদন করেছিলেন। যেহেতু তাদের প্লট বাড়ি দরকার, সেহেতু তারা এই মিথ্যা হলফনামা দিয়েছেন।’
এদিন আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না এবং জেরা প্রক্রিয়া বাদ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আদালত ৪ সেপ্টেম্বর পরবর্তী তারিখ ঠিক করেন।
পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ৬ প্লট দুর্নীতির মামলায় ৩১ জুলাই ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার সঙ্গে তাদের সন্তানসহ ২৩ জনের বিরদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার দুই বিশেষ জজ আদালত। এর মধ্যে তিন মামলায় শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরদ্ধে ১১ ও ২৬ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণ হয়।
বাকি তিন মামলায় শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর বিরুদ্ধে ১৩ আগস্ট প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। সেদিন মামলার বাদীরা সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।
শেখ পরিবারের বাইরে যে ১৬ জন আসামির তালিকায় রয়েছেন তারা হলেন-জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন।
উল্লিখিত ব্যক্তিদের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা করে ছয়টি প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে গত ডিসেম্বরে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। এরপর ১২ জানুয়ারি প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার ও নিয়মের অভিযোগে পুতুলের বিরদ্ধে প্রথম মামলা করে দুদক। পরদিন শেখ রেহানা, তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর বিরুদ্ধে মামলা করে সংস্থাটি।
এরপর ১৪ জানুয়ারি শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে দুদক। এই ছয় মামলাতেই শেখ হাসিনাকে আসামি করেছে দুদক। অন্যদেরও কেউ কেউ একাধিক মামলার আসামি। সব মিলিয়ে ছয় মামলার আসামির সংখ্যা ২৩। এসব মামলায় দুদক অভিযোগ করেছে, সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবার ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। অযোগ্য হলেও তারা পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরে ১০ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ নেন।