
জমে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। প্রার্থীদের জমজমাট প্রচারণায় সরগরম ঢাবি ক্যাম্পাস। কেউ বিতরণ করছেন লিফলেট, কেউ করছেন জনসংযোগ, কেউ করছেন কোলাকুলি, কেউ যাচ্ছেন হলে হলে, কেউ আবার যাচ্ছেন ক্লাসে ক্লাসে ভোটারদের কাছে। এতে ক্যাম্পাসে তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। এদিকে প্রচারণায় আচরণবিধি লঙ্ঘন নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের ঘটনাও ঘটেছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিবির সমর্থিত প্যানেলসহ অন্যান্য প্যানেলের ব্যানার সরিয়ে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এদিকে গত ২৬শে আগস্ট থেকে শুরু হয় ডাকসু নির্বাচনের প্রচারণা। প্রার্থীদের সাদা-কালো পোস্টার-ফেস্টুনে সয়লাব হয়ে গেছে ঢাবি ক্যাম্পাস। এর মধ্যে ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট ও উমামা ফাতেমার নেতৃত্বাধীন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোটের ব্যানার দেখা মেলে সবচেয়ে বেশি। যদিও আচরণবিধিতে ক্যাম্পাসের কোনো বিল্ডিং গাছ কিংবা অন্য স্থাপনায় লাগানো যাবে না বলে উল্লেখ করা হয়। তবে এসব ব্যানার নিজস্ব খুঁটি ও কাঠামোতে ক্যাম্পাসের সর্বত্র দেখতে পাওয়া গেছে। যাকে আচরণবিধির লঙ্ঘন নয় বলে মনে করেন প্রার্থীরা। তবে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ করেছে প্রশাসন। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক গঠিত টাস্কফোর্সের নেতৃত্বে ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করা হয়। টিএসসি ও বিভিন্ন হল গেটে থাকা ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ ও ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’সহ অন্যান্য প্যানেলের ব্যানার-ফেস্টুন প্রক্টরিয়াল টিমের গাড়িতে তুলে অপসারণ করা হয়।
এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. জসীম উদ্দিন বলেন, আচরণবিধিতে ফেস্টুন লাগানোর বিষয়ে একটু ভুল বুঝাবুঝি ছিল। ফলে অনেকে ফেস্টুন বানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় টানিয়েছে। তবে আমরা সবাইকে জানিয়েছি-নিজেদের ব্যানার-ফেস্টুন তুলে নিতে। তারা না সরালে প্রক্টরিয়াল টিমের সহায়তায় আমাদের টাস্কফোর্সের টিম তা সরিয়ে ফেলে।
ভোটকেন্দ্র বাড়ানোর দাবি আবিদের: গতকাল নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, ডাকসু এবং হল সংসদ মিলিয়ে একজন ভোটারকে ৪১টি ভোট দিতে হবে। প্রতিটি ভোটার এর এই ৪১টি ভোট দিতে ৮-১০ মিনিট সময় লাগবে। সেখানে ঘণ্টায় মাত্র ৮টা ভোট দেয়া যাবে। যদি এখানে ২০টি কেন্দ্র হিসাব করা হয়, তাহলে প্রতি ঘণ্টায় ১৬০টা ভোট পড়বে। যদি ৮ ঘণ্টা হিসাব করা হয় তাহলে সেখানে ১২৮০টি ভোট পড়বে। সবমিলিয়ে কোনো ভোটকেন্দ্রে সাড়ে চার হাজার ভোটার এর নিচে নেই। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে আরও বলেন, আমাদের আশঙ্কার জায়গাটা হচ্ছে, সবার মধ্যে আতঙ্ক, আশঙ্কা কাজ করছে ভোট দিতে ৮ থেকে ১০ মিনিট লাগবে। এতো অল্প সময়ের মধ্যে এতো ভোটার কীভাবে ভোট দিবে, আবার ৪১টি নাম রাখা। এগুলোর বিষয়ে চিফ রিটার্নিং অফিসারকে আমরা জানিয়েছি। তারা বলেছেন, পর্যাপ্ত কেন্দ্র রাখবেন। তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, “গতকাল টিএসসিতে একজন প্রার্থী আলোকসজ্জা করেছেন, কনসার্ট করেছেন এরপরে তিনি ইশতেহার ঘোষণা করেছেন, যেটি সম্পূর্ণরূপে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন।”
ওদিকে আজ দুপুরে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের পক্ষ থেকে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হবে। বেলা ১২টায় কলাভবন সংলগ্ন ঐতিহাসিক বটতলায় এই ইশতেহার পাঠ করা হবে।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ শিবির সমর্থিত জিএস প্রার্থীর: এদিকে বিকালে শিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী এসএম ফরহাদ বলেন, একটি নির্দিষ্ট সংগঠন যখন যা করে সেটাই নীতিমালা হয়ে উঠছে। ঢাবির রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, চারুকলায় একটি কুচক্রী মহল আমাদের ব্যানার বিকৃত করে হিজাবফোবিয়ার যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, সেটির প্রতিবাদ জানিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু, নির্বাচন আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘনের পরেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। নারী শিক্ষার্থীদের হিজাবফোবিয়ার যে বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে সেটির কোনো পদক্ষেপও নেয়া হয়নি। এতে বুঝা যাচ্ছে নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কোন জায়গায় আছে।”
শিবিরের ফেস্টুন সরিয়ে নেয়ার প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন কমিশনকে আমরা ফেস্টুন লাগানোর বিষয়ে আগেরদিন ফোন দিয়েছিলাম। আমরা জিজ্ঞেস করেছিলাম, নিজেরা স্ট্যান্ড বানিয়ে কোনো দেয়ালের ক্ষতি না করে আমরা কি ব্যানার লাগাতে পারবো কিনা? আমাদের স্পষ্ট জবাব দেয়া হয়েছিল- আমরা এমনটা করতে পারবো। এরপরে, সারাদিন কোনো খোঁজখবর নাই, রাতে ফোন দিয়ে বলছে আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে, ব্যানার সরিয়ে ফেলতে হবে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, “একজন প্রার্থী বিভিন্ন রুমে বা হলে হলে মতবিনিময় সভার নামে খিচুড়ি পার্টির আয়োজন করেছে। খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ হওয়ার পরে ঘোষণা আসে খাওয়া-দাওয়া করা যাবে না। এরপরে তারা বলে প্রচারণা করা যাবে খাওয়া-দাওয়া করা যাবে না। তারপর আবার একটি দলের পক্ষ থেকে মসজিদে দেখা করে সবাইকে দাওয়াত দেয়া হয়। তখন আমরা স্যারদের ফোন দিলে তারা বলে, না না বাবা নামাজ পড়তে যাইতে পারবা একটু দেখা সাক্ষাৎ করতে পারবা, এতে কোনো সমস্যা নাই। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট সংগঠন যখন যা করে সেটাই নীতিমালা।
এসবের পরও বেশ উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনী প্রচারণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সংগঠনগুলো। এক প্রার্থীর সঙ্গে আরেক প্রার্থীর দেখা হলে তারা কুশল বিনিময় করছেন, খুনসুটি ও বুকে জড়িয়ে কোলাকুলি করছেন বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে কেন্দ্রীয় স্বতন্ত্র সদস্য পদপ্রার্থী নাঈমুর রহমান রিদম বলেন, ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের ভেতর রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ভিতর প্রতিযোগিতা বাড়ছে, পাওয়ার পলিটিক্স এপ্লাই কমে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের মাত্রা বাড়ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা উঠে আসছে।
প্রসঙ্গত, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫ আগামী ৯ই সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ৫০৯ জন প্রার্থীর মাঝে শীর্ষ পদসহ সভাপতির (ভিপি) জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ৪৮ জন। সবশেষ প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় ৩৯ হাজার ৬৩৯ জনের নাম রয়েছে।