
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ সদর দপ্তর । তাঁদের ব্যক্তিগত , দলীয় পরিচয় , অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্যের পাশাপাশি গত বছরের ৫ আগস্টের আগে ও পরের ভূমিকাও জানা হচ্ছে । গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে । পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র জানায় , অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে । ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের সম্ভাব্য দিন ধরে শান্তিপূর্ণ ও সহিংসতামুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে । এর অংশ হিসেবে সারা দেশে সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রত্যেকের ১১ টি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন দিতে সব থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।
জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ( ডিএসবি ) মাধ্যমে গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে । সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে । সংগ্রহ করা তথ্য ডিএসবি পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠাচ্ছে ।
সূত্র জানায় , প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো প্রতিটি সংসদীয় আসনে নিরাপত্তার চাহিদা মূল্যায়ন করবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ প্রার্থী ও এলাকা চিহ্নিত করবে । পরবর্তী সময়ে সেই অনুযায়ী নির্বাচনের নিরাপত্তা কার্যক্রম সাজানো হবে । জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক ( আইজিপি ) বাহারুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার জন্য অনেক প্রস্তুতি রাখতে হয় । নির্বাচনের আগে এই কার্যক্রমগুলো সেই প্রস্তুতিরই অংশ ।
পুলিশ সদর দপ্তরের পদস্থ এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন , নির্বাচনে নিরাপত্তার কৌশল নির্ধারণের জন্য এসব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে । এর মাধ্যমে এমন এলাকা চিহ্নিত করা যাবে , যেখানে বাড়তি নিরাপত্তার প্রয়োজন এবং কোন প্রার্থী বা সমর্থক সহিংসতা উসকে দিতে পারেন , তা মূল্যায়ন করা যাবে । এর লক্ষ্য হলো সহিংসতা বা অনিয়ম হওয়ার আগেই তা প্রতিরোধ করা । সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে , পুলিশ সদর দপ্তর এক চিঠিতে ডিএসবির মাধ্যমে দেশের প্রতিটি থানায় নির্দিষ্ট টেবিল ফরম্যাটে তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে । চিঠিতে সম্ভাব্য প্রত্যেক প্রার্থীর দলীয় পরিচয় , রাজনৈতিক অবস্থান , অপরাধ কর্মকাণ্ড ও পুলিশ রেকর্ড , শিক্ষাগত যোগ্যতা , বাবা- মায়ের নাম , ঠিকানা , মোবাইল নম্বর এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর যাচাইয়ের কথা বলা হয়েছে । সম্ভাব্য প্রার্থীদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও দলীয় কর্মীদের তথ্যও অন্তর্ভুক্ত করা হবে । সংগ্রহ করা এসব তথ্যের ভিত্তিতে আসনভিত্তিক নিরাপত্তা পরিকল্পনা করা হবে । যেমন কোথায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে হবে , কোথায় মোবাইল টহল বাড়ানো দরকার এবং কোথায় পুলিশ বা র্যাবের উপস্থিতি বাড়াতে হবে ।
ঢাকা জেলার একটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি ) জানান , এই তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রমের জন্য একটি গোপন সেল গঠন করা হয়েছে । রাজশাহী রেঞ্জের ডিএসবির উপপরিদর্শক ( এসআই ) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন , পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশের পর তাঁরা সম্ভাব্য সব প্রার্থীর তথ্য সংগ্রহ করে পাঠিয়েছেন । জায়গা - জমি থেকে শুরু করে বলা যায় পরিবারের সবকিছুই যাচাই করা হয়েছে । এবার নতুন একটি বিষয় যোগ হয়েছে । তা হলো ৫ আগস্টের আগে ও পরে ওই প্রার্থীর ভূমিকা কী ছিল , সেই তথ্যও দিতে বলা হয়েছে । আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪৫ হাজার ৯৮ টি এবং ভোটকক্ষ ২ লাখ ৮০ হাজার ৫৬৪ টি । ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ৯ লাখ ৩১ হাজার ১৩১ জন । নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৮ লাখ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন । এর মধ্যে ১ লাখ ৭০ হাজার পুলিশ সদস্য এবং ৫ লাখ ৭০ হাজার আনসার সদস্য থাকবেন । পুলিশের প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী , সারা দেশে ১৫ হাজারের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র রয়েছে ।
কোন ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয় , এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন , নিরাপত্তা কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার ভোটকেন্দ্রগুলোকে কয়েকভাবে ভাগ করা হয় । ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয় । মূলত সহিংসতার আশঙ্কা থাকে যেসব কেন্দ্রে , সেগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয় । পাশাপাশি ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে যেন বাধার মুখে না পড়েন , বিরোধী পক্ষের হামলা বা বাইরের হুমকি , হামলার আশঙ্কা — সব বিবেচনায় এনে ভোটকেন্দ্রগুলো শ্রেণিবদ্ধ করা হয় । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড . তৌহিদুল হক বলেন , নির্বাচন শান্তিপূর্ণ রাখতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে পদক্ষেপ নিতে হবে । তবে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয় ছাড়া তথ্য সংগ্রহ অপব্যবহারের হাতিয়ার হতে পারে । প্রার্থীদের তথ্য শুধু নির্বাচন কমিশনের কাছেই থাকা উচিত ।