
ভারতের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক গতকাল বুধবার থেকে কার্যকর হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য প্রবেশে ভারতের ওপর আরোপিত মোট শুল্কের হার এখন ৫০ শতাংশ, যা অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এতে করে ভারতের তৈরি পোশাক সেক্টরে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। গ্রার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের অনেকেই ব্যবসা বন্ধ করে দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করায় ভারতের গ্রার্মেন্টস শিল্পে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। ভারতের পণ্যে এই শুল্কারোপের ঘোষণা আসে মূলত রাশিয়ার তেল কেনার কারণে। ভারত ছাড়া ব্রাজিল এবং চীন যাদের ওপর এত বেশি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ায় এর সবচেয়ে বড় প্রভাব দেখা যাচ্ছে ভারতের বস্ত্র খাতে। জানা গেছে, দেশটির অনেক বড় শহরে বস্ত্র উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া নয়াদিল্লির পাশাপাশি চীন, ইসলামাবাদ ও মিয়ানমার থেকেও যেসব ক্রেতারা পোশাক ক্রয় করত তারাও এখন বাংলাদেশকে কার্যাদেশের জন্য প্রাথমিকভাবে পছন্দ করছে। এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্রেতারা অর্ডার নিয়ে ঢাকায় আসছেন, ফলে তৈরি পোশাক খাতে ক্রয়াদেশ বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও সরাসরি পোশাক রফতানির সঙ্গে যুক্ত শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, দেশের তৈরি পোশাক খাতে নতুন সম্ভাবনা জেগে উঠেছে। চলতি আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বিশ্ববাজারের ক্রেতাদের মধ্যে বাংলাদেশে নতুন রফতানি আদেশ দেয়ার প্রবল আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে সেপ্টেম্বর থেকে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে। পোশাক খাতের সংশ্লিষ্টদের মতে, গত দুই মাসে আগের একই সময়ের তুলনায় ক্রয়াদেশ প্রায় ৩২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসেই মোট রফতানি আয়ে ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে কেবল পোশাক খাত থেকেই রফতানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩৯৬ কোটি ডলার, যা দেশের মোট রফতানির প্রায় ৮৩ শতাংশ।
এদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি পোশাক ও বস্ত্রশিল্প। কর্মসংস্থান সৃষ্টি থেকে শুরু করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনÑ সর্বত্রই এ খাতের অবদান স্পষ্ট। যদিও সম্প্রতি শুল্ক ইস্যুতে এই খাত অনেকটা টালমাটাল ছিল। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের পোশাক পণ্যে পাল্টা শুল্ক কমানোয় এবং পোশাক রফতানির প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকায় সেই অবস্থা থেকে অনেকটা ঘুড়ে দাঁড়িয়েছে। দেশীয় পোশাক উৎপাদকদের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এ কারণে হঠাৎ করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে মার্কিন ব্র্যান্ড-ক্রেতাদের। পুরোনো ব্র্যান্ড-ক্রেতাদের অনেকেই ফিরছে। রফতানি আদেশ নেয়ার মতো অবস্থায় আছে কি না, সে ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন নতুন ক্রেতারাও। এমনকি এক বছর আগেও যে কারখানায় মার্কিন কোনো ক্রেতার কাজ ছিল না। গত কিছুদিন থেকে নতুন-পুরোনো অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান আলোচনা শুরু করেছে। অনেকে বন্ধ থাকা কারখানা চালু করার পরিকল্পনা করছেন, পুরোনো স্থগিত রাখা সম্প্রসারণ প্রকল্পগুলো পুনরুজ্জীবিত করছেন এবং নতুন বিনিয়োগের কথাও ভাবছেন। যা বাংলাদেশকে পোশাকের অর্ডারের একটি নতুন কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরেছে এবং শিল্পে নতুন বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি করেছে। গ্রীষ্মকালীন রফতানি আদেশের কাজ শুরু হয়েছে, যা ভবিষ্যতে রফতানি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্থানীয় পোশাক প্রস্তুতকারকরা এই সুযোগ কাজে লাগাতে শুরু করেছেন। এমনকি চীনসহ বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখন বাংলাদেশে কারখানা তৈরি করে পোশাক খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন। ইতোমধ্যে চীনা কোম্পানি হান্ডা (বাংলাদেশ) গার্মেন্টস চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে তৈরি পোশাক কারখানা স্থাপনের জন্য প্রায় চার কোটি ডলারের বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছে। এ জন্য গত ৩০ জুলাই বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) সঙ্গে জমি ইজার চুক্তি করেছে তারা। এ ছাড়া চীনের তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠান খাইশি গ্রুপ চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করবে।
এদিকে, সুযোগ বাড়লেও এই চাপ নেয়ার সক্ষমতায় অনেকটা পিছিয়ে বাংলাদেশের পোশাক খাত। তাই বাংলাদেশের সামনে এখন দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জÑ একদিকে সুযোগ কাজে লাগানো, অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকার কৌশল তৈরি করা।
এ বিষয়ে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের পাল্টা শুল্কের পর বাংলাদেশে নতুন অর্ডার আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে বাড়তি চাপ নেওয়ার মতো সক্ষমতা আমাদের আছে কি নাÑ সেটা দেখতে হবে। জরুরিভিত্তিতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ ও অবকাঠামোর উন্নয়ন দরকার বলে মনে করেন তিনি।
স্নোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম খালেদ জানান, আমেরিকান বায়ারদের কাছ থেকে তাদের অর্ডার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। গত বছর এক মার্কিন বায়ারকে তিন লাখ পিস জ্যাকেট রফতানি করেছিলেন। এবার সেই অর্ডার বেড়ে পাঁচ লাখ পিসের কাছাকাছি আসছে। নতুন একাধিক প্রতিষ্ঠান যোগাযোগ করছে। তিনি বলেন, আমাদের কারখানার সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নতুন মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির পরিকল্পনা করছি।
অনন্ত গার্মেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইনামুল হক খান বাবলু বলেন, তাদের অর্ডার লাইনআপ ডিসেম্বর পর্যন্ত পূর্ণ। দুই মার্কিন ক্রেতার প্রতিনিধি সম্প্রতি আলোচনা করতে এসেছিলেন কিন্তু কারখানায় জায়গার সংকট থাকায় নতুন অর্ডার নিতে পারেননি।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রফতানি করা স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শোভন ইসলাম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভালো ভালো ব্র্যান্ডগুলো অর্ডার বাড়িয়ে দিচ্ছে। কাজের চাপ বেড়েছে।
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল জানান, সাধারণত জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে তুলনামূলক কম রফতানি হয়ে থাকে; কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। রফতানি আয় বাড়ছে, একই সঙ্গে আসছে নতুন নতুন ক্রয়াদেশ। আগে যেখানে শুধু বড় ক্রেতারা অর্ডার দিতেন, সেখানে গত এক মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারের জন্য ছোট ছোট ক্রেতারাও অর্ডার দিতে শুরু করেছেন। এতে গত মাসে রফতানিতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে।
পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বাড়তি ক্রয়াদেশ গ্রহণে সতর্ক হতে হবে। কোনো অবস্থাতেই মূল্য ছাড়ে পণ্য বিক্রি করা যাবে না। কারণ একবার কম দামে পণ্য বিক্রি করলে পরে ক্রেতারা আর সঠিক দাম দিতে চাইবে না। এতে রফতানি আয় বাড়লেও অল্প সময়ের মধ্যেই অনেক প্রতিষ্ঠান উৎপাদন বন্ধ করে দেনার ফাঁদে পড়তে পারে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় একটি টাস্কফোর্স গঠন করা উচিত সরকারের।
সূত্র মতে, ট্রাম্প প্রাথমিকভাবে ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন এবং রাশিয়ার তেল কেনার জন্য জরিমানা হিসেবে ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেছিলেন। ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনের সভাপতি এস সি রালহান বলেন, ক্রমবর্ধমান ব্যয় বৃদ্ধি এবং প্রতিযোগিতার কারণে বস্ত্র উৎপাদকরা তিরুপুর, নয়ডা এবং সুরাটে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামে কম খরচে তৈরি হচ্ছে পোশাক। আমরা এসব প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে পিছিয়ে আছি।
তিনি বলেন, শুধু পোশাকেই নয়; সামুদ্রিক খাবার বিশেষ করে চিংড়ি রফতানিতে বড় ধাক্কা আসছে। যেহেতু ভারতের সামুদ্রিক খাদ্য রফতানির প্রায় ৪০ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্র-নির্ভর, তাই শুল্কের জেরে সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হওয়া এবং মাছচাষিদের দুর্দশার মতো অনেক ঝুঁকি রয়েছে। রালহান বলেন, চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ফিলিপাইন এবং দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায় ভারতীয় পণ্য প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে রয়েছে।
এদিকে চীনা বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশকে নতুন উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছেন। অনেকেই নতুন বিনিয়োগ এবং কারখানা ভাড়া নেয়ার মাধ্যমে উৎপাদন শুরু করতে আগ্রহী। এক নিটওয়্যার কারখানার মালিক জানান, তিনি ইতোমধ্যে একটি কারখানা চীনা উদ্যোক্তাদের কাছে ভাড়া দিয়েছেন এবং তারা আরেকটি কারখানা ভাড়া নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
চীনা বায়িং হাউসগুলো ফ্রি অব চার্জ (এফওসি) মডেলে কাজ করার সুযোগ খুঁজছে, যেখানে বায়াররা কাঁচামাল সরবরাহ ও আর্থিক খরচ বহন করবে, আর কারখানা কর্তৃপক্ষ শুধু উৎপাদনের দায়িত্ব নেবে। এতে প্রস্তুতকারকের ঝুঁঁকি কমলেও লাভের হার কম। তবে ফকির ফ্যাশনসের মতো বড় কারখানা পর্যাপ্ত অর্ডার থাকায় এফওসি মডেল নিচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত দুই বছরে প্রায় ১৯১টি ছোট কারখানা বন্ধ হয়েছে। তবে নতুন করে প্রায় ১০০টি কারখানা উৎপাদন শুরু করেছে। বিজিএমইএ নেতারা বলছেন, বাজার পরিস্থিতি উন্নত হলে বন্ধ কারখানাগুলো পুনরায় চালু হতে পারে। অর্ডার ফিরে আসায় বন্ধ কারখানাগুলো পুনরুজ্জীবিত করা নিয়ে আলোচনা চলছে।
এদিকে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সুখবর এমন নয়; ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানিতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। সম্প্রতি ইউরোস্ট্যাটের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন সময়ে বাংলাদেশ ইইউর বাজারে ১০ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের পোশাক রফতানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের ৮ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ইউরো থেকে ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। তবে সামগ্রিকভাবে ইইউর পোশাক আমদানি ১২ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ৪৩ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ইউরোতে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের ৩৮ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ইউরো থেকে বেশি।
এদিকে প্রবৃদ্ধির হার ইইউর মোট আমদানি বৃদ্ধির চেয়ে বেশি হলেও চীন ও কম্বোডিয়ার মতো প্রতিযোগীদের তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে।
এই উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি ইইউর বাজারে দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক সরবরাহকারী হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরো সুদৃঢ় করেছে। তবে এই বাজারে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছে এশিয়ার দেশ চীন ও কম্বোডিয়া। এ বছর ইইউর বাজারে চীন তার সর্বোচ্চ রফতানিকারক অবস্থান ধরে রেখেছে। দেশটির রফতানি ২২ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ইউরোতে। অন্যদিকে কম্বোডিয়া সবচেয়ে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। তাদের রফতানি ৩০ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে ২ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছেছে। প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাংলাদেশের ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ইইউর গড় প্রবৃদ্ধির চেয়ে বেশি এবং ভারত, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামের চেয়ে শক্তিশালী। তবে প্রবৃদ্ধির দিক থেকে চীন ও কম্বোডিয়ার পেছনে বাংলাদেশ।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ভারত ও চীনের বাজার সংকোচিত হওয়ায় দেশ দুটি স্বাভাবিকভাবে ইউরোপীয় বাজারে কর্তৃত্ব ধরে রাখার চেষ্টা করবে। তাই ইউরোপীয় বাজারে দাম কমে যাওয়ার আশঙ্কায় কিছু বাংলাদেশি রফতানিকারক সতর্ক। কারণ, মার্কিন বাজার সংকুচিত হলে চীন ও ভারত তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ইউরোপের দিকে ঝুঁঁকবে। এতে দাম কমে যাবে এবং বাংলাদেশের জন্য চাপ সৃষ্টি হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের পোশাক রফতানির অর্ধেকের বেশি পণ্য ইউরোপে যাচ্ছে, আর যুক্তরাষ্ট্রে ২০ শতাংশেরও কম।
এ ছাড়া বর্তমান প্রেক্ষাপটে পোশাকের বাড়তি ক্রয়াদেশ নেয়ার জন্য আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। অনেক কারখানাই নিজের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংকে ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খুলতে পারছে না। তবে ইতোমধ্যেই দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট খাতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিম চালু করেছে। এই ধরনের সহায়তা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। পাশাপাশি রফতানিতে নগদ সহায়তা প্রদানের বিষয়েও সরকারকে স্পষ্ট বার্তা দিতে হবে। কারণ একটি ক্রয়াদেশ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কয়েক মাস সময় নেয়। হঠাৎ নীতি পরিবর্তন হলে উদ্যোক্তারা বিপদে পড়বেন।
বর্তমান বাস্তবতায় বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ কাজে লাগানো জরুরি। অনুমোদিত বিনিয়োগ রফতানি বাড়ানোর পাশাপাশি দেশের উৎপাদন ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশি তৈরি পোশাক খাতের রফতানি বৃদ্ধি করার জন্য আর্থিক সহায়তা ও স্থিতিশীল নীতি অপরিহার্য। প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট, নগদ সহায়তা এবং বিদেশি বিনিয়োগের সমন্বয় উদ্যমী রফতানিকারকদের সক্ষমতা বাড়াবে। তবে নীতি পরিবর্তন ও বাজারে ওঠানামার ঝুঁকি এখনো রয়েছে। তাই সরকার ও উদ্যোক্তাদের কৌশলগতভাবে পরিকল্পনা নেয়াই মূল চ্যালেঞ্জ।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী সব রফতানি আদেশ বাস্তবায়ন করা গেলে চলতি অর্থবছরেই রফতানি খাতের প্রবৃদ্ধি ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে শিল্পে বিনিয়োগ ও উৎপাদন প্রবাহ এখনো কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতের কারণে। তার মতে, ব্যাংকগুলো বর্তমানে পুরোপুরি রিকভারি মোডে আছে, তারা ঋণ আদায়ে মরিয়া।