Image description

ব্যাংকের পাশাপাশি গত ১৫ বছরের অনিয়মের কারণে দেশের বিমা খাতও ঝুঁকিতে পড়েছে। বিমা কোম্পানিগুলোর কাছে গ্রাহকের প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি বিমা দাবি পরিশোধ করতে পারছে না কোম্পানিগুলো। বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএর তথ্যানুযায়ী গত ১৪ বছরে জীবন বিমা খাতে ১৩ লাখ গ্রাহকের ৪ হাজার ৪১৪ কোটি টাকার দাবি অনিষ্পন্ন রয়ে গেছে; নন-লাইফ বিমা খাতে অনিষ্পন্ন দাবির পরিমাণ আরও প্রায় ২ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকার। গত ১৪ বছরে প্রায় ৫৪ লাখ পলিসি বাতিল হয়েছে। ২০২৪ সাল শেষে জীবন বিমার ক্ষেত্রে ৪৫ শতাংশ এবং নন-লাইফ বিমার ক্ষেত্রে অনিষ্পন্ন দাবির হার দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ। ঝুঁকিপূর্ণ এই বিমা খাতের সংস্কারে অধ্যাদেশ ও আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি।

সূত্র জানায়, গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ করতে ব্যর্থ এমন দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানির কার্যক্রম নিয়ে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে একটি পর্যালোচনা সভা করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। সংস্থাটি বলছে, দেশে বর্তমানে ৮২টি বিমা কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে ৩২টি বিমা কোম্পানি বিভিন্ন মাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে আইডিআরএ চেয়ারম্যান আসলাম আলম জানান, ১৫টি লাইফ ইনস্যুরেন্স উচ্চঝুঁকিতে থাকার পাশাপাশি আরও ১৭টি নন-লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি ঝুঁকিতে রয়েছে। মাত্র ছয়টি লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। উচ্চঝুঁকিতে থাকা কোম্পানিগুলোর সংকট আর নিরসনের পর্যায়ে নেই। তবে ঝুঁকিতে থাকা কোম্পানিগুলোর সমস্যা নিরসনযোগ্য বলেও তিনি জানান। সূত্র জানায়, উচ্চঝুঁকিতে থাকা বিমা কোম্পানিগুলোকে একীভূত করা বা তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তরের লক্ষ্যে বিমাকারীর রেজুলেশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর খসড়া গত জুনে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠায় আইডিআরএ। এ ছাড়া বিমা খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বিদ্যমান বিমা আইন-২০১০ এর সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরই মধ্যে ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ জারি হলেও এখনো সংশোধনের মধ্যেই আটকে আছে বিমার খাতের আইনি সংস্কার। মতামতের সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও অধ্যাদেশ ও আইনের সংশোধনীর খসড়া এখনো ওয়েবসাইটে ঝুলে আছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিমা ও পুঁজিবাজার) মো. সাঈদ কুতুব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিমা খাতের অধ্যাদেশ ও আইনের খসড়া করেছে আইডিআরএ। এরপর তারা বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কনসালটেশন করেছে। এখন আবারও খসড়ার ওপর মতামতের ভিত্তিতে বিভিন্ন ধারা সংশোধন করছে তারা। এই সংশোধনের কাজ কবে শেষ হবে, তা নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলতে পারবে।

সরকার অধিগ্রহণ করতে পারবে দুর্বল বিমা কোম্পানি : বিমাকারীর রেজুলেশন অধ্যাদেশের খসড়া পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ব্যাংকিং খাতের মতো দেশের দুর্বল বিমা কোম্পানিগুলোকে সাময়িক মালিকানা নিতে পারবে সরকার। ব্রিজ বিমার মাধ্যমে বিমা কোম্পানির শেয়ার, সম্পদ ও দায় তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর করা যাবে। এ ছাড়া এক বা একাধিক দুর্বল বিমা কোম্পানি একীভূত করার পাশাপাশি বিদ্যমান শেয়ার ধারক বা নতুন শেয়ার ধারকদের মাধ্যমে মূলধনও বাড়ানো যাবে।

১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা জরিমানা : অধ্যাদেশ ছাড়াও বিদ্যমান বিমা আইন ২০১০ সংশোধনী খসড়ায় যে নতুন ধারা সংযোজন করা হয়েছে, তার মধ্যে ২১(৪) ধারায় সংযোজিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কোনো বিমা কোম্পানি প্রয়োজন মতো মূলধন সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হলে কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঘাটতি পূরণের নির্দেশ দেবে। নির্ধারিত সময়ে ঘাটতি পূরণ না হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে শাস্তি হিসেবে ঘাটতি পূরণের পূর্ব পর্যন্ত পলিসি ইস্যু, বিক্রয় বা প্রিমিয়াম গ্রহণ নিষিদ্ধ, ব্যর্থতার জন্য ১০ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা এবং এই বিধান লঙ্ঘনের কারণে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে খসড়ায়। এ ছাড়া বিমা আইন সংশোধনের খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি, কোম্পানি বা একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কোম্পানিকে কেন্দ্রীভূত করা যাবে না। কোনো পরিবারের সদস্যদের হাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, একক বা অন্যের সঙ্গে যৌথভাবে বা উভয়ভাবে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার থাকতে পারবে না। অধ্যাদেশ ও আইনি সংস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএর মুখপাত্র মোহা. আবদুল মজিদ জানান, বিমা খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে অধ্যাদেশ ও আইনের সংশোধনীতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মতামত নেওয়ার পর এখন প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো সংযোজিত হচ্ছে। শিগগিরই এটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠনো হবে।